চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের ৩৭ বর্ষপূতি উৎসব : নবীন-প্রবীণ সাহিত্যকদের মিলন মেলায় কবি হেলাল হাফিজ
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের ৩৭ বর্ষপূর্তি উৎসব আয়োজন ছিলো নবীন-প্রবীণ সাহিত্যিকদের মিলনমেলা। ছড়িয়েছে রঙের ছটা। ‘সাহিত্যই আনবে পুষ্পিত সময়’ এ বিশ্বাস হৃদয়ে ধরে গতকাল শুক্রবার দিনব্যাপি অনুষ্ঠানমালায় হেলাল হাফিজের স্বকণ্ঠে উচ্চারিত হয়, এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাওয়ার তার শ্রেষ্ঠ সময়…। সমাপনী পর্বে তিনি কষ্টও ফেরি করে নবীন সাহিত্যিকদের আবেগী করে তোলেন।
চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ শুধু স্বনামধন্য নয়, পথহারার পথপ্রদর্শক। স্বপ্নের সোপানও। এই সাহিত্য পরিষদের ৩৭ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার দিনব্যাপি নানা আয়োজন করা হয়। আয়োজনের মধ্যে ছিলো দিনের প্রথমভাগে চিত্রাঙ্কন ও কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা। দ্বিতীয় পর্বের শুরুতেই আনন্দযাত্রা। এর আগে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর জমিয়ে তোলে শিল্পকলা একাডেমীর মুক্তমঞ্চ। মুক্তমঞ্চ থেকে আনন্দযাত্রা বের হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে ফেরে। আলোচনা পর্বের শুরুতে কবি হেলাল হাফিজ অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি বলেন, সাহিত্যচর্চা সাধনা। সাহিত্যচর্চায় বহুজন হারায় বহু মূল্যবান সময়। বিনিময়ে মানুষজাতি পায় পথের দিশা। চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ তারই সুযোগ সৃষ্টি করে চলেছে। জেলা পর্যায়ে সাহিত্যচর্চা কেন্দ্রগুলোকে কতোটা কষ্টে, কতোটা সংগ্রাম করে চলতে হয় তা বর্ণনা করাও কঠিন। এর মাঝে চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ যে আয়োজন করেছে তা শুধু প্রশংসার দাবি রাখে না, অন্যদের জন্য অনুকরণীয় বটে।
সাহিত্য পরিষদ সভাপতি বানওয়ারী লাল বাগলার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সাবেক সভাপতি মকবুলার রহমান, মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র পরিচালক ঔপন্যাসিক বাংলাদেশ গাংচিলের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ খান আখতার হোসেন, কবি গোলাম মোর্শেদ চন্দন। চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রিচার্ড রহমান স্বাগত বক্তব্য দেন। উপস্থাপনায় ছিলেন সাহিত্য পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম। এ পর্বে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন- দৈনিক মাথাভাঙ্গা সম্পাদক প্রেসক্লাব সেক্রেটারি সরদার আল আমিন, আবৃত্তি পর্ষদের আহ্বায়ক মরিয়ম শেলী, সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহার আলী, অরিন্দমের অর্থবিষয়ক সম্পাদক ইয়াকুব আলী, প্রগতি লেখক সংঘের সহসভাপতি কোরবান আলী, মধুচক্র সহিত্য পরিষদের ইছাহক আলী, সংলাপের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি খন্দকার হামিদুল ইসলাম আজম, সরগম সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিচালক খন্দকার সাহেদুজ্জামান খোকন প্রমুখ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দিতে গিয়ে সরদার আল আমিন বলেন, সাহিত্য পরিষদের আঙিনা মাথাভাঙ্গা পরিবারের কাছে মমতাময়ী আঙিনা।
স্বাগত বক্তব্য শেষে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল মোহিত। আলোচক ছিলেন হামিদুল হক মুন্সি, মুন্সি আবু সাইফ ও সরদার আলী হোসেন। আলোচকদের আলোচনায় উঠে আসে এলাকার সাহিত্য সংস্কৃতির ইতিহাস ঐতিহ্য। চুয়াডাঙ্গার গৌরব। আলোচনাপর্বের প্রধান অতিথি অনুষ্ঠানের উদ্বোধক বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি তার কয়েকটি কবিতা নিজ কণ্ঠে আবৃত্তি করেন। শুরুতেই তিনি এখন যৌবন যার কবিতা আবৃতি করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মাঝে তিনি কষ্ট নেবে কষ্ট? প্রশ্ন মাখা কবিতা পড়ে যেন কষ্ট ফেরি করে নিজের ক্লান্তির কথাও কবিতার সুরে সুরে বলে কবিত্ব ফুটিয়ে তুলে নবীন সাহিত্যকদের উৎসাহিত করেন। রাতে তিনি জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয় সাহিত্য পরিষদ নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় সুধীবৃন্দের সাথে খোশগল্পে মেতে ওঠেন। কবি হেলাল হাফিজ ও কবি গোলাম মোর্শেদ চন্দন আজ ভোরে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের বর্ষপূর্তি উৎসব পূর্ণতা দিতে সহসভপতি আবুল কাশেম, মালেকা হক মাখন, প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক গোলাম কবির মুকুল, সহসাধারণ সম্পাদক কাজল মাহমুদ. অর্থসম্পাদক আদিল হোসেন, শিশু-কিশার সম্পাদক ইদ্রিস মণ্ডল, কার্যকরী সদস্য জেড আলম, শেখ পিন্টু প্রমুখ দায়িত্ব পালন করেন।
‘অপরদিকে বড় আশা করে এসেছি গো কাছে ডেকে লও’ স্লোগানকে সামনে চুয়াডাঙ্গা সুর কানন একাডেমীর নিয়মিত আয়োজন মাসিক গানের আসর সুরের খেয়া গতকাল সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা শ্রীমন্ত টাউনহলে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে আগত শিল্পী তিমির নন্দী সঙ্গীত পরিবেশন করে দর্শক মাতান। এছাড়া সঙ্গীত পরিবেশন করেন আশাবুল হক, খন্দকার নাসিমা কবীর, জয়ীতা, খন্দকার নুসরাত জাহান করবী, অবনী, ঐশী, আদিল প্রমুখ।