চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে স্প্রে আতঙ্ক

বিশিষ্টজনেরা না ঘুমিয়ে দিচ্ছেন রাতপাহারা : পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নিরাপত্তার প্রশ্ন

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। মহল্লায় মহল্লায় ছড়িয়ে পড়েছে স্প্রে আতঙ্ক। খোদ জেলা শহরের মানুষ চুরি-ডাকাতির ভয়ে বিছানায় ঘুমোতে পারছে না। কয়েকটি এলাকার বিশিষ্টজনেরা কমিটি গঠন করে রাতপাহারা বসিয়েছেন। সেখানে পালাক্রমে প্রতিরাতে পাহারা চলছে। এক ধরনেরে স্প্রে ব্যবহার করে মানুষকে ঘুম পাড়িয়ে দুঃসাহসিক কয়েকটি চুরির ঘটনার পর এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে পুলিশ এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকায় রয়েছে বলে মহল্লাবাসীর অভিযোগ।

অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সাদেক আলী মল্লিকপাড়া, সবুজপাড়া, পলাশপাড়া ও মহিলা কলেজ পাড়ার অবস্থান সদর থানার এক কিলোমিটারের মধ্যে। কিন্তু এসব পাড়ায় স্প্রে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সম্প্রতি বিশিষ্ট কয়েকজনের বাড়িতে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটে। ঘরের গ্রিল ও জানালা কেটে ঘুমন্ত মানুষের মাথার কাছ থেকে আলমারি শোকেচ ভেঙে চুরির ঘটনায় এ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

সবুজপাড়ায় বসবাস করেন উপজেলা প্রকৌশলী ইলিয়াস হোসেন। দরজা-জানালা ভেঙে মাস দেড়েক আগে তার বাড়িতে দুঃসাহসিক চুরি হয়। চোরেরা নগদ টাকা, ১৮ ভরি ওজনের গয়নাগাটি ও মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। প্রকৌশলী ইলিয়াস হোসেনের ছেলে আরিফ হোসেন রানা বলেন ‘চুরির দিন আমাদের দু রুমে ছয়জন ঘুমিয়ে ছিলাম। চোরেরা আমার বেডের সাথে লাগোয়া আলমারি ও শোকেচ ভেঙে চুরি করলেও আমরা কেউ টের পাইনি। চোরেরা আমাদের রুমে এক ধরনের স্প্রে ব্যবহার করেছিলো। এ কারণে কয়েকদিন ধরে আমার ঘুমের ঘোর কাটছিলো না। একই পাড়ার বিশিষ্ট ব্যক্তি নাজির হোসেন অভিযোগ করে বললেন ‘৩০ অক্টোবর রাতে বাড়ির পাঁচিল টপকে ঢোকে চোরচক্র। তারা দোতলার গ্রিল কেটে ঘরে থাকা নগদ তিন লাখ টাকা ও সোনার গয়নাসহ মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। চোরেরা আমাদের ঘরে রাসায়নিক কোনো দ্রব্য স্প্রে করেছিলো বলে মনে হয়। সেই রাতে নাকে একরকম গন্ধ পাই। আমি ডায়াবেটিসের রোগী। প্রতিরাতে আমাকে ৩/৪ বার বাথরুমে যেতে হয়। কিন্তু সেইদিন রাতে স্প্রে করার কারণে রাতে একবারও টের পাইনি। এজন্য ঘরের আলমারি শোকেচ ভেঙে তছনছ করলেও আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি।’              চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের কয়েকটি পাড়ায় একের পর এক চোরদের তাণ্ডবে সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে পাড়ার নারী-পুরুষেরা। স্প্রে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সবার মধ্যে। তাই এলাকার বিশিষ্টজনেরা বাধ্য হয়ে দেড় শতাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে ‘চুরি-ডাকাতি সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করেছেন। প্রতিরাতে ২০ জন করে তারা রাতপাহারা দিচ্ছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন একাধিক আইনজীবী, প্রকৌশলী, ব্যাংক ম্যানেজার, কলেজের অধ্যক্ষ, কলেজের অধ্যাপক, রাজনীতিক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

কমিটির সভাপতি সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে জানান, এটা যদিও চুরি, কিন্তু চুরি বলা যাবে না। এগুলো ডাকাতির ঘটনা। ঘরে স্প্রে করে মানুষকে অচেতন বানিয়ে চুরি করলে এটা ডাকাতিই হয়। তিনি আরো বলেন ‘চোর-ডাকাতের উৎপাতে আমাদের রাতের ঘুম হারাম হতে বসেছে।’ চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ৫৭ বছর বয়সী অধ্যাপক আব্দুল ওয়াদুদ মালিক বলেন ‘আমরা খুব বিপদে আছি। এই বয়সে রাতে পাহারা দিয়ে দিনের বেলায় কলেজ করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু পুলিশের কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করছি না। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করতে বাধ্য হবো। চুয়াডাঙ্গা আদর্শ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক কামরুজ্জামান ও সোনালী ব্যাংক মুন্সিগঞ্জ শাখার ম্যানেজার শামসুজ্জামানসহ অনেকেই একই সুরে বলেন- ‘আমরা কেউই নিরাপদ নই, নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ পুলিশ প্রশাসন। আর কতোদিন এভাবে পাহারা দেবো?’

গত বুধবার রাতে চুয়াডাঙ্গার মুক্তিপাড়ার নবনির্মিত একটি বাড়িতেও চুরির ঘটনা ঘটেছে। চোরেরা বাড়ির গ্রিল কেটে ঘরে থাকা দামি দামি মেশিনসহ কিছু জিনিস নিয়ে গেছে বলে মহল্লাবাসী জানায়। একের পর চুয়াডাঙ্গা শহরে বড় বড় চুরির ঘটনায় হতাশা ব্যক্ত করেছে সচেতন মহল। তাদের অভিযোগ এতোসব চুরির ঘটনার পরেও পুলিশ এ পর্যন্ত কাউকেই আটক করতে পারেনি। এটা খুবই দুঃখজনক।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, ‘আমরাই উদ্যোগ নিয়ে কয়েকটি মহল্লায় পাহারার ব্যবস্থা করেছি। এলাকাবাসীর সাথে পুলিশও রাতে নিয়মিত টহল দিচ্ছে। তবে কোনো চোরকে না ধরতে পারলে স্প্রে বা কোনো কেমিকেল ছেটানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’