স্টাফ রিপোর্টার: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের আপিলের রায় ঘোষণা করা হবে আজ। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ আজ এ রায় ঘোষণা করবেন। বেঞ্চের অপর তিন বিচারপতি হলেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। মামলাটি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের আজকের কার্যতালিকায় রায়ের জন্য ১ নম্বরে রাখা হয়েছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্কের চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ আপিল বেঞ্চ যে কোনদিন রায় ঘোষণা করা হবে মর্মে মামলাটির রায় অপেক্ষমাণ রাখেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে দেড় মাস অপেক্ষার পর ঘোষণা করা হচ্ছে জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের আপিলের রায়। এ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কুদ্দুস জামান গতকাল দুপুরে গণমাধ্যমকে বলেন, কামারুজ্জামানের আপিলের রায় আগামীকাল (আজ) হচ্ছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায় বহাল থাকবে বলে আশা প্রকাশ করে বলেছেন, আপিল বিভাগের শুনানিতে আমরা অভিযোগগুলো সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তাই কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায় বহাল থাকবে বলে আশা করছি। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. ইকরামুল হক টুটুল বলেন, আমরা আদালতে বলেছি, সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং দালিলিক প্রমাণাদির ভিত্তিতে একাত্তর সালে কামারুজ্জামানের অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে তার সর্বোচ্চ শাস্তি বহাল থাকা উচিত। অন্যদিকে আসামির আইনজীবী এসএম শাহজাহান সাংবাদিকদের বলেন, প্রসিকিউশন তাদের সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে কোনো অভিযোগ নির্ভরযোগ্যভাবে প্রমাণ করতে পারেনি। তাই আপিলের রায়ে কামারুজ্জামান খালাস পাবেন। গত বছরের ৯ মে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দাখিলকৃত ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টিই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় দুটিতে মৃত্যুদণ্ড, দু’টিতে যাবজ্জীবন ও একটিতে ১০ বছরের কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া বাকি দু’টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি মর্মে তাকে খালাস দেয়া হয়। গত বছরের ৬ই জুন ট্রাইব্যুনাল ২-এর দেয়া রায়ের আদেশ থেকে খালাস চেয়ে আপিল করেন কামারুজ্জামান। আপিলে ২৫৬৪টি মূল ডকুমেন্ট, ১২৪টি গ্রাউন্ডসহ সর্বমোট ১০৫ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট জমা দেয়া হয়। ট্রাইব্যুনালে আসামির সর্বোচ্চ সাজার আদেশ হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় আপিল করেনি। এর আগে গত ১৭ই সেপ্টেম্বর জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করে আপিল বিভাগ। রায়ে সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। তারও আগে গত বছরের ১৭ই সেপ্টেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেয়া হয়। পরে সে বছরের ১২ই ডিসেম্বর তার সাজা কার্যকর করা হয়। কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণায় ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মোহাম্মদ কামারুজ্জামান বৃহত্তর ময়মনসিংহে আলবদর বাহিনীকে সংগঠিত করেন বলে যে তথ্য-প্রমাণ প্রসিকিউশন উপস্থাপন করেছে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তা খণ্ডাতে পারেননি। প্রসিকিউশনের আনা অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কামারুজ্জামান জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রসংঘের ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি ছিলেন। একাত্তরের ২২ এপ্রিল তিনি জামালপুরের আশেক-মাহমুদ কলেজের ইসলামী ছাত্রসংঘের বাছাই করা নেতাকর্মীদের নিয়ে আলবদর বাহিনী গড়ে তোলেন। এ বাহিনী বৃহত্তর ময়মনসিংহে মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধ ঘটায়। এর পক্ষে প্রসিকিউটররা দৈনিক সংগ্রামের সেই সময়ের একটি প্রতিবেদনও উপস্থাপন করেন। একাত্তরে রাজধানীর পল্লবী থানা এলাকায় সংগঠিত গণহত্যার অভিযোগে করা একটি মামলায় ২০১০ সালের ১৩ জুলাই জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী। পরে ওই বছরের ২রা অক্টোবর তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। ওই সময় থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
কামারুজ্জামানের চূড়ান্ত রায় আজ
