ভারতীয় টিভি চ্যানেল স্টার জলসায় বোঝে না সে বোঝে না দেখতে না দেয়ায় পিতার ওপর অভিমান
বখতিয়ার হোসেন বকুল: ভারতীয় টিভি চ্যানেল স্টার জলসায় প্রচারিত ধারাবাহিক সিরিয়াল বোঝে না সে বোঝে না দেখতে না দেয়ায় চাঁদনী (১৬) নামের এক স্কুলছাত্রী বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে। গত ৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে স্টার জলসা দেখতে না দিলে সে পিতা-মাতার ওপর অভিমান করে বিষপান করে। তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। গত ৫ নভেম্বর বুধবার রাত ১০টার দিকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। রাতেই রাজশাহীর উদ্দেশে নেয়ার সময় ভোর ৫টার দিকে পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে নিহত স্কুলছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে দামুড়হুদা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। নাটুদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী নিহত চাঁদনী উপজেলার শিবনগর গ্রামের মতিয়ার রহমানের মেয়ে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের মতিয়ার রহমানের মেয়ে চাঁদনী গত ৩১ অক্টোবর রাত ৯টার দিকে নিজ বাড়িতে ভারতীয় টিভি চ্যানেল স্টার জলসায় প্রচারিত ধারাবাহিক টিভি সিরিয়াল বোঝে না সে বোঝে না দেখছিলো। এ সময় তার দাদা মজিবার রহমান দেশের খবর দেখার জন্য বললে সে বলে এখন সিরিয়াল দেখছি। চ্যানেল পাল্টানো যাবে না। এ ঘটনায় চাঁদনীর পিতা-মাতা তাকে বকাঝকা করে এবং বলে পড়ালেখা বাদ দিয়ে সারাদিন ওই সব দেখিস তোর লজ্জা করে না। টিভি দেখতে হবে না পড়তে বসগে যা। এ কথা বললে চাঁদনী তার দাদা ও পিতা-মাতার ওপর রাগ দেখিয়ে তার শোয়ার ঘরে চলে আসে এবং ঘরে থাকা কীটনাশক পান করে। এ ঘটনার বেশ কিছুক্ষণ পর তার পিতা-মাতা বিষের গন্ধ পেয়ে ঘরে গিয়ে দেখে মেয়ে বিষপান করেছে। তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় রাতেই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। গত ৫ নভেম্বর বুধবার রাত ১০টার দিকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। তাকে রাতেই রাজশাহীর উদ্দেশে নেয়ার সময় গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার নিজ গ্রামের কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। এ বিষয়ে নিহত স্কুলছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে দামুড়হুদা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। নিহত চাঁদনী ছিলো দু বোনের মধ্যে বড়।
এদিকে চাঁদনীর মৃত্যু খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার বেশ কিছু সচেতন অভিভাবকরা এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ভারতীয় ওই টিভি চ্যানেল স্টার জলসায় প্রচারিত বোঝে না সে বোঝে না সিরিয়ালটি নিয়ে বাংলাদেশে কতো কিছুই না ঘটে গেলো। রাত ৯টা বাজলেই ছেলেমেয়ে বুড়োবুড়ি সব কাজ ফেলে বসে গেলো টিভির সামনে। দেখতে হবে আজকের পর্বে কি হয়। ওই সিরিয়ালে দেখানো পাখি জামা কেনা নিয়ে এদেশের বেশ কিছু গৃহবধূ স্বামীর ঘর ছেড়েছে আবার বেশ কিছু মেয়ে আত্মহত্যার অপচেষ্টাও চালিয়েছে। কিছু দিন আগে পত্রিকা খুললেই দেখা যেতো এ ধরনের খবর। ভারতীয় ওই টিভি চ্যানেলটি বন্ধের জন্য সরকারের কাছে বিভিন্ন মহল থেকে জোর দাবিও তোলা হয়েছিলো। কিন্ত এখনও পর্যন্ত তা বন্ধ হয়নি। সর্বশেষ চাঁদনী নামের এ মেধাবী মেয়েটিও আত্মহত্যা করলো। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দেশের ভুক্তভোগী মহলের প্রশ্ন-আর কতো গৃহবধূ স্বামীর ঘর ছাড়লে আর কতো মেয়ে এভাবে আত্মহত্যা করলে ওই ভারতীয় চ্যানেলটি বন্ধ করা হবে।