৭২টি পল্লী বিদ্যুত সমিতির কার্যক্রম ঝিমিয়ে : বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ১৮টি প্রকল্প

 

স্টাফ রিপোর্টার: সারাদেশে ৭২টি পল্লী বিদ্যুত সমিতির (পবিস) কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ১৭ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা ব্যয়ের ১৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ। এতে সরকারের বিদ্যুত সেক্টরের ২০২১ ভিশন অর্জনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিদ্যুত বিভাগ গত ৮ মাসে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন ( বাপবি ) বোর্ডের সদস্য ( সমিতি ব্যবস্থাপনা) শূন্যপদ পূরণ করতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া প্রশাসনিক কাজে স্থবিরতা, দালালচক্রের উত্থান ও গ্রাহক হয়রানি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।

এসব সমিতির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অর্পিত রয়েছে এই সদস্যের ওপর। সদস্য পদে সার্বক্ষণিক কেউ দায়িত্ব না থাকায় ১৭ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা ব্যয়ের ১৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ৭২টি পল্লী বিদ্যুত সমিতি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যেভাবে দায়িত্ব পালন করা কথা, তারা সেভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। ফলে এ সেক্টরের সাফল্য দেখাতে পারছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। বাপবি বোর্ড সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বাপবি বোর্ডের সংশোধিত অর্ডিনান্স ১৯৭৭ অনুযায়ী সাংগঠনিক কাঠামোতে সার্বক্ষণিক ১ জন চেয়ারম্যান, ৪ জন স্থায়ী ও ৫ জন অস্থায়ী সদস্য নিয়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড গঠিত। একই সঙ্গে চেয়ারম্যান বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং স্থায়ী ৪ সদস্য পদে ৪টি বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এই ৪ জন সদস্যের মধ্যে ১টি হলো সদস্য (সমিতি ব্যবস্থানা) পদ। সারাদেশের ৭২টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ব্যবস্থাপনা দায়িত্ব এই সদস্যের ওপর অর্পিত থাকে।

সংশোধিত বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে প্রশাসনিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন কর্মকর্তাকে বিদ্যুৎ. জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে সদস্য পদে নিয়োগ প্রদান করার হয়। এ পদে সর্বশেষ কর্মরত কর্মকর্তা গত ফেব্রুয়ারি মাসে অবসর যাওয়ার পর থেকে পদটি শূন্য হয়।

বোর্ডের সদস্যকে (প্রকৌশল) অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে কোনোভাবে কাজ চালানোর চেষ্টা করা হলেও এই দীর্ঘ সময়ে পদটি পূরণ না করায় একদিকে সদস্য (প্রকৌশল) তার নিজের দপ্তরের কাজ ঠিকমত করতে পারছেন না। ফলে ৭২টি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ব্যবস্থাপনা প্রায় ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

বাপবি বোর্ডের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিনের পক্ষ থেকে সদস্য (সমিতি ব্যবস্থাপনা) পদটি পূরণের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগে প্রথম ৬ জুলাই (স্মারক নং-২৭,১২,২৬৩৭,০২৫.০৬.২৮৯(৪).১৪-১৮) এবং দ্বিতীয় ২৮ আগস্ট (স্মারক নং-২৭.১২.২৬৩৭.০২৫.০৬.২৮৯ (৪).১৪.২৫০) দু’দুবার প্রস্তাব পাঠানো হলেও রহস্যজনক কারণে বিদ্যুৎ বিভাগ বাপবি বোর্ডের প্রস্তাবের ওপর কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

জানা গেছে, গত ৬ জুলাই বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রশাসনিক ক্যাডারের অভিজ্ঞ ও সিনিয়র কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলামকে সদস্য পদে নিয়োগের প্রস্তাব বিদ্যুৎ খনিজ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুত বিভাগে প্রেরণ করা হয়। প্রস্তাবটি ৩ মাস মন্ত্রণালয়ে পড়ে থাকলেও এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।

