কলেজের মেধাবী ছাত্র ধ্রুব’র মর্মান্তিক মৃত্যু : চুয়াডাঙ্গাজুড়ে শোক

বন্ধুদের সাথে দিগড়ির দিঘিতে গোসল করতে গিয়ে সাঁতার না জানায় বিপত্তি

 

স্টাফ রিপোর্টার: দিঘির পানিতে ডুবে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বেধাবী ছাত্র ধ্রুব’র। বন্ধুদের সাথে গোসল করতে গিয়ে দিগড়ির হেলিপ্যাড পুকুরে ডুবে সে মারা যায়। সাথে থাকা দু বন্ধুর সামনে মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটলেও তারা বাঁচাতে পারেনি ধ্রুবকে। ধ্রুব’র মৃত্যুতে চিকিৎসক পিতা ও শিক্ষক মা পাথর হয়ে গেছেন। মর্মান্তিক এ ঘটনায় গতকাল গোটা শহরজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। ধ্রুব’র লাশ দেখতে আসা কেউই ধরে রাখতে পারেনি অশ্রু।

চুয়াডাঙ্গার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. বেলাল উদ্দিন এবং চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারজানা কেতকীর বড় সন্তান রাফি আমীন ধ্রুব (১৭) চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির মেধাবী ছাত্র। সে এ বছর ভি.জে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করে। ডা. বেলাল উদ্দিন আলমডাঙ্গার হাড়গাড়ি গ্রামের মানুষ হলেও তিনি চুয়াডাঙ্গা কোর্টপাড়ায় বাড়ি করে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।

গতকাল শনিবার দুপুরে ধ্রুব তার দুই সহপাঠী শিহাব ও রাব্বীর সাথে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার দিগড়ি গ্রামের হেলিপ্যাড দিঘি বা চাকলের বিলে গোসল করার উদ্দেশে যায়। সেখানে তারা গোসল করার এক পর্যায়ে একটি বাঁশ দিয়ে পানির গভীরতা মাপতে যায়। ওপরে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য মোবাইলে বিডিও ধারণ করছিলো অপর বন্ধু রাব্বী। পানির গভীরতা মাপার এক পর্যায়ে বাঁশটি ফঁসকে গভীর জলে নেমে যায় ধ্রুব। এরপর সে হাবুডুবু খেতে থাকে। দু বন্ধুর চিৎকার চেঁচামেচি শুনে পাশে থাকা দিগড়ি গ্রামের রাজন, ইছা, শানা ও মামুন ঝাঁপ দিয়ে ধ্রুবকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। পরে যখন তাকে পাওয়া যায় তখন সে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। তাকে একটি ট্রাক্টরযোগে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আনা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মশিউর রহমান ধ্রুবকে মৃত বলে ঘোষণা দেন।

ধ্রুব’র মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার বাড়িতে ভিড় করে ধ্রুব’র বন্ধ মহল, চিকিৎসকবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শ শ নারী-পুরুষ। ধ্রুব’র মা কেতকী প্রিয় সন্তানের লাশ দেখে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। ধ্রুবকে দেখতে আসা কেউই ধরে রাখতে পারেনি অশ্রু। এভাবে আকস্মিক ধ্রুব হারিয়ে যাবে তা যেন কেউই ভাবতে পারেনি।

গতরাত ১০টায় ধ্রুব’র লাশ চুয়াডাঙ্গা জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে দাফন করা হয়। ধ্রব’র একমাত্র ভাই শাফি মুস্তাকিন দিপ্য চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর দুপুরে যখন সারাবাড়ি কান্নাকাটি তখন দিপ্য তার বাবার সাথে জোহরের নামাজ পড়ে। দোয়া করে ভাইয়ের জন্য।

ধ্রুব’র মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক ছেলুন, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক খুস্তার জামিল, চুয়াডাঙ্গার বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. একরামুল হক, ডা. জিন্নাতুল আরা, ডা. আবু হাসানুজ্জামান নুপুর, ডা. নুরুদ্দিন রুমি ও ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন। তারা প্রয়াত ধ্রুব’র রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

Leave a comment