কুইজে অংশগ্রহণ বিজয়ের খবর এবং হেলিকপ্টারে আকাশে ওড়া

সব কিছু ঘটে গেলো যেন স্বপ্নের মতো

 

আলম আশরাফ: সব কিছু ঘটে গেলো যেন স্বপ্নের মতো। মাথাভাঙ্গার বিশেষ কুইজে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের সৌজন্যে হেলিকপ্টার ভ্রমণ শেষে বাড়ি ফিরে কুইজ বিজয়ীদের তৃপ্তিমাখা অভিন্ন উক্তি। বা! বুঝতেই পারেনি অতো অল্প সময়ে ঢাকায় যাওয়া যায়। মাত্র ৪০ মিনিট। এর মধ্যেই উঁচুতে ওঠা, আকাশে ওড়া এবং মাটিতে নামা।

আকাশে ওড়ার শুরুতে কেমন লাগলো? হেলিকপ্টারে ওঠার আগে ছিলো টান টান উত্তেজনা। উঠলাম। উড়লো। বুকের ধড়ফড়ানিতে বুঝতেই পারলাম না আসলে আকাশে ওড়ার সময় অনুভূতিটা কেমন ছিলো। মুখে মৃদু হাসি আর অবয়বে আকাশ জয়ের উল্লাস নিয়ে এরকমই অনুভূতি ব্যক্ত করলেন আলমডাঙ্গা খাসকররা কাবিলনগরের মুহাম্মদ হাসান হাবীব। তিনি অবশ্য খাসকররা বাজারেই বসবাস করেন। কাজি মঞ্জুর হিসেবেই পরিচিত।

গতপরশু শুক্রবার দুপুরে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লাইফ স্টাইল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালার সৌজন্যে মাথাভাঙ্গার বিশেষ কুইজ বিজয়ীদের হেলিকপ্টারযোগে চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকা ভ্রমণের সুযোগ দেয়া হয়। দুটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দাতা প্রায় ১৪ হাজারের মধ্যে যে তিনজন ভাগ্যবান হিসেবে বিজয়ী হন তাদের মধ্যে হাসান হাবীব ওরফে কাজি মঞ্জুর এলাকায় বিয়ের মধ্যস্থতাসহ বিয়ে পড়িয়েই সংসার চালান। চুয়াডাঙ্গা পলাশপাড়ার মানিক মিয়ার ছেলে সুমন কোর্ট প্রাঙ্গণের চা দোকানি। আর ইমরান হোসেন? তিনি রঙ মিস্ত্রি। কাঠের আসবাবপত্রে রঙ করেন। হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা ভ্রমণের জন্য কুইজ বিজয়ের খবর বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে মোবাইলফোনে জানান মাথাভাঙ্গার ম্যানেজার হাসান আখতার সিদ্দিক পিন্টু। এ খবর পেয়ে কার কী অনুভূতি‍, কে কী ভাবলেন, রাতটাই বা কাটলো কীভাবে?

