পরীক্ষার ফরম পূরণের নামে বাণিজ্য বন্ধে পদক্ষেপ জরুরি

 

দ্রুত আখের গোছাতে চাও তো আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাও- ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠান, সমাজের নানা স্তরেই এ বেপরোয়া ভাব। মানুষ গড়ার আঙিনা যে শিক্ষাকেন্দ্র, সেখানেও পাঠদানের নামে চলে ‘বাণিজ্য’। আমাদের অনেক ধরনের ব্যর্থতার একটি হচ্ছে সব শিশু-কিশোরকে ধারণ করার মতো সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব। এ সুযোগে অনেকে পসরা সাজিয়ে বসে! তারা ভর্তি থেকে পরীক্ষা- নানা সময় অভিভাবকদের ওপর চালায় ফি’র খড়গ। কর্তৃপক্ষেরও দায় যেন নির্দেশনা দান পর্যন্তই। এবার এসএসসি পরীক্ষার ফি ঢাকা বোর্ড নির্ধারণ করেছে এক হাজার ৪০০ টাকা, নেয়া হচ্ছে ১১ হাজার টাকা পর্যন্ত; আর কোন দেশে এমনটি সম্ভব? কয়েক বছর ধরেই এমনটি চলছে। আর যে নির্দেশ মানা হয় না, লঙ্ঘনের পর ব্যবস্থা নেয়া হয় না- তা জারিরই বা দরকার কী! অভিযোগ জানাতে বোর্ডে যাবেন অভিভাবক? সেখানেও হয়রানি। গতকাল একটি সংবাদ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয়, বর্ধিত ফি দানে ব্যর্থ এক অভিভাবক ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দপ্তরে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা বসে থেকেও কারো সাক্ষাৎ পাননি। বাধ্য হয়ে তিনি লিখিত অভিযোগ জানিয়ে ঘরে ফেরেন। তিনি শেষ পর্যন্ত ফি’র টাকা জোগাড় করতে না পারলে তার সন্তানের হয়তো পরীক্ষাই দেয়া হবে না। এক্ষেত্রে সরকারের শিক্ষাবোর্ড ও সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ কী জবাব দেবে! ফি বেধে দেয়া যে বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো, তা খোদ ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক স্বীকার করে বলেছেন, এমপিওভুক্ত না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় না। এককভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করাটা কঠিন। এ অসহায়ত্ব ব্যক্ত করে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক, উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ও বোর্ডগুলো নিয়ে নজরদারি কমিটি গঠনেরও প্রস্তাব করেছেন। প্রস্তাবটি বাস্তবসম্মতই শুধু নয়, সময়েরও দাবি। বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক, ছাত্রীদের বিনা বেতনে অধ্যয়নের মতো কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার যুগান্তকারী কাজ করেছে। তার বহুমুখি ফলও এসেছে। কিন্তু শিক্ষা ক্ষেত্রে এখনো অনেক অব্যবস্থাপনা রয়ে গেছে। এসব দূর করা না গেলে শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত মান কখনোই অর্জন করা সম্ভব হবে না। নীতিনির্ধারকরা বিষয়গুলো ভেবে দেখবেন কি? আর পরীক্ষার ফরম পূরণের নামে বাণিজ্যটিও আশা করি কর্তৃপক্ষ বন্ধ করবে।