স্বপ্ন আর মেধা তরিকুলের শক্তি

মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেও কি থেমে যাবে লেখাপড়া?

 

মরিয়ম শেলী: স্বপ্ন ও মেধাকে শক্তি করেই পথচলা তরিকুলের। আর তার বলেই সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় সরাসরি ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তীর্ণ ৯৮৬ জনের মধ্যে তরিকুলের মেধা তালিকার অবস্থান ৩৮৬। আর মেডিকেলে উত্তীর্ণ ২২ হাজার ৭৫৯ জনের মধ্যে মেধা তালিকায় তার অবস্থান দু হাজার ৩০২। এতো ভালো ফলাফলের পর এখন কী করবে তরিকুল? কী করে ভর্তি হবে মেডিকেলে? কী করে কিনবে বই? কী করে চালাবে পড়া লেখার খরচ? কী করে তার স্বপ্ন সফল হবে? না-কি এখানেই থেমে যাবে তরিকুলের স্বপ্ন ও মেধার পথ চলা?

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর ইউনিয়নের কয়রাডাঙ্গা গ্রামের মসজিদপাড়ায় তরিকুলের বাড়ি। পুরো নাম মো. তরিকুল ইসলাম। দু ভাই-বোনের মধ্যে সে ছোট। পিতা দিনমজুর গিয়াস উদ্দিন। মা মোছা. রাশিয়া বেগম। অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। ছোট থেকেই তরিকুল বেশ মেধাবী। পড়ালেখার প্রতি তার আগ্রহের কমতি ছিলো না। মাঠের কাজ শেষে ছুটে যেতো স্কুলে। তার মেধা এবং আগ্রহের করণে মা রাশিয়া সব সময় তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। পরামর্শ দিয়ে, অর্থ দিয়ে তরিকুলের সকল সময় সহযোগিতা করেছেন খাদিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মোছা. সুলতানা এবং গোকুলখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মরহুম মাহফুজুর রহমান।

২০১২ সালে গোকুলখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি উত্তীর্ণ হয়। এ সময়ে তাকে বিনা পয়সায় পড়িয়েছেন মো. মোমিনুন ইসলাম ও মো. নুরুল ইসলাম। ২০১৪ সালে সে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করে। কলেজে তাকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন গণিত বিভাগের শিক্ষক মো. মোজাফফর রহমান। এছাড়াও পদার্থ বিজ্ঞান শিক্ষক ইকরামুল হক, বাংলা বিভাগের শিক্ষক নাজমুল হোসেনসহ উদ্ভিদ বিজ্ঞান ও রসায়ন বিভাগের শিক্ষকও। সকলের সহযোগিতায় এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তরিকুল মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন পূরণের আরও এক ধাপ পেরিয়ে যায়।

এবার মেডিকেল বা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধ। কোচিং তো করতে হবে? টাকা কোথায় পাবে তরিকুল? ছেলের আকুতির ফলে মা রাশিয়া পিতার বাড়ি কমলাপুর ছুটলেন। সেখানে তার ভাগের জমি বিক্রি করে টাকা তুলে দিলেন তরিকুলের হাতে। সেই টাকা দিয়ে তার রাজশাহী রেটিনা কোচিং সেন্টারে কোচিং করা। গত ২৫ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলাফল ঘোষণা করে। ফলাফলে ৯৮৬ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। এখানে মেধা তালিকায় তরিকুলের অবস্থান ৩৮৬। অন্যদিকে গত ২৬ অক্টোবর সরকারি মেডিকেলে পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করে। এ পরীক্ষায় ২২ হাজার ৭৫৯ জন উত্তীর্ণ হয়। এদের মধ্যে মেধা তালিকায় তরিকুলের অবস্থান দু হাজার ৩০২।

এখন তরিকুলের স্বপ্ন কীভাবে পূরণ করবে তার পিতা-মাতা? তরিকুলই বা কী করবে? না-কি এখানেই থেমে যাবে সে? সহায়-সম্বলহীন তরিকুল ও তার পরিবার এখন দিশেহারা। চোখের জলেই কী ভেসে যাবে তরিকুরের স্বপ্ন? এখন সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতাই পারে তরিকুলের স্বপ্ন পূরণ করতে। পারে তরিকুলের পিতা-মাতার চোখের অশ্রু মুছে দিতে।

Leave a comment