স্ত্রীর সাথে আ. লীগ নেতার পরকীয়া নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনের খবর প্রকাশ : জীবননগরে মাথাভাঙ্গা উধাও

 

জীবননগর ব্যুরো: গতকাল শুক্রবার জীবননগর থেকে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পাঠকদের হাতে পৌছুনো যায়নি। পত্রিকা চুরি বা ছিনতাই হয়েছে। অনেকের অভিমত, মাথাভাঙ্গা জীবননগরে পৌছুনোর আগেই তা গায়েব করা হয়েছে। তাই গ্রাহকদের হাতে পৌঁছুইনি তাদের প্রিয় দৈনিক মাথাভাঙ্গা। ‌‘‌জীবননগরে স্ত্রীর পরকীয়া নিয়ে স্বামীর সাংবাদিক সম্মেলন’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশ করায় পত্রিকাটি তাদের রোষানলে পড়ে বলে অভিমত স্থানীয় অধিকাংশ পাঠকূলের।

বিক্রয় প্রতিনিধি তথা হকারদের হাতে পৌঁছুনোর আগেই বাস থেকে পত্রিকার ৩টি ব্যান্ডেল চুরি হয়। অভিযোগ, পত্রিকার বান্ডিলগুলো কৌশলে গোপনে নামিয়ে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও বাসস্ট্যান্ড থেকে তুলে নিয়ে যায় হয় অপর এক পত্রিকার আকাশ হকারকে। কিন্তু শেষে পর্যন্ত তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। গতকাল জীবননগর জুড়ে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পাঠকদের হাতে পৌছুতে না দেয়ার প্রসঙ্গ ছিলো প্রধান আলচ্য বিষয়। পত্রিকা না পৌছুলোও পত্রিকায় প্রকাশিত আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক পৌর কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলমের সাথে সাবেক মহিলা কাউন্সিলর মুসলিমা খাতুনের পরকীয়ার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলনের খবর ছিলো মানুষের মুখে মুখে। অনেকে খবর পড়তে বিভিন্নভাবে দৈনিক মাথাভাঙ্গা দর্শনা, কোটচাঁদাপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করেন।

মুসলিমার সাবেক স্বামী বখতিয়ার রহমান বৃহস্পতিবার রাতে জীবননগর থানার সামনে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে তার স্ত্রী এ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেন। পত্রিকা পাঠকদের হাতে সুহালে না পৌছুনোর প্রেক্ষিতে পাঠকদের অনুরোধে সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি পুনরায় প্রকাশিত হলো- জীবননগর রাজনগরপাড়ার মৃত আজাহার ডাক্তারের ছেলে বক্তিয়ার রহমান সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন- ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার ভৈরবা গ্রামের লুৎফর রহমানের মেয়ে মুসলিমা খাতুনকে সে বিয়ে করে। তাদের ১৬ বছরে দাম্পত্য জীবনে দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। ২০০৫ সালের জীবননগর পৌরসভা নির্বচানে স্ত্রী মুসলিমা খাতুন পৌরসভার সংরক্ষিত ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। পৌরসভায় কাউন্সিরল নির্বাচিত হওয়ার পর সে অপর কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। তাদের রঙ্গলীলার বিষয়টি শহরবাসীর কাছে ওপেন সিক্রেট। স্বমী ঘটনাটি জানার পর এ পথ থেকে স্ত্রী মুসলিমাকে সরিয়ে আনতে নানাভাবে চেষ্টা করেন। কিন্তু তাকে ফেরাতে ব্যর্থ হন। এ সময় সে ক্ষমতাসীন দলের কথিত পাতি নেতা পরকীয়া প্রেমিকের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে নানাভাবে হুমকিধামকি দিতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যার অপচেষ্টা করে। খাবারের সাথে ঘুমের বড়িসহ জীবনঘাতী কবিরাজি ওষুধ মিশিয়ে দেয়। কিন্তু ভাগ্যগুণে তিনি বেঁচে যায়। এর আগে ওই পরকীয়া জুটি চক্রান্তের মাধ্যমে মাঠের ৪ বিঘা জমি বিক্রি করে থানাপাড়া মসজিদের সামনে দ্বিতল একটি বাড়ি নির্মাণ করতে বাধ্য করে। নির্মাণের পর ওই বাড়ি আত্মসাৎ করতে তার স্ত্রী পরকীয়া প্রেমকিকে দিয়ে স্বামীকে নানাভাবে হুমকিধামকি দেয় এবং একপর্যায়ে বাড়িটি দু মেয়ের নামে রেজিস্ট্রি করে দিতে বাধ্য করে। বাড়ি রেজিস্ট্রির পর মুসলিমা তাকে তালাকপ্রদান করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এরপর হয়রানি করার উদ্দেশে তার বিরুদ্ধে একে একে ৫টি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। তার শিশু সন্তান দুটিকে পিতৃ¯স্নেহ থেকে বঞ্চিত করে এবং তাকে বাড়ি ছাড়া করে নিয়মিত তার ওই বাড়িতে অনৈতিক কাজকর্ম করতে থাকে যা চোখের সামনে নিত্য দিন দেখতে দেখতে আজ তিনি ক্লান্ত বলে সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ তুলে ধরেন। সবশেষে তিনি বলেন দু সন্তান ও দ্বিতল বাড়ি থাকলেও স্ত্রীর চক্রান্তে আজ আমি গৃহহারা, সন্তান হারা। আমার সুখের সংসার তছনছ করে দিয়েছে জাহাঙ্গীর। দোতলা বাড়ি থাকতেও আমি আজ একটি ঝুপড়ি ঘরে কোনো রকমভাবে দিন গুজার করছি। আর এ সবই হয়েছে সাবেক কাউন্সিলর ওই কথিত পাতি নেতার কারণে। আমি আজকে এ সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারে নিকট তাদের উপযুক্ত বিচার দাবি করছি।

সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জীবননগর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমাকে ইঙ্গিত করে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক। ৪ বছর ধরে মুসলিমার সাথে আমার কথা হয় না। পরকীয়া প্রেমের আনিত অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। আমার বিরুদ্ধে যদি এমন অভিযোগ আনা হয় তবে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

সাংবাদিক সম্মেলনে আনিত অভিযোগ সম্পর্কে মুসলিমা খাতুন বলেন, জাহাঙ্গীর আলমের সাথে আমার পরকীয়া প্রেমের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তার সাথে আমার পরকীয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এছাড়াও তাকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করা এবং সন্তানদের দেখতে না দেয়ার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তাও মিথ্যা। আমার বড় মেয়ে অনার্সের ছাত্রী এবং ছোট মেয়ের বয়স ১১ বছর। তারা আর শিশু নেই। তাদেরকে পিতার সাথে দেখা করতে দেয়া হয় না এমন অভিযোগ হাস্যকর। দায়িত্ববান পিতা হলে অবশ্যই তারা তার সাথে দেখা করতো।

Leave a comment