অপরাধ প্রবণমুক্ত সমাজ গঠনে পুলিশকে হতে হবে আস্থাশীল

 

সমাজে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে? নাকি জনসংখ্যা অনুপাতে চুরি-ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের সংখ্যা এখনও স্বাভাবিক সূচকে? জনসংখ্যা এবং পুলিশের অপ্রতুলতা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে যতোই যুক্তি থাকুক, চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরি আতঙ্ক দিনদিন যে চরমে পৌঁছুছে তা অস্বীকার করা যায় না। তা না হলে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সবুজপাড়াসহ পার্শ্ববর্তী মহল্লার বাসিন্দাদের পালাক্রমে রাত জেগে পাহারা দিতে হচ্ছে কেন?

 

‌            গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় একাধিক ডাকাতির সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার নতিপোতায় সশস্ত্র ডাকাতি। ডাকাতির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছুলে ডাকাতদলের বোমা নিক্ষেপ। পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়েছে। ডাকাতদলকে অবশ্য ধরতে পারেনি। পুলিশ আসছে, আসবেই, এ বিশ্বাসে দৃঢ়তা থাকলে ডাকাতির শিকার পরিবারগুলোসহ প্রতিবেশীদের ভূমিকা আরো শক্ত হতো। পৃথক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুষ্টিয়ার একটি পশুহাট থেকে যাত্রীবাহী বাসযোগে মাগুরা ও ঝিনাইদহের ১১জন গরুব্যবসায়ী ফেরার পথে দুঃসাহসিক ডাকাতির শিকার হয়েছেন। যাত্রীবেশে থাকা ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে গরুব্যবসায়ীদের কাছে থাকা সেলফোন তথা মোবাইলফোনসহ নগদ ১০ লাখ টাকা ডাকাতি করেছে। ডাকাতদল ডাকাতির পর গরুব্যবসায়ীদের রাস্তার পাশের খালের পানির মধ্যে ফেলে সটকে পড়ে। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি ফেরালেও তাদের ডাকাতি হওয়া টাকা উদ্ধার করে দিতে পরেনি পুলিশ।

 

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা এক সময় রক্তাক্ত জনপথ হিসেবে চিহ্নিত ছিলো। চরমপন্থি নামের অস্ত্রধারীরা পাল্টাপাল্টি খুন-খতমের মধ্যদিয়ে সাধারণ মানুষ জিম্মি করে যা ইচ্ছে তাই করতো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমূহের সন্ত্রাসবিরোধী অনমনীয় লাগাতার অভিযানে সেই জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হলেও এলাকাবাসী অঞ্চলভিত্তিক ক্ষুদে গ্যাঙ মুক্ত হয়নি। সে কারণেই চাঁদাবাজি চলছে। অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনাও কম ঘটছে না। ডাকাতি? লেগেই রয়েছে। চুরি? চোখের পলকেই হচ্ছে। কেন? নানাবিধ জবাব রয়েছে। কর্মসংস্থানের তীব্র সংকটের জনপদে যদি থাকে মাদকের কালো থাবা, তা হলে সেই জনপদ অপরাধমুক্ত হবে কীভাবে? যদিও দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড সংখ্যক পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। তারপরও অপরাধীদের অপতৎপরতা যেনো লাগামহীন হওয়ার পথেই। রুখতে না পারলে পরিস্থিতি কতোটা ভয়াবহ হবে তা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে।

 

অপরাধীর সংখ্যা সমাজে অবশ্যই নগণ্য। গুটিকয়েক অপরাধপ্রবণ ব্যক্তি অবৈধ অস্ত্র নিয়ে সাধারণ মানুষের নির্যাতন করে। কেড়ে নেয় টাকা সোনাদানা। পুলিশের বাড়তি নজরদারি আর এলাকাবাসীর বাড়তি দায়িত্বশীলতা অপরাধীদের অপরাধমূলক ঘটনা ঘটানোর আগেই ধরাপড়ার কথা। ধরা পড়ে, পড়ে না। আড়ালে কোথাও না কোথাও, কিছু না কিছু গলদ তো রয়েছেই। অপরাধ প্রবণমুক্ত সমাজ গঠনে পুলিশকে হতে হবে আস্থাশীল। জনগণকেও হতে হবে সোচ্চার।