চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান
শরিফুল ইসলাম: আলমডাঙ্গা থানার ৩ এসআই জীবনবাজি রেখে জেলফেরত দাগী বোমাকারিগর তুরাল ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে। ৩ পুলিশ অফিসার ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়ে গতকাল রাতে বেলগাছি গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করেন। এ সময় এসআই জিয়াউর রহমানসহ দুজন জখম হন।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ প্রায় এক সপ্তা ধরে বেলগাছি গ্রামের মৃত রমজান আলীর ছেলে তুরাপ ওরফে তুরাল ডাকাতকে গ্রেফতার করতে অভিযান শুরু করে। কিন্তু তুরালকে গ্রেফতার করা এতোটা সহজ কাজ নয়। তার নিকট সব সময় বোমা থাকে। ঘটতে পারে জীবনহানির মতো ভয়ঙ্কর বিপদ। এ ভয়কে জয় করে আলমডাঙ্গা থানার এসআই জিয়াউর রহমান, এসআই জসিম ও এসআই জিয়াউল হক অভিযান অব্যাহত রাখেন। অভিযান পরিচালনাকারী অফিসাররা তথ্য দিতে গিয়ে জানান, একপর্যায়ে তারা জানতে পারেন, বোমাকারিগর তুরাল ডাকাতের কাছে ১টি পিস্তল ও ১২টি বোমা রয়েছে। সম্প্রতি সে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে বোমা মেরে হত্যার পরিকল্পনা করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সে গতপরশু বোমা তৈরির জন্য ৬ কেজি গানপাউডার সংগ্রহ করেছে। তুরাল ডাকাত গ্রামেই আছে সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা থানার এসআই জিয়াউর রহমান, এসআই জসিম ও এসআই জিয়াউল হক ৩ জন মিলে পরিকল্পনা করে অভিযানে নামেন। রাত সাড়ে ৯টায় বেলগাছি মসজিদপাড়ায় তুরাল ডাকাতের অবস্থান স্থলে ৩ জন ৩ দিক দিয়ে অভিযান শুরু করেন। রাস্তার পাশের এক চায়ের দোকানের পাশে তুরাল ডাকাতকে পেয়ে তাকে গ্রেফতার করেন। এ সময় এসআই জিয়াউর রহমান ও এসআই জসিম জখম হন। তুরাল ডাকাত তার পিঠে ও মুখে কামড়ে রক্তাক্ত জখম করে। এসআই জিয়াউর রহমানকে শহরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
যেভাবে গ্রেফতার করা হলো তুরাল ডাকাতকে: ৩ এসআই প্রথমে বেলগাছি গ্রামে পৌঁছে এক বাড়িতে ওঠেন। ওই বাড়িতে পুলিশের পোশাক খুলে লুঙ্গি চেয়ে নিয়ে পরেন। জুতো খুলে স্যান্ডেল চেয়ে নেন। এরপর ৩ জন ৩ দিক থেকে অপারেশন শুরু করেন। এসআই জসিম তুরাল ডাকাতের নিকটবর্তী হতেই তুরাল তার চোখে লাইট মেরে রাখেন দীর্ঘসময়। এক পর্যায়ে তুরাল ডাকাত তার নাম জিজ্ঞাসা করে। ঠিক ওই মুহূর্তে বিপরীত দিক থেকে এসআই জিয়াউর রহমান তুরাল ডাকাতের পেছনে পৌঁছে যান। ওই সময় দুজন দু দিক থেকে তুরাল ডাকাতকে জাপটে ধরেন। শুরু হয় জড়াজড়ি। কোনোভাবেই হার মানতে রাজি নয় তুরাল ডাকাত। দু পুলিশ অফিসারকে নাস্তানাবুদ করে তাদেরকে নিয়ে গড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী পুকুরের পানিতে। সেখানে দীর্ঘ লড়াই শেষে একপর্যায়ে হার মানে তুরাল ডাকাত। তবে রক্তাক্ত জখম করে ছেড়েছে দু পুলিশ অফিসারকে। জখম অবস্থায় ক্লিনিকের বেডে শুয়ে এসআই জিয়াউর রহমান বলেন, এভাবে বোমাকারিগর গ্রেফতার করা সহজ নয়। বারবার মনে হয়েছে আজ ছেড়ে দিই। কিন্তু তাহলে কালকেই পত্রিকায় নিউজ হবে দু পুলিশ কর্মকর্তার হাত থেকে ভয়ঙ্কর ডাকাত পালিয়ে গেছে। এ কথা মনে করেই আরও প্রাণপণে লড়াই করে তাকে গ্রেফতার করেছি। গতকাল এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত তুরাল ডাকাতকে সাথে নিয়ে পুলিশের অস্ত্র উদ্ধারের প্রস্তুতি চলছিলো।