আবারও প্রাথমিক সমাপনীর প্রশ্ন ফাঁস?

স্টাফ রিপোর্টার: গত রোববার শুরু হওয়া প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর প্রশ্নপত্র ফাঁসের জোরালো অভিযোগ উঠেছে। রাজধানীর একাধিক কোচিং সেন্টার থেকে পাওয়া হাতে লেখা প্রশ্নপত্র গত দু দিনের ইংরেজি ও বাংলা পরীক্ষার মূল প্রশ্নপত্রের সাথে হুবহু মিলেছে বলে অভিভাবকরা জানিয়েছেন। আজ সমাপনীতে সমাজ বিষয়ের পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে। গতরাতে এ বিষয়ের প্রশ্নেরও সন্ধান মিলেছে। হাতে লেখা কপি ও আগেভাগে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া এসব প্রশ্নপত্র পরীক্ষায় শতভাগ মিলে যাওয়ায় সাধারণ অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

যদিও পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে। গত রোববার রাতে বগুড়া থেকে প্রশ্নপত্রসহ চার শিক্ষক পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। এছাড়া রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর খন্দকার গলিতে অবস্থিত একটি কোচিং সেন্টার থেকেও প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের কয়েকজন অভিভাবক সমকালকে জানান, গতকাল সোমবার সমাপনীর বাংলা বিষয়ের পরীক্ষা ছিলো। এর আগেই রোববার রাতে সিদ্ধেশ্বরীর খন্দকার গলিতে অবস্থিত ভিক্টোরিয়া কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থীদের গতকাল সোমবার সকালে পরীক্ষা শুরুর আগে ডেকে নেয়া হয়।

সেখানে বাংলা বিষয়ের রচনা, বিপরীত শব্দ, বাগধারাসহ বেশকিছু বিষয় ভালোভাবে রপ্ত করিয়ে দেয়া হয়। রোববার ইংরেজি পরীক্ষার দিন সকালেও পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতির কথা বলে কিছু প্রশ্নের উত্তর শিখিয়ে দেয়া হয়। পরে গত দু দিনই দেখা যায়, সেগুলো পরীক্ষার মূল প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিলেছে।

রোববার রাতে পরদিনের বাংলা বিষয়ের প্রশ্নপত্র বিতরণের দায়ে দুটি কোচিং সেন্টারের কয়েকজন শিক্ষককে সাজা দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকার মোহনা কোচিং সেন্টারে কর্মরত বগুড়ার গাবতলী উপজেলার গোরদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম সারওয়ার, শহরের একই উপজেলার আটবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম ও গাবতলী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুবুর রহমান রয়েছেন। তাদের এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রহিম।

এছাড়া পরীক্ষার আগের রাতে সন্দেহজনকভাবে কোচিং সেন্টারে অবস্থানের কারণে সামিট কোচিং সেন্টার নামে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অপর এক শিক্ষককে ৫ হাজার টাকা জরিমানাও করেছেন আদালত। উদ্বেগজনক তথ্য হলো, ওইসব কোচিং সেন্টারের ছড়ানো প্রশ্নগুলো গতকাল পরীক্ষায় এসেছে।

তবে এসব বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আলমগীর বলেন, তারা কোথাও কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ পাননি। বরং শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা হওয়ার খবর পেয়েছেন। তবে কয়েক বছরের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেখে সাজেশন করলে কিছু মিল পড়লে পড়তেও পারে। শতভাগ না মিললে সেটাকে কোনোভাবেই প্রশ্নফাঁস বলা যাবে না।

গত বছরের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাতেও প্রতিটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিলো। গত বছরের ১১ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে প্রাথমিক সমাপনীর প্রশ্নফাঁসের কথা স্বীকার করেছিলেন সে সময়ের প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেছিলেন, ওই সমাপনী পরীক্ষায় ইংরেজি ও বাংলা বিষয়ের বেশির ভাগ প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পেয়েছিলো সরকারি তদন্ত কমিটি। এর মধ্যে ইংরেজিতে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সাথে পরীক্ষা হওয়া প্রশ্নের ৮০ শতাংশ এবং বাংলার ৫০ শতাংশ মিল পাওয়া যায়। তবে প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পেলেও গত বছর সমাপনীর পরীক্ষা বাতিল করা হয়নি। মন্ত্রী সে সময় জানিয়েছিলেন, কোচিং সেন্টারভিত্তিক একটি চক্র প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত।