ঝিনাইদহের মধুহাটি ইউনিয়নের বশিপুর গ্রামটি এখন শুধুই স্মৃতিতে

 

মনজুর আলম: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়নের বশিপুর গ্রামটি হারিয়ে গেছে। এক সময় এ গ্রামে কয়েক হাজার মানুষ বসবাস করতো। কিন্তু এই গ্রামে এখন আর কোনো মানুষ বসবাস করে না। চুরি-ডাকাতির হাত থেকে রেহাই পেতে গ্রামের লোকজন অন্যত্র অবস্থান নিয়েছে। গ্রামটি এখন মানুষশূন্য। সেখানে ফসলের আবাদ হচ্ছে। এ গ্রামে বাসিন্দারা ছিলো অধিকাংশ হিন্দু ঘোঁষও কাপালি সম্প্রদায়। মাত্র কয়েকটি পরিবার ছিলো মুসলমান। কিন্তু এখন আর কোনো মানুষ বসবাস করে না। গ্রামটি এখন শুধুই স্মৃতিতে।

জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়নের রয়েছে ২৩টি গ্রাম। যার মধ্যে একটি বশিপুর গ্রাম। গ্রামের লোকজন কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। তাদের মূল আয়ের উৎস ছিলো কৃষিকাজ। দেশ ভাগের সময় অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে গ্রামটিতে হিন্দু ঘোষ সম্প্রদায় পরিবারের লোকজনদের ওপর চরম নির্যাতন, চুরি, ডাকাতি, আর মহিলাদের সম্ভ্রমহানি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বসবাসরত লোকজন গ্রাম ছেড়ে অন্য স্থানে বসবাস করার সিন্ধান্ত নেয়। আস্তে আস্তে গ্রামের লোকজন শূন্য হতে থাকে। তবে দেশ স্বাধীনের পরও এই গ্রামের লোকজনের ওপর অত্যাচার কমেনি। সঙ্ঘবদ্ধ লোকজনের অত্যাচার আরো বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে গ্রামটি লোকশূন্য হয়ে পড়ে। থেকে যায় শুধু ঘরবাড়ির তৈরির উঁচু জায়গা আর গাছপালা। বর্তমানে গ্রামটিতে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। বশিপুর গ্রামটি এখন শুধুই স্মৃতি।

মাঠে কর্মরত বয়োবৃদ্ধ কাশেম আলী, আকবর আলীসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, এ গ্রামে অধিকাংশ হিন্দু পরিবার ঘোষ এবং কাপালি সম্প্রদায়ের ছিলো। হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার ছিলো মুসলমান। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আগেই নানা অত্যাচারে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। পরে অল্প কিছু লোক বসবাস করতো। কিন্তু স্বাধীনতার পর বাকি পরিবার অত্যাচারে টিকতে না পেরে অন্যত্র অবস্থান নেয়।

এ বিষয়ে ইউনিয়নের উপ-কর কমিশনার (নায়েব) তোফাজ্জেল হোসেন জানান, আমি এখানে আসার পর জেনেছি ওই গ্রামে কোনো লোকজন বসবাস করে না। তবে কী কারণে গ্রামের লোকজন চলে গেছে তা সঠিক বলতে পারবো না। দেখছি বশিপুর নামে গ্রাম আছে। কিন্তু গ্রামে কোনো লোকজন বাস করে না। সবই কৃষিজমি। পাশের গ্রামের লোকজন চাষাবাদ করছে। এ বিষয়ে মধুহাটি ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান তহুরুল ইসলাম জানান, তাদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে শুনেছি। যার কারণে বিভিন্ন গ্রামে চলে গেছে।

এ বিষয়ে বাজার গোপালপুর পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ সালাউদ্দিন জানান, আগে এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ছিলো না। আইনশৃঙ্খলার লোকজন সহজে যেতে পারতো না। এখন এলাকার যোগাযোগ ও আইনশৃঙ্খলা ভালো। তারা যদি গ্রামে এসে বসবাস করতে চায়, তাদের আর অত্যাচারিত হতে হবে না। প্রশাসন তাদের সাথে থাকবে এবং সকল ধরনের সহযোগিতা করবে।