কিন্তু মো. নুরুল ইসলাম গত ২০ আগস্ট অবসরে গেছেন। এরপর ২৮ আগস্ট সিনিয়র কর্মকর্তা মো. রফিকুল আলমকে সদস্য পদে নিয়োগের প্রস্তাব বিদ্যুত বিভাগে পুনরায় প্রেরণ করা হয়। জানা গেছে, বাপবি বোর্ডের প্রস্তাব অনুযায়ী মো. রফিকুল আলমকে সদস্য পদে নিয়োগের জন্য বিদ্যুত বিভাগের সচিব সুপারিশ করে নথিটি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়।

জানা গেছে, বিদ্যুত বিভাগের সচিব থেকে শুরু করে অন্যান্য সকল কর্মকর্তা বাপবি বোর্ডের প্রস্তাবটি অনুমোদনের পক্ষে থাকলেও শুধু প্রতিমন্ত্রী এবং তার একান্ত সচিব ও সহকারী একান্ত সচিব প্রস্তাবটি অনুমোদন না দেয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা গেছে, বাপবি বোর্ডের বর্তমান নির্বাহী পরিচালক বেলায়েত হোসেন চৌধুরীর সার্ভিস রেকর্ড ভালো না হওয়া, মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে বিতর্ক থাকায় তার বিরুদ্ধে দুদকসহ বোর্ডের নিকট বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় এবং সর্বোপরি তার বার্ষিক কর্মমূল্যায়নে পদোন্নতির সুপারিশ না করে তার পরিবর্তে মো. নুরুল ইসলাম এবং পরবর্তীতে মো. রফিকুল আলমের নাম বিদ্যুৎ বিভাগে প্রস্তাব করে প্রেরণ করা হয়।

অপর একটি সূত্র জানায়, বেলায়েত হোসেন চৌধুরীর নাম সদস্য পদে নিয়োগের জন্য প্রস্তাব না করায় প্রতিমন্ত্রী সচিবের সুপারিশ অনুমোদন না করে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রস্তাবটি তার দপ্তরে ফেলে রাখা হয়েছে। এদিকে দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের গুরুত্ব অনুধাবন করে বর্তমান সরকার ইতোমধ্যেই বোর্ডের ১৮টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এই অনুমোদিত ১৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার আগামী ৪ বছরের মধ্যে দেশের বিদ্যুৎ সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এনে দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম জোরদার করার প্রচেষ্ঠা গ্রহণ করেছেন।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাপবি বোর্ডের সদস্য পদের মতো একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পদ দীর্ঘ ৮/৯ মাস ধরে শূণ্য থাকায় সরকারের এই কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে বলে বাপবি বোর্ডের কর্মকর্তাদের অভিমত। সদস্য পদে সার্বক্ষণিক কেউ দায়িত্ব না থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ৭২টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যেভাবে দায়িত্ব পালন করা কথা, তারা সেভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। এ ব্যাপারে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার পিএসের সাথে কথা বলে তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব সেলিম আবেদ এ ব্যাপারে কোনো কথা না বলে জনসংযোগ কর্মকর্তার কক্ষে বসতে বলেন। পরে জনসংযোগ কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন এসে নিউজটি চেপে যাওয়ার জন্য বলেন। প্রতিমন্ত্রী এ ব্যাপারে কোনো কথা বলবেন না। এদিকে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, একান্ত সচিব উভয় পক্ষ থেকে সুবিধা ভোগ করার কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়াটা ঝুলে আছে। সেই কারণেই কেউ কথা বলতে চাচ্ছে না। তবে পল্লী বিদ্যুত সমিতির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার একান্ত সচিব আব্দুল খালিদ হোসাইন বলেন, স্যার ব্যস্ত আছেন। তবে বাপবি বোর্ডে শূন্য পদ পূরণের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগে দু’টি প্রস্তাব প্রেরণ করে দিয়েছে স্যার। এখনতো স্যারের কোনো কাজ নেই। শুধু বিদ্যুৎ বিভাগের কাজ।

Leave a comment