স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকার দেশের উন্নয়নকাজ এগিয়ে নিয়ে চলেছে। উড়াল সড়ক নির্মাণ করে যানজট নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দুর্ঘটনা কমাতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। গতকাল দুপুরে মুরাদপুরে উড়াল সড়কের ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, আজ থেকে এ ফ্লাইওভারের নাম হলো আকতারুজ্জামান চৌধুরী উড়াল সড়ক। এটি শহরের মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত এখন হবে। যার দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছে ৫ কিলোমিটার। তিনি বলেন, মুরাদপুর থেকে ওয়াসা জংশন পর্যন্ত তিন কিলোমিটার ফ্লাইওভারের মধ্যে থাকবে ৪টি লেন। আপনারা দেখেছেন ঢাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণের ফলে যানজট অনেক কমে গেছে। চট্টগ্রামেও তার ব্যতিক্রম হবে না। এ শহরের পরিবর্তন আরও হবে।
তিনি বলেন, আমরা দেশকে উন্নয়নে নিয়ে যাওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, সেই অনুযায়ী কাজ করছি। মানুষের আর কষ্ট থাকবে না। এ দেশের মানুষ জঙ্গিবাদকে কখনও সমর্থন দেবে না। যারা তাদের প্রশ্রয় দিয়েছিল তাদেরও কখনও সমর্থন করবে না। শেখ হাসিনা আকতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার বন্দরনগরীর সবচেয়ে বড় উড়াল সড়ক হবে বলে ঘোষণা দেন।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ৪৬২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এ ফ্লাইওভার নির্মাণ হচ্ছে। আমি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে বলবো উড়াল সড়কটি যেন সবার জন্য নিরাপদ হয় সেদিকে পদক্ষেপ নিতে। পর্যায়ক্রমে এর সঙ্গে বিমানবন্দর সড়কের সংযোগ ঘটানো যায় কিনা তা নিয়ে ভাবছি। প্রধানমন্ত্রী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ভবিষ্যতে ৪ লেন থেকে ৬ লেনে হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, যানজট কমাতে ও নিরাপদে বাড়ি ফিরতে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি আমরা ৪ লেনে করছি। কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। সামনে আরও বাড়ানো যায় কিনা দেখছি।
ইবিআরের ৩ ইউনিটকে পতাকা প্রদান: এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের (ইবিআর) তিনটি ইউনিটকে কর্মদক্ষতা, কঠোর অনুশীলন ও কর্তব্যনিষ্ঠা এবং দেশসেবার স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় পতাকা প্রদান করেছেন। এ উপলক্ষে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে বাংলাদেশ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে এক কুচকাওয়াজে ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী তিন ইউনিটের সদস্যদের দক্ষতা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। জাতীয় পতাকা প্রাপ্ত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের (ইবিআর) তিনটি ইউনিট হল-রংপুর সেনানিবাসের ৩৪ ইস্ট বেঙ্গল, শহীদ সালাউদ্দীন সেনানিবাসের ৩৬ ইস্ট বেঙ্গল ও জালালাবাদ সেনানিবাসের ৩৮ ইস্ট বেঙ্গল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় পতাকা হলো জাতির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক। আর আবহমানকাল থেকেই যুদ্ধের ময়দানে প্রতিটি জাতির জাতীয় মর্যাদার প্রতীক পতাকা বহন করার রীতি প্রচলিত আছে। জাতীয় পতাকা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যে কোন ইউনিটের জন্য একটি বিরল সম্মান ও গৌরবের বিষয়। আজ সেই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক জাতীয় পতাকা আপনাদের হাতে তুলে দেয়া হলো। এ বিরল সম্মান ও গৌরব অর্জন করায় তিনি ৩৪, ৩৬ ও ৩৮ ইস্ট বেঙ্গলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্মদক্ষতা, কঠোর অনুশীলন এবং কর্তব্যনিষ্ঠার স্বীকৃতি হিসেবে যে পতাকা আজ আপনারা পেলেন, আমি আশা করি তার মর্যাদা রক্ষার জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকারে আপনারা সব সময় প্রস্তুত থাকবেন। আপনাদের প্রতি জাতির এ আস্থা অটুট রাখার জন্য আপনারা সর্বদা সচেষ্ট থাকবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বড় রেজিমেন্ট ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট পদাতিক বাহিনী হিসেবে তাদের নিয়মিত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে। পাশাপাশি এ রেজিমেন্টের সদস্যদের যখনই তলব করা হয়েছে, তখনই বেসামরিক সরকারকে সহায়তা করছেন এবং বিশ্ব পরিমণ্ডলেও তাদের কর্মদক্ষতার স্বাক্ষর রেখে উজ্জ্বল করে তুলছেন দেশের ভাবমূর্তি।
১৯৭১ সালের মার্চে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের ওপর সামরিক অভিযানের জবাবে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পাঁচটি ব্যাটালিয়ন বিদ্রোহ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে যোগ দেয় এবং দেশকে পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্ত করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
প্রধানমন্ত্রী প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া তাকে অভ্যর্থনা জানান। জাতীয় পতাকা প্রদান অনুষ্ঠান উপলক্ষে সেন্টারে ইবিআরের তিনটি ইউনিটের একটি মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ হয়। এতে কমান্ড দেন লে. কর্নেল মোহাম্মাদ বশিরুল হক।
প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন। এ সময় জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, নৌবাহিনীর প্রধান, ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, কূটনীতিক এবং বিশিষ্ট বেসামরিক ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।