প্রশাসনকে জানানোর পরও ঠেকানো গেলো না ৫ম শ্রেণির ছাত্রী মুনিয়ার বাল্যবিয়ে

এলাকার সচেতন মহলের প্রশ্ন এ লজ্জা কার?

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: প্রশাসনকে জানানোর পরও ঠেকানো গেলো না ৫ম শ্রেণির ছাত্রী মুনিয়ার বাল্যবিয়ে। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঢাকঢোল আর আতশবাজি ফুটিয়ে পূর্ব নির্ধারিত দিনে গতকাল শুক্রবার সম্পন্ন হয়েছে দামুড়হুদার গোপিনাথপুরের আদালত হোসেনের মেয়ে গোকুলখালী কওমি মাদরাসার ৫ম শ্রেণির ছাত্রী মুনিয়ার বাল্যবিয়ে। এ ঘটনায় প্রশাসনের প্রতি ধিক্কার জানিয়েছে মর্মাহত মুনিয়ার সহপাঠীরা। প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার সচেতনমহল। আইন প্রয়োগকারীদের জানানোর পরও যদি বাল্যবিয়ে বন্ধ হলো না কেন। তাদের জিজ্ঞাসা এ লজ্জা কার? দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানার ওসি ওই বিয়ে হয়নি বলে জানিয়েছেন। দুঃখ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান।

উল্লেখ্য, দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের আদালত হোসেনের মেয়ে ৫ম শ্রেণির ছাত্রী মুনিয়ার সাথে একই ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামের বদার ছেলে শিপনের বিয়ের আয়োজন করা হয়। গতকাল শুক্রবার ছিলো ওই বিয়ের পূর্ব নির্ধারিত দিন। বিষয়টি জানার পর মুনিয়ার সহপাঠীরা ওই বাল্যবিয়ের বিষয়ে প্রতিবাদ জানায় এবং বিয়ে বন্ধের জন্য দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদুর রহমানকে অনুরোধ করে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওই বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে জুড়ানপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও পুলিশ প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন এবং ওই বাল্যবিয়ে হবে না বলেও মুনিয়ার সহপাঠীদের আশ্বস্ত করেন।

এলাকাবাসীরা জানায়, খুব ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন করা হয়। বরযাত্রীরাও আসেন বাস নিয়ে। খাওয়া-দাওয়া সবই হয় প্রকাশ্যে আর বিয়ে পড়ানো হয় অনেকটা চুপিসারে। এলাকার সচেতনমহল দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানার ওসির প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, পার্শ্ববর্তী আলমডাঙ্গা ও মেহেরপুর গাংনী উপজেলায় ইউএনও সশরীরে বিয়ে বাড়িতে গিয়ে বিয়ে বন্ধ করাসহ বাল্যবিয়ের সাথে জড়িতদের জেল-জরিমানা করছেন। যা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি। তারা আরো বলেন, ওই সমস্ত উপজেলায় ইউএনও বিয়ের আধঘণ্টা আগে খবর পেয়ে বিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছেন আর দামুড়হুদায় বিয়ের একদিন আগে জানিয়েও বিয়ে বন্ধ হলো না। তাদের ধারণা ইউএনও এবং ওসি যদি ওই বিয়ে বাড়িতে যেতেন তাহলে অবশ্যই বিয়ে বন্ধ হতো। ইউএনও এবং ওসিকে ঘটনাস্থলে আসার জন্য বারবার বলা হলেও রহস্যজনক কারণে ওনারা এলেন না। এ লজ্জা প্রশাসনের। এ লজ্জা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পুলিশের। তারা আরো বলেন, এ ঘটনার পর এলাকায় দিনকে দিন বৃদ্ধি পাবে বাল্যবিয়ের সংখ্যা। ফলে ভবিষ্যতে আর বাল্যবিয়ে রোধ করা সম্ভব হবে না। এ লজ্জা সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের। এ বিষয়ে সংশ্রিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমার হাতে তো কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। আমি তাদের মৌখিকভাবে নিষেধ করেছিলাম। তারপরও যদি তারা বাল্যবিয়ে দেন তাহলে আমার কি করার আছে। গোকুলখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হক বলেন, গত বৃহস্পতিবার স্কুল ছুটির পর আমি বাড়ি চলে যাওয়ার সময় স্থানীয় কয়েক মাতবর আমার কাছে গিয়ে ওই মেয়ের চাকরির কথা বলে বয়স বাড়িয়ে ১৮ বছর করে একটি প্রত্যয়নপত্র নেন। তারা যে ওই মুনিয়ার বিয়ের জন্য বয়স বাড়িয়ে প্রত্যয়ন নিচ্ছেন তা বুঝতে পারেনি।

এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদুর রহমান বলেন, আমি থানার ওসির কাছ থেকে জেনেছি ওই বিয়ে হচ্ছে না। দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি জানার পরপরই আমি পুলিশ পাঠিয়ে ওই পরিবারের লোকদের নিষেধ করেছি। শুনেছি ওই বাড়িতে বিয়ে হয়নি। তারা যদি গোপনে অন্য কোথাও বিয়ে পড়ায় তাহলে আমরা কি করবো।