বিদেশে লোক পাঠানোর নামে প্রতারণা বন্ধ হবে কবে?

মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামের ১৮০ জনকে কাতারে ভালো চাকরির কথা বলে ইরাকে নিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতনের মধ্যে ফেলা হয়েছে। প্রতারিত প্রবাসীদের নিকটজনেরা বিষয়টি জানার পর তাদেরকে দেশে ফেরত আনার আবেদন জানিয়েছে। মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের নিকট এ আবেদন জানিয়ে প্রতারিত প্রবাসীর নিকটজনেরা একটি এজেন্সির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উত্থাপন করেছে বলে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

যেহেতু জনসংখ্যা বিস্ফোরণের দেশে জনশক্তিকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর ক্ষেত্র সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি, হচ্ছেও না। জনশক্তিকে বিদেশে কাজে লাগিয়ে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের মধ্যদিয়ে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করে তোলা হলেও প্রবাসে শ্রম বিক্রি করতে যেতে ইচ্ছুকদের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করা হচ্ছে না। সুযোগ বুঝে প্রতারকচক্র নানাভাবেই প্রতারণা করছে। ম্যানপাওয়ার এজেন্সিও যদি প্রতারণা করে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ দেশের প্রচলিত বিধানেই রয়েছে। এক দুজন নয়, প্রায় দুশজন প্রবাসী কুয়েতে অবর্ণনীয় কষ্টে রয়েছে। তাদের শ্রম নেয়া হলেও শ্রমের মূল্য দুরস্ত, ঠিকমতো খাবারই দেয়া হচ্ছে না। পাসপোর্টও কেড়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

প্রবাসে শ্রম বিক্রি করতে যাওয়া মানুষগুলো শুধু নিজের বা নিজের পরিবারের ভাগ্যের চাকাই ঘোরায় না, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা চাঙ্গা রাখতে যে অবদান রাখে তা অনস্বীকার্য। সরকার বিভিন্ন দেশে শ্রমবাজার খুঁজে প্রশিক্ষিত তথা দক্ষ শ্রমিক প্রেরণের উদ্যোগও নিয়েছে। তাতে যে ত্রুটি বা ঘাটতি রয়েছে তা বলাই বাহুল্য। তা না হলে পানিপথে মালয়েশিয়ায় নেয়ার নামে সাগরে ফেলে হত্যা হচ্ছে কেন? বিদেশে ভালো চাকরির প্রলোভনে ফেলে মানুষ পাচারের সঙ্ঘবদ্ধ চক্রই বা সক্রিয় রয়েছে কীভাবে? দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান তো নেই-ই। বিদেশেও শ্রম বিক্রির নিরাপদ রুটের শতভাগ নিশ্চয়তা নেই। এ অবস্থায় দেশের অগ্রযাত্রা কতোটা গতিশীল তা অনুমান করা সহজ।

অবশ্যই যারা বিদেশে শ্রম বিক্রির জন্য যেতে আগ্রহী তাদেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন। প্রবাসে দক্ষ শ্রমিকের কদর বেশি। দক্ষতা অর্জন এবং বিদেশে যাওয়ার জন্য কোন এজেন্সির সাথে চুক্তিবদ্ধ হলে তার বৈধ কাগজপত্র দেশের জনশক্তি ব্যুরোর অনুসন্ধান বিভাগ থেকে জানা ও বোঝার সুযোগ রয়েছে। যদিও সেটা অনেকের কাছেই ঘুরোপথ বলে মনে হয়। ঘুরোপথকে সহজ করা যেমন জরুরি, তেমনই প্রয়োজন অভিযুক্ত এজেন্সির বিষয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ। আর যারা প্রবাসে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, অনিশ্চয়তার মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছেন তাদেরকে সুহালে এবং দ্রুত দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় পাঠানোর কথা বলে একশ্রেণির দালালচক্র পানিপথে মানুষ পাচার করছে। পাচার হওয়া যুবকদের বিদেশে কৃতদাসত্বই শুধু করতে হচ্ছে না, তারা স্বজনদের সাথে ন্যূনতম যোগাযোগও করতে পারছে না। এ বিষয়ে মাঝে মধ্যেই পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। ফলে যাকে তাকে বিশ্বাস করার আগে বেশি বেশি করে যাচাই করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যাচাইয়ের পথ ঘুরো হলেও সে পথ প্রতারিত হওয়া থেকে রক্ষা করবে।