দামুড়হুদায় শীতের শুরুতেই খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

শীতে গাছ কাটাতে কষ্ট হলেও মিষ্টি রস আর নলেন গুড় খাওয়ার মধ্যে রয়েছে আলাদা রকম মজা

 

বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদায় শীতের আগমনে খেঁজুর রস সংগ্রহে এখন মহাব্যস্ত স্থানীয় গাছিরা। মাজায় দড়া বেঁধে গাছে ঝুলে ঝুলে গাছ পরিচর্যার কাজ প্রায়ই শেষ। এখন রস সংগ্রহের পালা। প্রতিদিন সকালে রস সংগ্রহ করে তা জ্বালিয়ে তৈরি করা হবে নোলেন গুড় আর সুস্বাদু পাটালি। ওই নলেন গুঁড় দিয়েই তৈরি হবে হরেক রকম শীতের পিঠা-পুলি আর পায়েশ। ঘরে উঠেছে নতুন ধান। ফলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষকে ঘিরে গ্রামিণ জনপদে শুরু হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ।

damurhuda pic. 23.11.14 (2)

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার প্রতিটি গ্রামেই রয়েছে হাজারো খেজুর গাছ। আর এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে প্রতি বছর শীতের শুরুতেই গাছ পরিচর্যার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন গাছিরা। প্রাচিনকাল থেকেই মাজায় দড়া বেঁধে গাছে ঝুলে ঝুলে গাছিরা করে আসছেন গাছ ঝোড়ার কাজ। এ বিষয়ে উপজেলার নতিপোতা গ্রামের একজন পেশাদার গাছি সারাফ মল্লিক বলেন, বিভিন্ন প্রকার গাছ কাটায় আমার পেশা। গাছ কেটে, ঝুড়ে যা আয় হয় তা দিয়েই আমার সংসার চলে। তবে শীত মরসুমে আমি এলাকার বেশ কিছু খেজুর গাছ ভাগে/বর্গায় নিয়ে রস সংগ্রহ করি। এলাকার অধিকাংশ খেজুর গাছ ইটভাটায় পুড়িয়ে ফেলায় বর্তমানে গাছের সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। ফলে আগের মত আর বেশি বেশি গুড় তৈরি করা সম্ভব হয়না। এখন শীতের পরিমাণ একটু কম তাই রস মিষ্টিও কম এবং পরিমাণেও কম। তবে শীতের তীব্রতা বাড়লে রস আরও বেশি মিষ্টি হবে এবং রসের পরিমাণও বাড়বে। তিনি আরো বলেন, একটি গাছ থেকে গড়ে ২০ কেজি করে গুড় হয়। এর মধ্যে গাছ মালিককে দিতে হয় গাছ প্রতি দু থেকে আড়াই কেজি। প্রচণ্ড শীতে গাছ নামাতে কষ্ট হলেও রস আর নলেন গুড় খাওয়ার মধ্যে রয়েছে একটা আলাদা রকম মজা।

শীতের খেজুর রস, নলেন গুড় আর পাটালির কথা শুনে একটা গল্প মনে পড়ে গেলো। মাথাভাঙ্গার প্রিয় পাঠকদের জন্য লম্বা কাহিনীর গল্পটি গল্পটা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো- গ্রামীণ জনপদের এক ব্যক্তিকে চাকরির সুবাদে গ্রাম থেকে পাড়ি জমাতে হলো রাজধানী শহর ঢাকায়। দু দিন থাকার পর তার আর মন বসছে না। ভাবছে কোথায় ছিলাম আর কোথায় এলাম। এখানে তেমন কোনো গাছগাছালি নেই, নেই কোনো আগানবাগান, সবুজ ফসলের মাঠ। এখানে শুধু উঁচু উঁচু বিল্ডিং আর কল-কারখানার কান ঝালাপালা শব্দ। এতোকিছু ঝামেলার পরও শুধু সংসারের কথা চিন্তা করে অনেকটা বাধ্য হয়েই তাকে থাকতে হচ্ছে ঢাকা শহরে। দিন যেন আর কাটে না। অতিকষ্টে মাস তিনেক থাকার পর এলো শীত মরসুম। একদিন সকালে তার এক সহকর্মীর সাথে হাঁটতে বেরিয়ে দেখলেন রোডের ধারে ধুপি পিঠা বিক্রি হচ্ছে। দেখেই যেন তার জিভে জল এসে গেলো। কতোদিন খাওয়া হয়নি ওই পিঠা। দেরি না করে দুটি পিঠে কিনে একটি তার সহকর্মীকে দিলেন এবং একটি নিজে খাওয়া শুরু করলেন। কিন্তু ঢাকা শহরের ওই ধুপি পিঠা খেয়ে কোনো স্বাদ পেলেন না তিনি। কষ্টে ক্ষোভে তিনি তার সহকর্মীকে বললেন, ভাই এ পিঠাইতো কোনো স্বাদ পেলাম না। তবে আমি আপনাকে পিঠা খাওয়াবো আমার নিজের গাছের তৈরি গুঁড় দিয়ে। তিনি গ্রামের বাড়িতে ছেলের কাছে চিঠি লিখে জানালেন এক ভাড় নলেন গুড় পাঠানোর জন্য। তিনি আরো জানালেন, গুড় যেন একটু বেশি পাকের হয়। বাবার কথামতো ছেলে রস পেড়ে বেশি করে পাক দিয়ে গুড় তৈরি করলেন। গুড়ে জাল একটু বেশি হওয়ায় তা একটু পুড়া পুড়া হয়ে গেলো। কি আর করার। ওই গুড়ই পাঠালেন বাবার ঠিকানায়। জনৈক ব্যক্তি গুড় পেয়ে বেজায় খুশি। তিনি তার সহকর্মীকে নিজ বাসায় পিঠা খাওয়ার দাওয়াত দিলেন। ছুটির দিনে তিনি নিজ হাতে পাটালি জালিয়ে আবারও গুড়ে রূপান্তর করলেন এবং বেশ কিছু পিঠাও তৈরি করলেন। পিঠা খাওয়ার সময় সহকর্মী বললেন, ভাই পিঠা যে তিতো হয়ে গেছে। তিনি নিজেও পরখ করে দেখলেন সত্যিই তিতো লাগছে। তিনি সাথে সাথে তার ছেলের কাছে পুনরায় একটি পত্র-প্রেরণ করে বললেন- পাটালি পাটালি না পাটালি না পাটালি পুড়া পাটালি কেন পাটালি।