সামরিক শাখার প্রধান মাসুমকে খুঁজছে বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ
স্টাফ রিপোর্টার: ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেফতার জেএমবি নেতা শেখ রহমতুল্লাহ সাজিদ ওরফে মাসুমের স্ত্রী ফাতেমা বেগম ঢাকায় গ্রেফতার হয়েছেন। তার সাথে গ্রেফতার হয়েছে আরও তিনজন। জেএমবির নারী শাখার প্রধান ফাতেমা জঙ্গি প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন। শনিবার রাতে তাদেরকে সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে পুলিশের অপর একটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ডিবির একটি দল কেরানিগঞ্জের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দু বছরের শিশু সন্তানসহ ফাতেমাকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেয়া তথ্য মতে গ্রেফতার করা হয় সাজিদের সহযোগী আব্দুল্লাহ কাজী, ইশরাত আলী শেখ ও শওকত হোসেনকে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বেশ কিছু জিহাদি বই, বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম। গতকাল রোববার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফাতেমাকে দু মামলায় ৬ দিন ও অপর তিনজনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, গত ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের পর ৮ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ সাজিদকে গ্রেফতার করে। এরপর সাজিদের স্ত্রী-সন্তানসহ সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে এসে কেরানিগঞ্জের এক আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপন করেন। প্রসঙ্গত কয়েকদিন আগে নারায়ণগঞ্জের ফরাজীকান্দা গ্রাম থেকে সাজিদের বড় ভাই মনাকে গ্রেফতার করে ৱ্যাব।
গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন ডিবির যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, ফাতেমা বর্ধমান বিস্ফোরণের সময় তার স্বামীর সাথে ঘটনাস্থলের পাশেই অবস্থান করছিলেন। তিনি ওই এলাকার শিমুলিয়ায় এক মাদরাসায় জঙ্গি প্রশিক্ষণও দিতেন। ওই মাদরাসায় দরিদ্র মেয়েদের পড়াশোনার পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়ারও ব্যবস্থা ছিলো। তাদের মধ্যে যারা চৌকস, তাদের জেএমবিতে যুক্ত করতেন ফাতেমা।
তিনি আরও জানান, ওই মাদরাসায় শারীরিক শিক্ষার পাশাপাশি এয়ারগান দিয়ে অস্ত্র চালনা শেখানো হতো বলে তারা জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছেন। সেখানে অন্তত ২৫ জন নারী প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এর মধ্যে ছয়জন বাংলাদেশি, বাকিরা ভারতীয়। তবে সবাই এখন পলাতক।
অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, ফাতেমা বর্ধমান বিস্ফোরণের পর ভারতের ঝাড়খন্ডে পালিয়ে ছিলেন। পরে তিনি পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন। মনিরুল ইসলাম আরো জানান, গ্রেফতারকৃত অপর তিনজন জেএমবিতে যোগ দেয় ২০০৪ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে। ২০০৫ সালে তারা গোপালগঞ্জে ব্র্যাক ব্যাংক ডাকাতিতে অংশ নিয়ে গ্রেফতার হয়। সে সময় সাজিদও তাদের সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছিল। তবে ২০১১ সালে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর থেকেই তারা পলাতক ছিলো।
মনিরুল ইসলাম বলেন, সমপ্রতি বাংলাদেশ সফরে এসে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) কর্মকর্তারা যেসব পলাতক জঙ্গির বিষয়ে কথা বলেছেন, তাদের কারো সাথে ফাতেমা বা তার সঙ্গে আটকদের যোগাযোগ ছিল কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবির উপকমিশনার (দক্ষিণ) কৃষ্ণপদ রায়, উপকমিশনার (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম ও উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
জেএমবির নারী শাখার প্রধান ফাতেমা বেগম জেলার মোল্লাহাট উপজেলার দ্বিগংগা গ্রামের রফিক শেখের মেয়ে। ১০ বছর আগে সাজিদের সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের দু বছর পর গোপালগঞ্জের একটি মামলায় আটক হয়ে ৭ বছর কারাগারে থাকে সাজিদ। কারাগার থেকে দু বছর আগে ছাড়া পেয়ে সাজিদ ও ফাতেমা তাদের এক সন্তানকে নিয়ে ভারতের বর্ধমানে চলে যায়।