ইবি শিক্ষক সমিতির সাধারণসভা পণ্ড

ইবি প্রতিনিধি: কোরাম পূর্ণ না হওয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষক সমিতির ডাকা সাধারণসভা পণ্ড হয়ে গেছে। গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে এ সাধারণসভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। নির্ধারিত সময়ের প্রায় তিন ঘণ্টা পরও কোরাম পূর্ণ না হওয়ায় সভা পণ্ড হয়ে যায়। জানা গেছে, আওয়ামী পন্থি ও প্রগতিশীল শিক্ষক প্যানেল থেকে নির্বাচনে প্রথমবারের মতো জয়ী শিক্ষক সমিতির সাধারণসভায় আওয়ামী পন্থি প্রায় অর্ধেক শিক্ষকই সভায় আসেননি।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রোববার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। সাধারণ সভার আলোচ্য বিষয় ছিলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৪শত ফাজিল ও কামিল মাদরাসায় শিক্ষক নিয়োগ, তদন্ত, মাদরাসার অধিভুক্তি ও অধিভুক্তি নবায়ন এবং কেন্দ্র নির্ধারণের ক্ষেত্রে অধিকতর স্বচ্ছতা আনয়ন ও অনিয়ম রোধ, দ্রুত একাডেমিক কাউন্সিল (এসি) ও সিন্ডিকেটের বৈঠক ডাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষকদের জন্য নির্ধারিত এককালীন আর্থিক সুবিধা প্রদানের বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়ন। তবে কোরাম পূর্ণ না হওয়ায় দুপুর দুটোর দিকে সভা পণ্ড হয়ে যায়।

জানা গেছে, দুপুর দুটো পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭৫ জন শিক্ষকের মধ্যে শিক্ষক সমিতির সভায় শুধুমাত্র ৯৫ জন শিক্ষক সাধারণসভায় উপস্থিত হয়ে স্বাক্ষর খাতায় স্বাক্ষর করেন। নিয়মানুযায়ী, শিক্ষক সমিতির সভায় কোরাম পূর্ণ হওয়ার জন্য মোট শিক্ষকের মধ্যে অন্তত একশত ২৬ জন শিক্ষক উপস্থিত থাকতে হবে। তবে দুপুর ২টা পর্যন্তও কোরাম পূর্ণ না হওয়ায় অবশেষে সভা পণ্ড হয়ে যায়। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫৮ জন শিক্ষকের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংখ্যা প্রায় ১৬৩ জন আর বিএনপিপন্থি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংখ্যা ১৯৫ জন। এছাড়া বর্তমান শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের মোট ১৫ জন সদস্যের মধ্যে একজন বাদে বাকি ১৪ জনই আওয়ামী পন্থি শিক্ষক। বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিএনপি-জামায়াত পন্থি প্যানেল বরাবর শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে জয় লাভ করলেও সর্বশেষ ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো আওয়ামী পন্থি ও প্রগতিশীল শিক্ষকদের প্যানেল শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে জয়লাভ করে। অথচ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আওয়ামী পন্থি দুইশত শিক্ষকদের অর্ধশতরও বেশি শিক্ষক সভায় আসেননি। এছাড়া বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকরাও সভায় উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকে।

সভায় না আসার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামীপন্থি শিক্ষক অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে, বছর শেষে সাধারণ সভা দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এছাড়া আগামী ২৩ নভেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এমতাবস্থায় সাধারণ সভায় কি সিদ্ধান্ত আসে সেটাও বলা মুশকিল। তাই সব কিছু ভেবেই আমি শিক্ষক সমিতির সভায় যোগদান থেকে বিরত থেকেছি।

বিএনপিপন্থি শিক্ষক অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, বিগত সময়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে যখন বিএনপি-জামায়াতপন্থি প্যানেল থেকে শিক্ষক সমিতি নির্বাচিত হয়েছে তখন সাধারণসভা ডাকলে আওয়ামী পন্থি শিক্ষকরা সভায় উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থেকেছে। আমরাও আজ সেটাই করেছি।

তবে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বলেন, সভার বিজ্ঞপ্তি যথাযথভাবে প্রচারিত হয়েছে এবং সভার এজেন্ডাগুলো শিক্ষকদের পেশাগত স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ছিলো। তারপরও কেন আসেননি তা ওইসব শিক্ষকরাই ভালো বলতে পারবেন যারা সভায় উপস্থিত হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহি পরিষদের একজন সদস্য বলেন, সভায় না আসার জন্য শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে প্ররোচিত করা হয়েছে বলে আমরা শুনেছি।