উপলব্ধির মতো শিক্ষা না পেলে সমাজ সুধরবে কীভাবে?

 

মাদরাসার এক শিক্ষক এক শিশুছাত্রকে বেত্রাঘাত করেছে। বেত্রাঘাতে আহত ছাত্রকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়ার পর নেয়া হয় থানায়। পুলিশে নালিশ করা হয়। পুলিশ অভিযুক্ত মাদরাসা শিক্ষককে ধরতে যায়। সাথে ছিলেন আহত শিশুর এক চাচা নজরুল ইসলাম। তিনি পুলিশ নিয়ে গ্রামে উপস্থিত হয়ে উগ্র আচরণ করেন বলে অভিযোগ। এরই মাঝে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, মাদররাসা শিক্ষককে নজরুল ইসলাম নজু ধরে মারধর করছে। এ প্রচারণায় গ্রামের সাধারণ মানুষ সংগঠিত হয়। ক্ষোভের আগুনে জ্বলে ওঠেন কেউ কেউ। তারা নজরুল ইসলাম নজুর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দেন। তার অপর এক ভাইয়ের হোটেলও ভাঙচুর করা হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের জাফরপুরে এ ঘটনার পর সমঝোতারও উদ্যোগ নেয়া হয়। সমঝোতা সালিস শেষ পর্যন্ত ভেস্তে গেছে। মামলা হয়েছে।

 

শিশু দু ছাত্রের মারামারির জের ধরে এক শিশুছাত্রকে মাদরাসা শিক্ষকের বেত্রাঘাত গুরুতর অন্যায়। আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। মানবিক দৃষ্টিতে? যে শিক্ষক শিশু শিক্ষার্থীকে মারধর করেন, সেই শিক্ষকের মানুষত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অমূলক নয়। শিশু শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাতে দেগে দেয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষ মানবিক দৃষ্টিতেই তো নির্যাতনকারী শিক্ষককে ধিক্কার জানানোর কথা। কিন্তু জাফরপুরে উল্টো হলো কেন? শুধুই কি মাইকে প্রচার করে লোকজন ডেকে উসকে দেয়া? নাকি নজরুল ইসলাম নজুর বিরুদ্ধে পূর্ব থেকেই ক্ষুব্ধ ছিলেন স্থানীয়রা? তা না হলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয়ার মতো হিংসাত্মক হিংস্রতা কেন? ক্ষুব্ধ হলেও কি কারো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আগুন দেয়া যায়? মাদরাসা শিক্ষকের অন্যায়ের প্রতিবাদের বদলে ভ্রান্ত প্রচারণায় দায়িত্বজ্ঞানহীনতা গর্হিত অপরাধ। যদিও গুজবে কান দিয়ে হুচুকে মেতে নিজের পায়ে নিজে কুড়ুল মারার প্রবণতা বাঙালির স্বভাবেরই খণ্ডাংশ। তা না হলে বাঙালির ললাটে, হুচুকে মাতা বাঙালি’ অপবাদ কেন? লজ্জার এ অপবাদ কি কোনোদিনও আমরা মুছতে পারবো না?

 

গ্রামবাংলায় কিছু ব্যক্তি আছেন, যারা কথায় কথায় পুলিশ ডাকেন। পুলিশের ভয় দেখান। সত্যি সত্যিই যেদিন পুলিশের দরকার হয়, সেদিন সাধারণ মানুষ তার পুলিশ প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বিশ্বাস করতে পারেন না। জাফরপুরের নজরুল ইসলাম নজু কি ওরকম? নাকি সুযোগ বুঝে প্রতিপক্ষের ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের চক্রান্ত? রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপটে নয়, পুলিশের সাথে বিশেষ সম্পর্কের কারণেও পক্ষপাতিত্ব নয়। চুয়াডাঙ্গা জাফরপুরের ঘটনাসমূহের সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। মাদরাসার শিশুশিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত, মাইকে প্রচার, দোকান পোড়ানোর ঘটনাগুলোর কোনোটার গুরুত্বই কম নয়। আবার গ্রামে অশান্তি অস্থিরতা জিইয়ে রাখাও সমাজপতিদের বুদ্ধিদীপ্ততার পরিচায় বহন করে না। না বুঝে পা বাড়ালেই বিপত্তি, এটা উপলব্ধির মতো শিক্ষা না পেলে সমাজ সুধরবে কীভাবে? সুধরাতে হবে উভয়কেই।