নেই বিনোদনের ব্যবস্থা : অ্যাসেম্বলি হয় রাস্তার ওপর

চুয়াডাঙ্গার মাস্টারপাড়ার সেই কালিপদ স্কুলের কাহিল অবস্থা

 

রহমান রনজু: চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রাণকেন্দ্র মাস্টারপাড়ার কালিপদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বয়স প্রায় ১০০ বছর। শুধু বয়সে নয় অযত্ন আর অবহেলায় একবারে থুত্থুড়ে ভাব তার। কোনো রকম ধুঁকে ধুঁকে চলছে বিদ্যালয়টি। এক সময় এর অনেক গৌরব থাকলেও ইদানীং তার দিন্যদশা দেখে যে কেউই নাক সিটকাবেন। ছোট্ট একটি ভবন থাকলেও শিক্ষার্থীদের একটু চলাফেরা ও বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই এখানে। এমনকি শিক্ষকদের বসার জায়গা পর্যন্ত নেই। এখানকার পরিবেশ দেখলে যেকেউ বিস্মিত না হয়ে পারবেন না।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার মাস্টারপাড়ায় ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় কালিপদ প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরবর্তীতে এর নাম হয় ১ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। চুয়াডাঙ্গার অনেক নামী-দামি ব্যক্তি এই বিদ্যালয়ের ছাত্র। অথচ বিদ্যালয়টির কাহিল দশার খবর এখন কেউই রাখেন না। এখানে যে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে তা রাস্তা থেকে বোঝা মুশকিল। মাত্র চার শতক জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। বিদ্যালয়ের ভবন বাদে খোলামেলা কোনো জায়গা নেই। প্রতিদিন সকালে যখন বিদ্যালয়ের অ্যাসেম্বলি হয়, তখন স্কুলের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা রাস্তার ওপর লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। ফলে রাস্তার মানুষজন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খুব জরুরি প্রয়োজনে কোনো কোনো পথচারী ছাত্র-ছাত্রীদের লাইনের মাঝ দিয়েই পার হয়ে চলে যায়। এতে যেমন পথচারীদের ভোগান্তি হয়, তেমনি কেউ কেউ তামাশা করে হাসে। বিব্রত হন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

বিদ্যালয়টিতে গতকাল সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, একটি টিনশেডের হলরুমে দুটি পার্টিশন দিয়ে শ্রেণিকক্ষ বানানো। সব শ্রেণিকক্ষের দরোজা মাত্র একটি। এ কারণে ক্লাস চলাকালীন ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকের পাশ দিয়েই আরেক কক্ষে যেতে হয়। দেখা যায় একটি কক্ষেই বসানো হয়েছে দুটি শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের। এ কারণে এক ক্লাসের পড়াশোনা অন্য ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এসব সমস্যার কারণে শিক্ষকদের আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও উপযুক্ত পাঠদান করতে পারেন না তারা। শ্রেণিকক্ষে প্রয়োজনীয় জায়গা না থাকায় নির্দিষ্ট সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির পর ছাত্র-ছাত্রী এলে তাদেরকে ফেরত দেয়া হয়। শ্রেণিকক্ষে একটি চেয়ার টেবিল রাখলে শিক্ষার্থীদের বসার জায়গা হয় না। এখানে নেই একটি টিউবওয়েল। শ্রেণিকক্ষের ভেতরে একটি পৌরসভার ট্যাপ লাইন। এখানে বালতি ও কলসে পানি ভরে রাখা হয়। বাধ্য হয়ে ওই পানিই পান করে শিশুরা। ছোট্ট একটি অফিসরুমে ঠাসাঠাসি করে বসেন বিদ্যালয়ের পাঁচজন নারী শিক্ষক।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চাঁদ সুলতানা জানান, এখানে সামান্যতম বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। কয়টা ক্লাসরুম ছাড়া তাদের বেরুনোর কোনো জায়গা নেই। হাজামজা বিদ্যালয়ের ভবনটি ভেঙে পরিকল্পিতভাবে এখানে ভবন নির্মাণ করা হলে হয়তো এই জায়গার মধ্যেই শিশুদের খেলাধুলাসহ বিনোদনের ব্যবস্থা করা সম্ভব। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

Leave a comment