পুলিশেও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা!

 

স্টাফ রিপোর্টার: পুলিশের বিশেষ শাখায় কর্মরত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মাহবুব হোসেনের জন্ম মুন্সিগঞ্জে ১৯৬০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিলো ১১ বছর। তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ নিয়েছেন। ১৯৭১ সালের মার্চের শেষ দিকে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় তখন খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মনির-উজ-জামানের বয়স ছিল সাড়ে ১২ বছর। তিনিও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ নিয়েছেন। শুধু বয়স নয়, চাকরিতে যোগদানের সময় তারা কেউই নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি বা উল্লেখ করেননি। একই সাথে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ প্রদানে সরকার যে চারটি মানদণ্ড বেঁধে দেয়, তাদের ক্ষেত্রে সেগুলোও অনুসরণ করা হয়নি। ফলে তাদের মুক্তিযোদ্ধা সনদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এ রকম ভেজাল সনদ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে চাকরি করছেন পুলিশের অন্তত ১৯ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এর মধ্যে একজন অতিরিক্ত আইজিপি, ৯ ডিআইজি, ৩ অতিরিক্ত ডিআইজি এবং ৬ সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার। মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি চাকরির মেয়াদ দু বছর বাড়ানোর পর তারা নিজের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেয়া শুরু করেন। কেউ কেউ সনদ সংগ্রহ করে চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেছেন। আবার কেউ আবেদন করেও পরে কোনো কারণে তা প্রত্যাহার করে নেন। মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণকারী সচিব, যুগ্ম সচিবসহ পদস্থ কর্মকর্তাদের বিষয়ে দুদক অনুসন্ধানে নামলে এসব তথ্যও উদঘাটিত হয়। এগুলোর ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেবে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।

দুদকের দায়িত্বশীল কয়েকটি সূত্র জানায়, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদে উল্লিখিত জন্মসাল অনুযায়ী কারও বয়স ১১ বছর, কারও বয়স ১২ কিংবা ১৩ বছর। উল্লিখিত বয়স অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া অবিশ্বাস্য। অথচ মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে পুলিশ কর্মকর্তারা চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের বয়সসীমা বৃদ্ধি করেছেন।

পুলিশের উচ্চপদে আসীন এই কর্মকর্তারা হলেন- পুলিশের অতিরিক্ত আইজি শেখ হিমায়েত হোসেন, অতিরিক্ত আইজি নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা এনডিসি, পুলিশ সদর দফতরে কর্মরত ডিআইজি মো. হুমায়ুন কবির, ডিআইজি বিনয় কৃষ্ণ বালা, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. নওশের আলী, এসবিতে কর্মরত ডিআইজি মাহবুব হোসেন, সিআইডিতে কর্মরত সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. সিরাজুল ইসলাম, ডিএমপির ডিআইজি মো. আবদুল জলিল মণ্ডল, খুলনা রেঞ্জে চলতি দায়িত্বে থাকা ডিআইজি এসএম মনির-উজ-জামান, ঢাকা রেঞ্জে কর্মরত ডিআইজি এসএম মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান, সিআইডিতে চলতি দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হোসেন, সিআইডিতে চলতি দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত ডিআইজি এসএম হাফিজুর রহমান, রাজশাহীর পুলিশ কমিশনার হিসেবে অবসর-পূর্ব ছুটি (পিআরএল) ভোগরত ডিআইজি মো. ওবাইদুল্লাহ, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. মকবুল হোসেন ভূঁইয়া, বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি ডা. মো. আবদুর রহিম, ৱ্যাব থেকে পিআরএল ভোগরত সহকারী পুলিশ সুপার একেএম হাবিবুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর সার্কেলের পুলিশ সুপার শাহ আলম বকাউল, এসবিতে কর্মরত সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সৈয়দ এমদাদুল হক এবং সিআইডিতে কর্মরত সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আওয়াল।