অ্যানথ্রাক্স এবং জীবননগর পৌর ও উপজেলা প্রশাসনের পদক্ষেপ

 

অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে জীবননগর এলাকার অনেকে। অ্যানথ্রাক্স রোগাক্রান্ত গরু জবাই করে ভোক্তার মাঝে মাংস বিক্রির প্রস্তুতি নেয়ার সময় খবর পেয়ে জীবননগর পৌর কাউন্সিলর, সেনেটারি ইন্সপেক্টর দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। খবর দেয়া হয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে। তিনি উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেটও। তাৎক্ষণিকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গরু বিক্রেতা ও জবাই করে মাংস বিক্রির জন্য প্রস্তুতি নেয়া কসাইকে অর্থদণ্ডাদেশ দেন। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, পৌর জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের তড়িৎ পদক্ষেপে এলাকার অনেকেই অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে।

অ্যানথ্রাক্স রোগ কী? কীভাবে মানবদেহে বাসা বাধে? বিশেষজ্ঞদের অভিমত, অ্যানথ্রাক্স ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি রোগ। ব্যাকটেরিয়াটির নাম ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস। গৃহপালিত পশু ঘাস খাওয়ার সময় জীবাণুর স্পোর খেয়ে ফেলে। এ স্পোর তখন পশুর দেহে অ্যানথ্রাক্স রোগের সৃষ্টি করে। পশুটি তখন নিজেই রোগের উৎস হিসেবে কাজ করে। মূলত গৃহপালিত পশুর সংস্পর্শে এলে বা স্কিন কন্টাক্ট হলে এ রোগ এক দেহ থেকে অন্য দেহে ছড়িয়ে পড়ে। জীবাণু শরীরে প্রবেশের দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে নানা উপসর্গ দেখা দেয়। ত্বকের অ্যানথ্রাক্সে শুরুতে শরীরে ছোট ছোট ঘা দেখা দেয়। ঘা বা আলসারগুলোয় কোনো ব্যথা থাকে না, একসময় শুকিয়ে কালো হয়ে যায়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে জীবাণু রক্তে মিশে যেতে পারে। ফলে সেপসিস হয়ে রোগী মারা যেতে পারে। ফুসফুসীয় অ্যানথ্রাক্স রোগে সাধারণ সর্দি-কাশির মতো সমস্যা দেখা দেয়। শ্বাসকষ্ট হয়, বুকে ব্যথা হয়। একসময় রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম দেখা দিতে পারে, যার পরিণতি নিশ্চিত মৃত্যু। তা হলে অ্যানথ্রাক্স ছড়ানোর বিষয়টিকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর পৌর জনপ্রতিনিধিসহ পৌর প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপ ধন্যবাদ পাবার দাবি রাখে। কেননা, রোগাক্রান্ত গরু বিক্রি করে পার পেয়ে গেলে গরু মালিকদের মধ্যে এ ধরনের ক্ষতিকর প্রবণতা ছড়াতে পারে। আর গরু জবাইয়ের পূর্বে বিধি মোতাবেক অনুমোদন না নিয়ে জবাইখানায় জবাই করে মাংস বিক্রির প্রক্রিয়া করা কসাই? গুরুতর অপরাধ করেছেন। তাকেও দণ্ডিত করা হয়েছে। অভিযোগ আছে, মাংস বিক্রেতাদের অনেকেই আরো বড় বড় অপরাধ করে। অভিযোগ না পাওয়া এবং প্রশাসনের অনেক সময় নমনীয়তার কারণে তাদের মধ্যে যে অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলেছে তার অন্যতম উদাহরণ জীবননগরের জবাইখানায় অনুমোদন ছাড়াই গরু জবাই। কসাই এ ধরনের অপরাধ করার সাহস অবশ্যই একদিনে পায়নি। এরপরও অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গরু জবাই করে মাংস বিক্রির পূর্বেই আইনগত পদক্ষেপ এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা রোধে সহায়ক হবে।