গাংনী প্রতিনিধি: স্বপ্নের হাতছানিতে মালয়েশিয়া। তবে বৈধ পথে নয়, অবৈধ পথে যাচ্ছেন অনেকেই। টেকনাফ থেকে থাইল্যান্ড, থাইল্যান্ড থেকে মালয়েশিয়া। এই দীর্ঘ পথে কতোই না বিপদ। কখনো সাগরের গভীর পানিতে ড্রাম বন্দি আবার কখনো নির্জন জঙ্গলে অসহায় অবস্থান। আদমব্যাপারি তথা দালালদের নির্যাতন তো নিত্যসঙ্গী। প্রতিদিন যে কতো মায়ের বুক খালি হচ্ছে তার হিসেবই বা কে রাখে? মত্যৃর মিছিল হচ্ছে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর। এবার এই মিছিলে যোগ হয়েছে মেহেরপুর গাংনীর আরো এক যুবকের নাম। ভাগ্য বদলাতে গিয়ে নির্মম মৃত্যুর শিকার হতভাগা যুবকের নাম মামুন হোসেন (২২)। সে গাংনী উপজেলার তেরাইল গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়া সীমান্তে মামুনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে পথে পথে বিপদের উপরোক্ত বর্ণনা দিয়েছেন পানিপথে মালয়েশিয়া যাওয়া গাংনীর কয়েকজন।
নিহত মামুনের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দরিদ্র পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আনায় ব্যাকুল তেরাইল গ্রামের কয়েকজন মালয়েশিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একই গ্রামের মৃত আব্দুল গনির ছেলে নব্য আদমব্যাপারী জাহাঙ্গীর আলমের সাথে তাদের মৌখিক চুক্তি হয়। সেমতে মাথাপিছু প্রায় আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে ওই গ্রামের হাফিজুর রহমান, বেল্টু মিয়া, আজির হোসেন ও নিহত মামুনকে দু মাস আগে মালয়েশিয়া পাঠায় জাহাঙ্গীর। তবে বৈধ পথে নয়, টেকনাফ হয়ে সাগরে অবৈধ পথে তাদের পাঠানো হয়। বাড়ি থেকে যাওয়ার পর থেকেই পরিবারের সঙ্গে তাদের কোন যোগাযোগ ছিলো না। তাই স্বজনদের সন্ধানে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন পরিবারের সদস্যরা। তবে খবর এসেছে। সেখবর সুখের নয়। অনাকাঙ্ক্ষিত মত্যুর খবর। কয়েকজন মালয়েশিয়া সীমান্তে পৌছাতে সক্ষম হলেও মামুন চলে গেছেন না ফেরার দেশে। মামুনের সহযাত্রী হাফিজুর রহমান মালয়েশিয়া সীমান্ত থেকে মোবাইলে মৃত্যুর বিষয়টি তার পরিবারের সদস্যদের জানায়।
মামুনের মৃত্যুতে তার পরিবারে চলছে শোকের মাতম। মা বাবার পাশাপাশি এক সন্তান নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েছেন মামুনের স্ত্রী। মামুনের সঙ্গীয় কয়েকজনের বরাত দিয়ে মামুনের পিতা আবুল কালাম জানান, তাদেরকে জাহাজের নিচে বড় ড্রামে ভরে সাগর পার করা হয়। পরে থাইল্যান্ডের বিভিন্ন জঙ্গলে রেখে এক দেশের দালালদের কাছ থেকে অন্য দেশের দালালদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সামান্য কিছু খাবার দেয়া হয়। অবার কখনো না খেয়েই দিনের পর দিন পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা চলেছে। এভাবেই চলতে চলতে মামুন মৃত্যুবরণ করে। পরে দাললরা তার লাশ ফেলে দেয় সাগরে। তবে মামুনের সহযাত্রীরা এখনো মালয়েশিয়া পৌঁছুতে পারেনি। তাদের ভাগ্যে কি লেখা আছে তা নিয়ে চরম শঙ্কায় সময় পার করছেন পরিবারের সদস্যরা।