প্রাথমিক সমাপনীর প্রথম দিনে অনুপস্থিত প্রায় দেড় লাখ

চুয়াডাঙ্গায় পিএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে অনুপস্থিত ৬৫১ জন

 

স্টাফ রিপোর্টার: প্রাথমিক ও এবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রথম দিন সারাদেশে এক লাখ ৪৩ হাজার ৪৪০ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলো। এছাড়া রাজশাহী ও ঢাকা বোর্ডে একজন করে পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল ১১টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত প্রাথমিক ও এবতেদায়ি সমাপনীর ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষা হয়। নিয়ন্ত্রণকক্ষের তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিক সমাপনীতে এক লাখ দু হাজার ৭৪২ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলো। এর মধ্যে ৪৯ হাজার ১৪৪ জন ছাত্রী এবং ৫৩ হাজার ৫৯৮ জন ছাত্র। অন্যদিকে এবতেদায়িতে ৪০ হাজার ৬৯৮ জন অনুপস্থিতের মধ্যে ১৭ হাজার ১৭৫ জন ছাত্রী এবং ২৩ হাজার ৫২৩ জন ছাত্র। প্রাথমিক সমাপনীতে অনুপস্থিত ছিলো তিন দশমিক ৬৮ শতাংশ। এবতেদায়িতে এই হার ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। বাংলাদেশের ছয় হাজার ৭৯১টি এবং দেশের বাইরে ১১টি কেন্দ্রে পঞ্চম শ্রেণির ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৪৪ জন এবং মাদ্রাসার তিন লাখ পাঁচ হাজার ৭২১ জন শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গায় প্রাথমিক সমাপনী ও এবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী (পিএসসি) পরীক্ষায় গতকাল রোববার প্রথম দিনে ইংরেজি বিষয়ে ৬৫১ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলো। এর মধ্যে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় ৪১৪ জন ও এবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষায় ২৩৭ জন। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় উপস্থিতির হার ছিলো ৯৭ দশমিক ৮২ ভাগ ও এবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষায় উপস্থিতির হার ছিলো ৮৬ দশমিক ০৯ ভাগ ।

পরীক্ষার প্রথম দিনে গতকাল রোববার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা ঝিনুক মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম মামুন উজ্জামান। এ সময় সাথে ছিলেন সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান মিলন। কেন্দ্র সচিব রেবেকা সুলতানা জানান, ঝিনুক মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪৯৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৬ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলো।

চুয়াডাঙ্গায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ১৯ হাজার ৩৪ জন পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণের কথা ছিলো। এর মধ্যে প্রথম দিনে ৪১৪ জন অনুপস্থিত থাকায় বর্তমানে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা রয়েছে ১৮ হাজার ৬২০ জন। অপরদিকে এবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় জেলায় এক হাজার ৭৩৬ জন পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণের কথা থাকলেও প্রথম দিনে ২৩৭ জন অনুপস্থিত থাকায় বর্তমানে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা রয়েছে এক হাজার ৪৯৯ জন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গোলাম নবী জানান, পরীক্ষা শান্তিপূর্ণভাবে শুরু এবং সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি ।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গার ১৬টি কেন্দ্রে পিএসসি এবং একই সাথে ১৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯টি এবতেদায়ি কেন্দ্রে পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এ বছর উপজেলায় ৫ হাজার ৯৮১ জন শিক্ষার্থী পিএসসি ও ৩৩৭ জন শিক্ষার্থী এবতেদায়ি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। পিএসসিতে অনুপস্থিত ছিলো ৫৭ জন ও এবতেদায়িতে ১১৮ জন অনুপস্থিত ছিলো। প্রথম দিনের পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মল্লিক সাঈদ মাহবুব, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুল আলম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী খালেদুর রহমান অরুন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু হাসান।

ভ্রাম্যমা/কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ইংরেজি পরীক্ষার প্রথম দিনে ৩৩টি বিদ্যালয়ের ৮২৪ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। ১১ ছিলো অনুপস্থিত এবং এবদেতায়িতে ১২৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্য ১১৯ জন অংশ নেয় এবং ৫ জন অনুপস্থিত ছিলো। দেওলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সেলিনা আক্তারকে অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়। একই অপরাধে রুদ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক গোলাম হোসেনকে ক্লোজ করেন দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদুর রহমান।

