সন্ত্রাসের বিষদাঁত ভাঙতে ৱ্যাব-পুলিশের অনমনীয় অভিযানে ক্রসফায়ার বা এনকাউন্টারকে সন্ত্রাস কবলিত জনপদের সাধারণ মানুষ সমর্থন করলেও খুব দ্রুতই পরিস্থিতি পাল্টেছে। কারণ, ক্রসফায়ার-এনকাউন্টারের নামে যা হচ্ছে তা মেনে নেয়ার মতো থাকছে না। পুলিশের কিছু সদস্য রয়েছে যারা ধরে নিয়ে অর্থ আদায় বা বিশেষ কোনো স্বার্থ আদায়ে ব্যর্থ হয়ে গুলি করে ক্রসফায়ারের নাটক সাজাচ্ছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হত্যাকাণ্ডেরও বহু উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় ক্রসফায়ারকে সাধারণ মানুষ সমর্থন করবে কীভাবে? বরঞ্চ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে সরকারের আশু হস্তক্ষেপই কাম্য।
যশোরের দুজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর একজনের মৃত্যু হয়েছে। যশোর পুলিশ বলছে, হাফিজুর ছিলো চিহ্নিত ছিনতাইকারী, সে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ও গুলিবর্ষণ করে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় হাফিজুর ও মিজানুর নামে একজন আহত হয়। পুলিশের এ ভাষ্যের সাথে একমত নয় তার পরিবার। পরিবারের অভিযোগ, ১৩ নভেম্বর গভীররাতে কোতোয়ালি থানার একজন এসআইয়ের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল হাফিজুর ও মিজান নামের একজনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পায়ে গুলি করে ছিনতাইকারী বানানোর নাটক সাজায়। হাফিজুরের পরিবারের অভিযোগ সত্য হলে এ কথা বলা অযৌক্তিক নয়- এদেশের রঙ্গমঞ্চে এ ধরনের বহু নাটকের অভিনয় ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বহুল আলোচিত নিরপরাধ লিমন এ ধরনের একটি নাটকে ভয়ঙ্কর অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলো। অবশেষে সত্য প্রকাশিত হওয়ায় লিমন কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। কিন্তু হাফিজুরের ক্ষেত্রে কী হবে? এরই মধ্যে হাফিজুরের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে না বলে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে বললে বেশি অসত্য বলা হবে কি? হাফিজুরের পরিবারের ভাষ্য মতে, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে যশোরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ১৬ নভেম্বর পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয় তাকে। ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে অপারেশন করে হাফিজুরের বাম পা কেটে ফেলা হয়। অপারেশনের পর হাফিজুরকে একটি ইনজেকশন দেয়া হলে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে সেখানেই তার মৃত্যু ঘটে। হাফিজুর তো মরলেন, তবে তিনি যে আমাদের জন্য একটি প্রশ্ন রেখে গেলেন!
ক্রসফায়ার নামের এ নাটক আর কতদিন চলবে? এ প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে তাদের, যারা নিজেদের স্বার্থে ক্রসফায়ার নাটকের চিত্রনাট্য তৈরি করে নাটকের কুশীলবদের পৃষ্ঠপোষকতা করে চলেছেন। পুলিশের কাজ হচ্ছে মানবাধিকার রক্ষা করা। অথচ এদেশে পুলিশ তাদের আরাধ্য কাজটি না করে প্রায়শই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ত করছে। একটি স্বাধীন দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ চিত্র কখনোই কাম্য হতে পারে না। ঘটনার প্রকৃত দোষী ও দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা জরুরি। সন্ত্রাস রুখতে ক্রসফায়ার শুরু হলেও দিন গড়ানোর সাথে সাথে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট। ফলে দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত কাম্য।