দেশে ফিরেছেন লতিফ সিদ্দিকী : যেকোনো সময় গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার: গ্রেফতারি পরোয়ানার হুমকি মাথায় নিয়ে কোলকাতা থেকে দেশে ফিরেছেন মন্ত্রিসভা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। গতকাল রোববার রাত আটটা ৪০ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটযোগে হযরত শাহজাহাল বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া চলাকালে তিনি বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ দোলনচাঁপায় বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। পরে সোয়া নয়টার দিকে বিমানবন্দর থেকে ধানমণ্ডির বাসায় রওনা দেন। বিমানবন্দরে তাকে কোনো বাধা বা গ্রেফতারের চেষ্টা করা হয়নি। তবে লতিফ সিদ্দিকীকে যেকোনো সময় গ্রেফতার করা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশন চলছে। আর সংসদ চলাকালে কোনো সংসদ সদস্যকে স্পীকারের পূর্ব অনুমতি ছাড়া গ্রেফতার করা যায় না। এ কারণেই গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও আবদুল লতিফ সিদ্দিকী নির্বিঘ্নে কোলকাতা থেকে ঢাকার নিজ বাসভবনে ফিরেছেন। আজ সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে পারেন দল ও মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কৃত এ নেতা।
নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে পবিত্র হজ ও তবলিগ জামাত সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে আলোচনার শিরোনাম হন লতিফ সিদ্দিকী। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে বক্তব্য দেয়ায় তার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং কয়েকটি আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করে।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে বক্তব্য রাখার কারণে গত ১২ অক্টোবর একই দিনে লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় গত ২৫ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হয়। দলের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়, লতিফ সিদ্দিকীর সাথে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক আর নেই আর তার বিতর্কিত বক্তব্যের দায়ও আওয়ামী লীগ নেবে না।

এদিকে নানান গুঞ্জনের প্রেক্ষিতে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, লতিফ সিদ্দিকী ঢাকায় ফিরেছেন। তবে বিমানবন্দর থেকে কোথায় যাবেন বা গেছেন কি-না, তা তিনি জানেন না। তিনি জানান, আইনের প্রক্রিয়া দেখেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইনী প্রক্রিয়া কেমন হতে পারে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, এতো মামলা নিয়ে যখন দেশে এসেছেন নিশ্চিয়ই আইনজীবীদের সাথে যোগাযোগ করেই এসেছেন তিনি।

ঢাকা ঘেরাওয়ের হুমকি: সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা না হলে ঢাকা ঘেরাওসহ লাগাতার হরতালের হুমকি দিয়েছে কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।
হেফাজতের প্রচার বিভাগের মাওলানা আবু রায়হান স্বাক্ষরিত এক যুক্ত বিবৃতিতে এ হুমকি দেন সংগঠনের আমির শাহ আহমদ শফী ও মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আমরা শুনেছি ইসলামের মৌলিক ইবাদত হজ নিয়ে কটূক্তি ও মহানবী (দ.) সম্পর্কে ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্যকারী স্বঘোষিত মুরতাদ লতিফ সিদ্দিকী বিমানবন্দরে অবতরণ করেছেন। তাকে সেখান থেকেই গ্রেফতার করতে হবে। কৌশলে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হলে হেফাজত ইসলাম দেশে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে। প্রয়োজনে ঢাকা ঘেরাও ও লাগাতার হরতালের কর্মসূচীও দেয়া হবে।

২২ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা: ধর্মীয় অনভূতিতে আঘাত হানার জন্য লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ঢাকা ও দেশের ১৮টি জেলায় তার বিরুদ্ধে ২২টি মামলা হয়। নির্ধারিত সময়ে আদালতে হাজির না হওয়ায় প্রতিটি মামলায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।