দামুড়হুদা অফিস জানিয়েছে, দামুড়হুদায় ১১টি কেন্দ্রে ৪ হাজার ৯৫০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬৯০ জন এবতেদায়ির মধ্যে প্রাথমিক ৭৭ জন এবতেদায়ি ১০০ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলো। ৩ জন শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, গতকাল রোববার উপজেলার ৯টি কেন্দ্রে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় দু হাজার ৯২৫ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে উপস্থিত ছিলো দু হাজার ৮৩০ জন। অনুপস্থিত ছিলো ৯৫ জন। এছাড়া এবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা ৫টি কেন্দ্রে ২৯০ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে উপস্থিত ছিলো ২৬৯ জন। অনুপস্থিত ছিলো ২১ জন। গতকালের অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় পরীক্ষার হলরুমে অবেধভাবে মোবাইলফোন রাখায় পাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, জীবননগর উপজেলায় প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় দু হাজার ৯২৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে বালক ১ হাজার ৩২৭ জন। বালিকা ১ হাজার ৫৯৮ জন। গতকাল উপজেলার ৯টি কেন্দ্রে প্রথম দিনের পরীক্ষায় দু হাজার ৮৩০ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। জীবননগর উপজেলার উমাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আশুরা খাতুন বাঁকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে অবৈধভাবে মোবাইলফোন নিয়ে যাওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়। কক্ষ পরিদর্শনকালে বিষয়টি নজরে পড়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরুল হাফিজ তাকে তার দায়িত্ব থেকে অপসারণের নির্দেশ দেন।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুরে ১৩ হাজার ৩৫৪ জন পরীক্ষার্থী প্রাথমিক ও এবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছে। জেলার ৩ উপজেলায় পরীক্ষা কেন্দ্র ৩৪টি। ১৩ হাজার ৩৫৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬ হাজার ৪৪৩ জন ছাত্র ও ৬ হাজার ৯১১ জন ছাত্রী রয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানায়, এবার ৩ উপজেলায় এ পরীক্ষার লক্ষ্যে ২২ জন শিক্ষককে প্রধান পরীক্ষক, ১৫১ জন নিরক্ষক এবং ৩৭৮ জন শিক্ষককে পরীক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ প্রদান করে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা তানিয়া, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এসএম তৌফিকুজ্জামানসহ জেলা প্রশাসন ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারগণ বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন।

গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে প্রাথমিক বিদ্যালয় সমাপনী পরীক্ষায় মেহেরপুরের গাংনীতে ৪ শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল রোববার পরীক্ষা শুরু পর জুগিরগোফা কেন্দ্রের ওই ৪ জনকে বহিস্কার করা হয়। এরা হচ্ছেন- শালদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রেজা নাজমুল ইসলাম, চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তারিকুজ্জামান ও জাহাঙ্গীর আলম এবং ইকড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পিয়াঙ্কা খাতুন। গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল আমিন তাদের বহিষ্কার করেন। তিনি জানান, দায়িত্বে অবহেলা ও পরীক্ষা কক্ষে মোবাইলফোন নিয়ে অবস্থান করায় তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।

ডাউকি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গার ডাউকি ইউনিয়নের কেন্দ্র বাদেমাজু বাদল স্মৃতি একাডেমীতে সমাপনী ও এবতেদায়ি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে প্রথম দিনের ইংরেজি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। প্রাথমিকে ৩৭৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে অনুপস্থিত ছিলো ১১ জন। এবতেদায়িতে ৮ জনের মধ্যে অনুপস্থিত ছিলো ১ জন। কেন্দ্র সচিবের দায়িত্বে ছিলেন প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম। এছাড়াও সার্বিক মনিটরিঙের দায়িত্বে ছিলেন আলমডাঙ্গা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার নুরুল ইসলাম।

আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়া বহুমুখি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রাথমিক ও এবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্র এলাকার ১৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৩টি কিন্ডারগার্টেন কেজি স্কুলের ৪৪৮ জন ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। অংশগ্রহণকারী ১৯৮ জন ছাত্রের মধ্যে ৫ জন ও ২৬৪ জন ছাত্রীর মধ্যে ৯ জন অনুপস্থিত দেখা গেছে। এবতেদায়ি পরীক্ষায় দুটি মাদারাসার ৭৩ জন ছাত্রছাত্রী অংশ নেয়। অংশগ্রহণকারী ৪২ জন ছাত্রের মধ্যে ২ জন ও ৩৪ জন ছাত্রীর মধ্যে ১ জন অনুপস্থিত রয়েছে বলে কেন্দ্রের হল সুপার বালিহুদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আল আমিন হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান। কেন্দ্রটির দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন জীবননগর উপজেলা ইউআরসি আনোয়ারুল ইসলাম ও সমাজসেবা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম।

আমঝুপি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি সরকারি প্রাথমিক বালক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৬২৫ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ছাত্র ৩২৬ জন ও ছাত্রী ২৯৯ জন। প্রথম দিনে ৯ জন ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলো। অপরদিকে মোমিনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে ৪০৭ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।

ডাকবাংলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের সদর উপজেলার সাধুহাটিতে সমাপনী পরীক্ষা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষার হল পরিদর্শন করেন এসিল্যান্ড জাহাঙ্গীর আনাম ও ঝিনাইদহ উপজেলা শিক্ষা অফিসার শেখ মো. কামরুল জামান।