অধ্যাপক শফিউল হত্যায় ছাত্রী আটক : পুলিশের গোপনীয়তা নিয়ে রহস্য

 

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত অধ্যাপক একেএম শফিউল ইসলামের তালাবন্ধ ভাড়া বাসা থেকে বিভাগীয় মাস্টার্সের এক ছাত্রীকে আটক করেছে পুলিশ। তার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কিছুক্ষণ পরই নগরীর মতিহার থানা পুলিশ তার বাসায় গিয়ে গেটের তালা খুলে বাসার ভেতর থেকে ওই ছাত্রীকে আটক করে। কিন্তু পুলিশ ঘটনাটি গোপন রাখে। এক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে গভীর রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, গতকাল সোমবার সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মৌলবাদী ছাত্রসংগঠনের শীষ নেতার মাধ্যমে ঘটনাটি সাংবাদিকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হয়। পরে অনেকটা বাধ্য হয়ে মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।

মঙ্গলবার রাজশাহী মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) তানভীর হায়দার চৌধুরী এবং গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মজিদ ছাড়া আরএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। পুলিশ জানায়, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ওই ছাত্রীর নাম রওশন আরা সোনামনি। তার বাড়ি  নিহত শিক্ষক শফিউল ইসলামের নিজ জেলা গাইবান্ধায়। এ ব্যাপারে আরএমপির বিদায়ী কমিশনার ব্যারিস্টার মাহাবুবুর রহমান মঙ্গলবার রাতে জানান, খুনের সঙ্গে সোনামনি ও তার বন্ধু সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীরের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, নিহত শিক্ষকের বাড়ির গেটে থেকে তালাবন্ধ থাকা অবস্থায় গত শনিবার সন্ধ্যায় সোনামনিকে ওই বাড়ির ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে বর্তমানে তার মায়ের সঙ্গে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে তার মায়ের সঙ্গে রাখা হয়েছে। পুলিশ কমিশনার নিজে সোনামনি ও তার মাকে ইন্টারভিউ করেছেন।

তিনি আরো বলেন, সোনামনি আমাকে জানিয়েছেন কিছু সময়ের জন্য তাকে বাড়িতে রেখে যাওয়ার কথা বলে বাড়ির গেটে তালা লাগিয়ে বাইরে যান অধ্যাপক শফিউল। কিন্তু তার বাড়িতে ফিরতে দেরি হওয়ায় সোনামনি শফিউলের মোবাইলে ফোন করেন। কিন্তু শফিউল প্রথমবার ফোন ধরেননি। পরের বার তার মোবাইল বন্ধ পান সোনামনি। এরপর সোনামনি তার বন্ধুদের ফোন করে নিহত শিক্ষকের বাড়িতে আটক হওয়ার ঘটনা জানালে তাদের কেউ কেউ তাকে বাসার পেছনের দেয়াল টপকে বেরিয়ে যাবার পরামর্শ দেন। আবার কেউ পুলিশ দেখে ফেলতে পারে এটা জানিয়ে তাকে চুপচাপ বাসায় বসে থাকার কথা বলেন।

শিক্ষকের বাড়িতে আটকে পরার পর সোনামনি গাইবন্ধায় তার মাকেও ফোন করেন বলে জানান আরএমপি কমিশনার। তিনি আরো বলেন, সোনামনি তাকে জানিয়েছেন, এরপর সে জানতে পারেন তার শিক্ষক খুন হয়েছেন। সোনামনির কথা ভেরিফাই করে এখন পর্যন্ত কথাগুলোর সত্যতা পেয়েছি। ঘটনার সঙ্গে সোনামনি সংশ্লিষ্টতা আর শিক্ষকের ব্যক্তিগত বিষয়া, দুটি ভিন্ন বিষয়। শিক্ষক তো মারা গেছেন…তাই আমরা খুনের সাথে সোনামনি ও তার বন্ধুর সংশ্লিষ্টার বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।” তিনি বলেন, সোনামনির সঙ্গে অধ্যাপক শফিউলের ব্যক্তিগত সম্পর্ক (যদি থেকেও থাকে) তা এই খুনের ঘটনায় কোনো প্রভাব রেখেছে কি না আমরা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমার কেইসের (মামলা) সাথে ইনভলভ কি না? এই ঘটনার তার ইনভলবমেন্ট কতটুকু তা জানার চেষ্টা করেছি। জাহাঙ্গীর নামের সোনামনির এক বন্ধুর এই খুনের সাথে জড়িতের কোন প্রমাণ পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে পুলিশ কমিশনার বলেন, বিষয়টি ভেরিফাই করছি।

এদিকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ওয়ারদাতুল আকমাম মঙ্গলবার রাতে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, হ্যাঁ সোনামনি তার বিভাগের ছাত্রী। সে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়ে ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে সোনামনিকে আটকের বিষয়ে কেউই তাকে কিছু জানাননি। পুরো বিষয়টি পুলিশ দেখছে, আমি কিছুই জানি না।

তবে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মাস্টাসের্র রেজাল্টের পর অধ্যাপক শফিউলের অধীনেই থিসিস করার কথা ছিলো সোনামনির। সোনামনির পরিবারের সদস্যরাও অধ্যাপক শফিউলের সঙ্গে পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ট বলেও দাবি করেন এই শিক্ষক। তিনি বলেন, একই এলাকায় বাড়ি হওয়ায় সোনামনি মাঝেমধ্যেই ওই শিক্ষকের বাড়িতে থাকত। সোনামনির মা-বাবাও শফিউলের বাসায় যাতায়াত ছিল বলে এই শিক্ষকের দাবি। প্রতি সোমবার অধ্যাপক শফিউলের বাড়িতে লালনের যে আসর বসত সেখানে উপস্থিত থেকে সোনামনি অতিথিদের আপ্যায়ন করতেন বলেও জানান ওই শিক্ষক।

উল্লেখ্য, অধ্যাপক শফিউল হত্যার দু দিনের মাথায় গত সোমবার আরএমপির বিদায়ী পুলিশ কমিশনার ব্যারিস্টার মাহাবুবুর রহমানকে বদলি করা হয়েছে। আজ বুধবার তিনি আরএমপির নতুন কমিশনার মোহাম্মদ শামসুদ্দিনকে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দেবেন বলে জানান আরএমপির বিদায়ী পুলিশ কমিশনার।