ভূমিদস্যুদের অপতৎপরতা রুখেই ক্ষান্ত নয়, শাস্তিও দরকার

 

এর আগেও একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের জমি হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা চালিয়েছে। চুয়াডাঙ্গার প্রায় সকল নবীন-প্রবীণ আইনজীবী, শিক্ষানুরাগী, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও শিক্ষকমণ্ডলীর সমন্বয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের পাশাপাশি আইনি লড়াইয়ে সে দফা জমি রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। আবারও ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের স্থাবর সম্পত্তি হাতানোর পাঁয়তারা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ রক্ষা ও স্বার্থ সংরক্ষণ সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক প্রবীণ শিক্ষক আব্দুল মোত্তালিব। সমন্বয় কমিটির আহ্বানে আজ শনিবার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বরে সুধী সমাবেশ। এ সমাবেশ থেকে চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের স্থাবর সম্পত্তি গ্রাস বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে বলে জানানো হয়েছে।

শুধু চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের স্থাবর সম্পত্তি নয়, খাসজমিসহ বিভিন্ন ব্যক্তির মালিকানাধীন জমিও হাতিয়ে নেয়ার জন্য এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয়। এদেরকে ভূমিদস্যু হিসেবে সমাজের সাধারণ মানুষ আখ্যা দিলেও তাদের নানা পদক্ষেপে অনেকেই নাজেহাল। অবাক হলেও সত্য যে, ভূমিদস্যুদের কুনজর এড়াতে অনেকেই আপস করতেও বাধ্য হন। চুয়াডাঙ্গার এক প্রবীণ আইনজীবী এ প্রসঙ্গে বলেন, চুয়াডাঙ্গার ভূমিদস্যুদের কয়েকজন চিহ্নিত। এরা সঙ্ঘবদ্ধ। একজন বালামের নির্দিষ্ট দলিলে কালি ঢেলে, ছিঁড়ে প্রমাণ অস্পষ্ট করেন। অন্যজন জমির মালিক সেজে মামলা ঠোকেন। যতোদিন মামলা গোপন রাখা যায় ততোদিন গোপন রেখে একতরফা রায়ের পক্ষে হাঁটতে থাকেন। জানাজানি হলেও জমির প্রকৃত মালিক অনেক ক্ষেত্রেই দিশেহারা হয়ে পড়েন। পদে পদে অসহায়ত্ব ফুটে ওঠে। কেউ কেউ মোটা অঙ্কের টাকা প্রদানের আপস প্রস্তাবে রাজি হতেও বাধ্য হন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ? জটিল বটে।

চুয়াডাঙ্গা ভি.জে উচ্চ বিদ্যালয়টির বেশ কিছু স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। দলিলও ছিলো। লোহার সিঁন্দুক থেকে তা হারিয়েছে। কেন? কোন সময় কীভাবে দলিল চুরি হলো? সিঁন্দুকের তালা না ভেঙেই দলিল চুরি কি দায়িত্বশীলরাও সন্দেহজনক নন? অবশ্যই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্থাবর সম্পত্তি বেহাত করার জন্যই কি দলিল চুরি? ভি.জে স্কুলের খেলার মাঠ রক্ষা ও স্বার্থ সংরক্ষণ সমন্বয় কমিটি এ প্রশ্ন তুলেছেন। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে পুলিশ সুপারের নিকট এ প্রশ্ন সংবলিত খোলা চিঠিও দেয়া হয়েছে। খোলা চিঠির কিছু প্রশ্ন ক্ষোভের বহির্প্রকাশ বলে মনে হলেও তা যে অযৌক্তিক নয়, তা বলাই বাহুল্য। চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠটি কোর্টপাড়ায় অবস্থিত। এক সময় এটা চাঁদমারি মাঠ হিসেবে পরিচিতিও পায়। হাতিয়ে নেয়ার জন্য মামলা করে। জনশ্রুতি আছে মামলার রায়ের আগেই তৎকালীন প্রভাবশালী মহল থেকে শুরু করে অনেকেই জমির বকরা করতে শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত তাদের সেই চক্রান্ত সফল হয়নি। আদালত ভি.জে স্কুলের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। রায়ের কয়েক বছর পেরিয়ে গেলো। অথচ এখন পর্যন্ত খেলার মাঠটি পূর্বের মতোই অরক্ষিতই পড়ে আছে। কেন? এছাড়া বিদ্যালয়ের পশ্চিমপ্রান্তে মাথাভাঙ্গা নদী সংলগ্ন সম্পত্তিতে এক সময় তাঁরকাটার বেড়া ছিলো। সেটা নিশ্চিহ্ন হওয়ার পরও কেন পুনরায় জমি সংরক্ষণের মতো পদক্ষেপ নেয়া হলো না? সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন- কে করবে এসব?

 

চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসক। একজন প্রধান শিক্ষক মাঝে মাঝে ভারপ্রাপ্ত হলেও থাকেন। ব্যবস্থাপনা কমিটি, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের কোনো প্রকারের ক্ষতির দায় এড়াতে পারেন না। সে শিক্ষার মান পড়ে যাওয়াই হোক, আর জমিই হাতছাড়া হোক। অবশ্যই ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়সহ সকল সরকারি স্থাবর সম্পদ-সম্পত্তি রক্ষায় দায়িত্বশীলদের আরও আন্তরিক হতে হবে। যারা ভূমিদস্যু হিসেবে চিহ্নিত তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ভূমিদস্যুদের হাত একদিনে লম্বা হয়নি। সুযোগ পেয়েছে বলেই রাঘব হয়েছে। অনেক সময় গড়িয়েছে। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গায় এমন একজন রাজনৈতিক ক্ষমতাধর, তিনি আর যা-ই হোক ভূমিদস্যুদের প্রশ্রয় দেন না। তাহলে ভূমিদস্যুদের দাঁত অতো শানিত কেন? ভাঙতে হবে।