পুলিশ লক্ষ্য করে ডাকাতদলের ৪টি বোমা নিক্ষেপ : পুলিশের পাল্টা গুলি

দামুড়হুদার নতিপোতায় দু বাড়িতে সশস্ত্র ডাকাতদলের হানা : নগদ টাকা ও সোনার গয়নাগাটি লুট

 

বখতিয়ার হোসেন বকুল/জহির রায়হান: দামুড়হুদার নতিপোতায় সশস্ত্র ডাকাতদল দু বাড়িতে হানা দিয়ে নগদ প্রায় ৫০ হাজার টাকা ও সোনার গয়নাগাটি লুট করে নিয়ে গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছুলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতদল পুলিশকে লক্ষ্য করে ৪টি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ডাকাতদল সটকে পড়ে। পুলিশ তাদের পিছু ধাওয়া করে। ডাকাতদলকে লক্ষ্য করে ১ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরিত বোমার আলামত (বোমায় ব্যবহৃত ৪০/৪৫টি জালের কাঠি) উদ্ধার করেছে। গতকাল শনিবার রাত আনুমানিক ১১টার দিকে উপজেলার নতিপোতা গ্রামের কৃষক মঙ্গল ও রুহুল আমিনের বাড়িতে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার নতিপোতা গ্রামের উত্তরপাড়ার মৃত গনি মালিথার ছেলে মঙ্গল মালিথার বাড়িতে গতকাল শনিবার রাত আনুমানিক ১১টার দিকে ৭/৮ জনের মুখোশ পরিহিত অস্ত্রধারী সশস্ত্র ডাকাতদল বাড়িতে প্রবেশ করে এবং মঙ্গলের গলায় বড় রামদা ধরে বাড়ির সকলকে জিম্মি করে ফেলে। ডাকাতদল তার বাড়ি থেকে নগদ ৭ হাজার টাকা নেয়। এ ঘটনার মিনিট দশেক পর ওই ডাকাতদল মঙ্গলের প্রতিবেশী মৃত ফাকি মণ্ডলের ছেলে রুহুল আমিনের বাড়িতে হানা দেয়। ডাকাতদল একই কায়দায় রুহুলসহ তার পরিবারের সকলকে জিম্মি করে এবং নগদ প্রায় ৪০ হাজার টাকা, ১টা সোনার চেন, দুজোড়া কানের দুল ও ১ জোড়া চুড়ি লুট করে নেয়।

এ বিষয়ে ডাকাতির শ্বিকার মঙ্গল জানান, আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। রাত আনুমানিক ১১টার দিকে ডাকাতদল বাড়িতে ঢুকে পড়ে এবং আমার গলায় বড় রামদা ধরে বলে একদম চিৎকার-চেচামেচি করবিনে। টাকা পয়সা যা আছে দিয়ে দে। আমি প্রাণ বাঁচাতে ঘরে থাকা ৭ হাজার টাকা তুলে দিই ডাকাতদলের হাতে। ওরা কতোজন ছিলো এবং তাদের কাছে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ছিলো কি-না জানতে চাইলে মঙ্গল বলেন, একজনের কাছে অস্ত্র ছিলো আর বাকি ডাকাতদের হাতে ছিলো বড় বড় রামদা। ডাকাতির অপর শিকার রুহুল আমিন জানান, আমিও ঘুমিয়ে ছিলাম। ডাকাতদল হঠাত করে বাড়িতে ঢুকে পড়ে এবং আমার গলায় দা ধরে বলে চিল্লাবিনে। জানে মেরে ফেলবো। এ সময় আমার পরিবারের লোকজন ঠিক পেয়ে গেলে ডাকাতদল তাদের ওপর চড়াও হয় এবং মারধর করতে গেলে আমার কাছে থাকা সিম বিক্রি করা ৫ হাজার টাকা দিয়ে দেই। ডাকাতদল এ সময় আমার বাড়ির লোকজনের দু জোড়া কানের দুল, ১টি গলার চেন, ১ জোড়া চুড়ি খুলে নেয় এবং সমস্ত ঘর তছনছ করে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় রেখে দেয়া আরো ৩০ হাজার টাকা লুট করে নেয়।

দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি (তদন্ত) ফকির আজিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রুহুলের বাড়িতে ডাকাতদল হানা দিয়েছে এমন সংবাদ পেয়ে ভগিরথপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এএসআই সিরাজুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে রুহুলের বাড়ির দিকে রওনা হন। পুলিশ রুহুলের বাড়ির সন্নিকটে পৌঁছানো মাত্রই বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ডাকাতদলের ৩/৪ জন সদস্য পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে পরপর ৪টি শক্তিশালী বোমা নিক্ষেপ করে। বিস্ফোরিত বোমার বিকট শব্দে গোটা এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে এবং বোমার ধোঁয়ায় চারদিক অন্ধকার হয়ে যায়। ডাকাতদল ওই সুযোগে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পুলিশ গ্রামের কয়েকজনকে সাথে নিয়ে পিছু ধাওয়া করে এবং ডাকাতদলকে লক্ষ্য করে কনস্টেবল বাদশা মিয়া ১ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেন। ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরিত বোমার আলামত (বোমায় ব্যবহৃত ৪০/৪৫টি জালের কাঠি) উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। ডাকাতি হয়ে যাওয়া মালামাল উদ্ধারসহ ডাকাতদরকে ধরতে পুলিশি জাল বিস্তার করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

এদিকে একই রাতে পরপর দু বাড়িতে সশস্ত্র ডাকাতির ঘটনায় এবং বোমার বিকট শব্দে গোটা এলাকার মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে ডাকাত আতঙ্কে ভুগছে।