যশোরে শোকাবহ পরিবেশে সুমির দাফন

সাবেক এমপির ছেলে হুমায়ুন সুলতান সা’দাফকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডের আবেদন

 

স্টাফ রিপোর্টার: স্বজনদের আহাজারি আর শোকাবহ পরিবেশের মধ্যদিয়ে শুক্রবার রাতে শামারুখ মেহজাবিন সুমির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। যশোর-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগ নেতা খান টিপু সুলতানের পুত্রবধূ সুমির ঝুলন্ত লাশ গত বৃহস্পতিবার ঢাকার ধানমণ্ডির বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তার লাশ যশোরের বাড়িতে পৌঁছুলে সেখানে স্বজন কান্নায় হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

শামারুখ মেহজাবিন সুমি যশোর শহরের আরবপুর এলাকার প্রকৌশলী নুরুল ইসলামের মেয়ে যশোর-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগ নেতা খান টিপু সুলতানের ছেলে হুমায়ুন সুলতান সা’দাফের স্ত্রী। সুমির পিতার অভিযোগ, তাকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন পিটিয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ঢাকায় পুলিশ স্বামী হুমায়ুন সুলতানকে আটকও করেছে। গতকালই তাকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। পুত্রবধূ শামারুপ মাহজাবিন কনা (২৬) নিহতের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতানকে গ্রেফতার করা হতে পারে। ধানমণ্ডি থানার ওসি আবু বকর সিদ্দীক এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, রাজধানীর ধানমণ্ডির ৬ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাসায় বসবাস করেন আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এ সংসদ সদস্য। ওসি জানান, আদালতের নিদের্শনা পেলেই তাকে গ্রেফতার করা হবে।

হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাবেক এমপি খান টিপু সুলতান। তিনি দাবি করেছেন সুমি আত্মহত্যা করেছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সুমির মরদেহ আরবপুর মোড়ের বাসভবনে এসে পৌঁছায়। লাশ বাড়িতে পৌঁছুলে স্বজনদের মাঝে কান্নার রোল পড়ে যায়। এলাকার শ শ নারী-পুরুষ সুমিকে শেষবারের মতো দেখতে বাড়িতে ভিড় জমান। এশার নামাজের পর সুমির নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। পরে কারবালা কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

নিহত সুমির চাচা আমিনুল ইসলাম বলেন, ২০১২ সালের ২৬ ডিসেম্বর যশোরের সাবেক এমপি খান টিপু সুলতানের ছেলে হুমায়ুন সুলতান সা’দাফের সাথে শামারুখ মেহজাবিন সুমির বিয়ে হয়। সুমি পেশায় চিকিৎসক। আর হুমায়ুন সা’দাফ আইনজীবী। সুমি এফসিপিএস পরীক্ষা দিতে চাইলেও তাকে বারবার বাঁধা দেয়া হয়েছে। শ্বশুর-শাশুড়ি কখনো চাইতো না সুমি এফসিপিএস কোর্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করুক। বিভিন্ন সময়ে তার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার পরিকল্পিতভাবে শ্বশুর-শাশুড়ি সুমিকে পিটিয়ে হত্যা করে বাথরুমে ঝুলিয়ে রাখে। পরে উদ্ধার করে রাজধানীর সেন্ট্রাল হসপিটালে নেয়া হয়।

সুমির পিতা নুরুল ইসলাম বলেন, শ্বশুর-শাশুড়ি সুমির মাথায় আঘাত করলে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর তাকে রাজধানীর ধানমণ্ডি সেন্ট্রাল হসপিটালে ভর্তি করা হয়। পরে তার মৃত্যু হয়েছে। মেয়েটি এমবিবিএস পাস করে এফসিপিএস কোর্স করতে চেয়েছিলো। কিন্তু তার শ্বশুর-শাশুড়ি কখনো রাজি হয়নি। এ ঘটনার জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতেই নুরুল ইসলাম ধানমণ্ডি থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ সুমির স্বামী হুমায়ুন সুলতানকে আটক করেছে।

অপরদিকে সাবেক এমপি খান টিপু সুলতান সাংবাদিকদের জানান, দুপুরে সুমি বাথরুমে আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনার পর তার পরিবারের স্বজনদের জানানো হয়েছে। থানায় নিজে খবর দিয়েছি। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।