হাসান হাবীব মঞ্জুর বললেন, এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে ৪ জনের সংসার। নুন আনতে পান্তা ফুরায়। ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও কখনোই ভাবিনি কোনো দিন হেলিকপ্টারে চড়ে আকাশে উড়বো। বহু দিন ধরে মাথাভাঙ্গা পড়ি। কুইজ চোখে পড়লো। জবাবটা জানতে বেশ কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করলাম। কুইজের নির্দেশনা অনুযায়ী মোবাইলফোন নম্বরসহ নাম ঠিকানা লিখে মাথাভাঙ্গা দফতরে পাঠিয়ে দিলাম। তখনও ভাবিনি হেলিকপ্টারে ওঠার সুযোগ হবে। বৃহস্পতিবার রাত তখন সম্ভবত সোয়া ১০টা। মোবাইলফোন বাজলো। রিসিভ করতেই জানানো হলো, মাথাভাঙ্গা অফিস থেকে ম্যানেজার বলছি। আপনি বিশেষ কুইজে অংশ নিয়ে শুক্রবার দুপুরে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। বিজয়ী হয়েছেন। সকাল সাড়ে ১১টার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা ফেরিঘাট রোডস্থ দৈনিক মাথাভাঙ্গা কার্যালয়ে পৌঁছুতে হবে। সাথে নিতে হবে ভোটার আইডি কার্ড। এ খবর পেয়ে আর কী ঘুম আসে? বাড়িতে বাড়তি টাকা দূরের কথা, একবেলার বাড়তি চালও নেই। এ অবস্থায় ঢাকায় যাওয়ার কথা স্ত্রীকেই বা বলবো কীভাবে! একদিকে হেলিকপ্টারে চেপে আকাশে উড়ার সুযোগ, অন্য দিকে অভাব। যাই হোক। সকালে বন্ধুদের নিকট থেকে কিছু টাকা নিয়ে স্ত্রীকে বুঝিয়ে সুজিয়ে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে ছুটলাম। হেলিকপ্টার উঠার আগেই দিলীপ কুমার আগরওয়ালার মা হাসি মুখি কিছু টাকা দিলেন। টাকাটা হাতে পেয়ে মনের সুখেই হেলিকপ্টারে উঠলাম। সত্যি বলতে কি ওপরে ওঠার সময় ভয়ে ভয়ে অনুভূতিটা উপলব্ধিই করতে পারেনি। যখন হেলিকপ্টার সোজা চলচে। নিচের দিকে তাকিয়ে রাস্তা ঘরবাড়ি চেনার চেষ্টা করলাম। হলো না। ভাবলাম পদ্মা নদী তো পার হতে হবে। নদী দেখে বুঝবো আমরা কতোদূর। অবাক হলেও সত্য, অতোবড় নদী দেখেও তেমন মালুম করতে পারলাম না। ঢাকা তেঁজগাও এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিলেন। সাথে যাওয়া শুকনাল ভাই বললেন কোথায় যাবেন? বললাম ভাবিনি। দেখি কী করা যায়। রাতে রয়েল পরিবহনযোগে চুয়াডাঙ্গায় ফিরে শনিবার বাড়ি পৌছেছি। ঘুম থেকে উঠেই ফোন পেলাম আপনার।

চুয়াডাঙ্গা কোর্ট এলাকার চা দোকানি সুমন। বৃহস্পতিবার রাতে যখন মাথাভাঙ্গার ম্যানেজার কুইজ বিজয়ের কথা জানালেন তখন খানিকক্ষণ থেমে ছিলাম। ভাবছিলাম সত্যি তো? জামাকাপড় যা আছে তাতেই চলবে। হেলিকপ্টারে চড়বো। এক জোড়া কেডস না হলে হয়? সকালেই এক জোড়া কেডস কিনলাম। ঢাকায় যাবো কী করবো, তা বুঝতে পারছিলাম না। মাথাভাঙ্গা অফিসে পৌঁছে পেলাম অপর দু বিজয়ীকে। তাদের সাথে কথা বলে টাউন ফুটলমাঠে। কিছু টাকা হাতে পেয়ে হেলিকপ্টারে উড়ে ঢাকায় গেলাম। সময়টা যে অতো দ্রুত কেটে যাবে বুঝতেই পারিনি। কোর্টপাড়ার ইমরানেরও অভিন্ন উক্তি। তিনি বললেন, আসবাবপত্রে রঙ করি। টানাটানির সংসার। জীবনেও ভাবিনি হেলিকপ্টারে ওঠার সুযোগ হবে। সুযোগ করে দেয়ার জন্য মাথাভাঙ্গাকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডকে। তিনজনই গতপরশু রাতে চুয়াডাঙ্গায় ফেরেন। দুজন ফেরেন চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সযোগে। আর দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা সাহিত্য সংসদের সভাপতি শুকনাল? তিনি বরাবরই ভোজনরসিক। ফলে না ফিরে ঢাকাস্থ মেয়ের বাসায় মাথা যন্ত্রণার পিল খেয়ে ভুড়িভোজে।

হেলিকপ্টারে আকাশ পথে ঢাকায় আসা-যাওয়ার খরচ কেমন? খরচের চেয়ে ইচ্ছে পূরণের মতো মানসিকতা অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ। পাইলট এরকমই মন্তব্য করে খরচার বিষয়টি আর খোলসা করেননি। তবে অন্যজন বলেছেন, ৪ সিটের হেলিকপ্টারে অর্ধলাখ খরচ তো হবেই। খরচ যাই হোক। কুইজে অংশ নিয়ে স্বপ্নের মতো একদিনের ভ্রমণ তো হলো? এ ভ্রমণের ঢেকুর নাতি-নাতকুরিদের সামনেও তোলা যাবে। বলা যাবে গল্প।