মায়ের জন্য খেলেন মুমিনুল : অনন্য কীর্তিতেও নির্লিপ্ত

স্টাফ রিপোর্টার: মায়ের জন্য তার মন সবসময় কাঁদে। মা যে অসুস্থ। বিছানায় নিথর পড়ে থাকেন। কিছু করতে পারেন না, তবে সব অনুভব করতে পারেন। বুঝতে পারেন। আর তাই ছেলে ভালো কিছু করলেই মায়ের চেহারায় ফুটে ওঠে খুশির আভা। ছেলে রান না পেলে মুখটা ভার হয়ে যায়। মায়ের অন্ধকার মুখ কোন ছেলেই বা সহ্য করতে পারে! মুমিনুল হক তাই প্রতিবার মাঠে নামেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞায়। মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। মুমিনুল খেলেন মায়ের জন্য। অবিশ্বাস্য ধারাবাহিতা তাই তার ব্যাটে। ক্যারিয়ার এই তো সেদিনের। সাকিব আল হাসানের ইনজুরিতে দলে জায়গা পেয়েছিলেন। সাকিবের শূন্যতা পূরণ করা-এ যে কঠিনতম চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ ভালোমতো উতরে গেছেন। শুরুতেই বলেছিলেন, এমন ভালো খেলতে হবে, যে সাকিব দলে ফিরলেও তাকে বাদ না দিতে পারেন নির্বাচকেরা। না, পারেননি। বরং মুমিনুল এখন বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে ধারাবাহিক, সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান।
মাত্রই গত বছর অভিষেক হয়েছে তার। ১২ টেস্টের ক্যারিয়ারে এরই মধ্যে চার সেঞ্চুরি আর সাত ফিফটি। টানা নয় টেস্টে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন। যে কীর্তিটা তার নাম লিখিয়ে দিয়েছে কুমার সাঙ্গাকারা, জ্যাক ক্যালিস, ম্যাথু হেইডেনদের মতো ক্রিকেটারের নাম। মুমিনুলের সামনে সুযোগ আছে এদেরও ছাড়িয়ে যাওয়ার। টানা ১০ টেস্টে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলার কীর্তি আছে শচীন টেন্ডুলকারের। সব মিলিয়ে রেকর্ডটা এবি ডি ভিলিয়ার্সের। সেটিও খুব বেশি দূরে নয়। আর টানা তিনটি ফিফটি করলেই সেই রেকর্ডটা হয়ে যাবে মুমিনুলেরও। অভিষেকের পর থেকে রেকর্ড কম গড়েননি মুমিনুল হক। কিন্তু কোনো কীর্তি গড়ার পর উচ্ছ্বাসে কখনই ভেসে যাননি তিনি। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং কিংবদন্তি ডন ব্র্যাডম্যানের পর টেস্ট ক্রিকেটে সেরা গড়ের অধিকারী হয়েও নিজের অবস্থান পাল্টাননি বাংলাদেশের এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের। শনিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে চতুর্থ দিনের খেলা শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসা মুমিনুল জানান, খেলতে থাকলে রেকর্ড হবে, এটা স্বাভাবিকভাবেই নেয়া উচিত। আপনি রেকর্ড করছেন, এই ব্যাপারটা মাথায় চলে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি চলে আসবে। আত্মতৃপ্তি চলে এলে ওই জিনিসটা আর হয় না। রেকর্ড নিয়ে মাথা না ঘামানোর ব্যাপারে নিজের অবস্থান অটুট আছে জানিয়ে মুমিনুল বলেন, আপনি সাফল্য পেতে শুরু করলে আপনার দায়িত্বটা আরও বেড়ে যাবে। আপনাদের প্রত্যাশাও বাড়ছে; মানুষজনের প্রত্যাশাও বাড়ছে। তবে অবশ্যই আমি আগের অবস্থানেই আছি। ৫ উইকেটে ৩১৯ রানে মুশফিকুরের বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করার সময় ১৩১ রানে অপরাজিত ছিলেন মুমিনুল। ১২ টেস্টের ২৩ ইনিংসে এই ব্যাটসম্যানের গড় এখন ৬৩.০৫। ২০টির বেশি ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ব্র্যাডম্যানের ৯৯.৯৪ রানের অবিশ্বাস্য গড়ের পরের স্থানটিতে উঠে এসেছেন মুমিনুল। ২০টির বেশি ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ৬০ এর ওপর গড় রয়েছে আর মাত্র তিন জনের- দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম পোলক (৬০.৯৭), ওয়েস্ট ইন্ডিজের জর্জ হেডলি (৬০.৮৩) ও ইংল্যান্ডের হার্বার্ট সাটক্লিফ (৬০.৭৩)। বর্তমান সময়ে ক্রিকেটারদের মধ্যে শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা ৫৮.৭৬ গড় নিয়ে সাতে এবং পাকিস্তানের ইউনুস খান ৫৩.৯৮ গড় নিয়ে ১৯ নম্বরে রয়েছেন। চট্টগ্রাম টেস্ট শুরুর আগে মুমিনুলের গড় ছিলো ৫৬.৬১। প্রথম ইনিংসে ৪৮ করায় তা একটু কমে। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত শতকে সবাইকে ছাড়িয়ে ব্র্যাডম্যানের পরের জায়গায় চলে যান ছোটোখাট এই ব্যাটসম্যান। ১২ টেস্টে চারটি শতক ও সাতটি অর্ধশতক রয়েছে মুমিনুলের। চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলে এভারটন উইকস, সুনীল গাভাস্কার, মার্ক টেইলরদের মতো কিংবদন্তিদের পাশে দাঁড়ান তিনি। তাদের প্রত্যেকেরই প্রথম ১২ টেস্টে ১১টি পঞ্চাশোর্ধ রানের ইনিংস রয়েছে। এনিয়ে টানা ৯ টেস্টে এক ইনিংসে কমপক্ষে অর্ধশতক পেলেন মুমিনুল।