প্রকৃত হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে : সাংবাদিক সমিতির সমাবেশ আজ

চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে নগ্ন বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ : প্রতিনিধি সভায় ঘুরে ফিরেই উঠে এসেছে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গ

 

স্টাফ রিপোর্টার: যেখানে প্রেসক্লাবে হামলা হয়, সেখানে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা কোথায়? সাংবাদিক ও সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠান নিরাপদ না হলে সুন্দর সমাজ গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে কীভাবে? গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে চুয়াডাঙ্গার সকল উপজেলা প্রেসক্লাবসহ সকল সাংবাদিক ইউনিট প্রতিনিধি সভায় বক্তারা এ প্রশ্ন তুলে বলেন, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে যারা নগ্ন বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে ভাঙচুরসহ সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে আহত করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতেই হবে।

প্রতিনিধিসভায় বক্তারা বলেন, গত ২৩ অক্টোবর দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে সশস্ত্র মিছিল বের হয়। পুলিশ ওই মিছিল প্রতিহত করতে পারেনি বা করেনি। মিছিল থেকেই প্রেসক্লাবে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে প্রেসক্লাবের পার্টিশন গ্লাস, অসংখ্য চেয়ার-টেবিল কুপিয়ে তছনছ তো করেছেই, সেই সাথে চার সাংবাদিককে খুনের অপচেষ্টা চালিয়েছে। আহত হয়েছেন তারা। ৫টি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করেছে হামলাকারীরা। এ ঘটনার পর থেকে শুধু চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব নয়, সকল উপজেলা প্রেসক্লাবগুলোও তাৎক্ষণিক প্রতিবাদসভা করে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। আগামী দিনে যেকোনো কর্মসূচির সাথে সাংবাদিকদের সকল সংগঠন একাত্মতা ঘোষণা করেছে।

বক্তারা বলেন, মামলা রুজুর পর এ পর্যন্ত মাত্র চার আসামি গ্রেফতার করা হলেও পুলিশ ঝিমিয়ে পড়েছে। যদিও পুলিশ বলছে, হামলাকারীরা আত্মগোপন করেছে। হামলার সময় পুলিশের যেমন দায়িত্বে অবহেলার চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে, তেমনই শহরের প্রধান প্রধান সড়কে সশস্ত্র মিছিলকারীরা কমপক্ষে একডজন অটোরিকশা ভাঙচুর করেছে। এ বিষয়ে পুলিশের পদক্ষেপ অস্পষ্ট। যা পর্যালোচনা করে নিশ্চিত করে বলা যায়, পুলিশ অদৃশ্য জুজুর ভয়ে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছে। আমরা কোনো হামলায় ভিতু নই, ভিতু পুলিশও চাই না। যে পুলিশ অফিসারের মধ্যে পেশাদারত্ব মনোভাবের অভাব, প্রয়োজনে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দিতে পিছুপা হবো না। আমরা চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের নেতৃত্বে সকল সাংবাদিকের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাই।

প্রতিনিধি সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সরদার আল আমিন। তিনি ঘটনার পর থেকে গৃহীত কর্মসূচি পালন এবং মামলার বিষয়ে বিশদ আলোচনা করে বলেন, হামলার প্রতিবাদে আন্দোলনের নৈতিক বিজয়ের বিষয়টি সকলের সামনে পরিষ্কার। প্রকৃত দোষী তথা হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে প্রেসক্লাব অনড়। সাংবাদিকদের আগামী দিনের পথ মসৃণ তথা নিরাপত্তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন বলেই প্রতিনিধি সভার আয়োজন।

চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, প্রেসক্লাবে হামলার পর আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করেছি। করছি। পুলিশের পক্ষে যথাযথ পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। আমরা সে প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। একই সাথে স্থান-কাল-পাত্র নিয়েও ভাবছি। শুনেছি দু একদিনের মধ্যেই ভারত থেকে দেশে ফিরবেন হুইপ মহোদয়। তিনি ইতোমধ্যেই প্রেসক্লাবে নগ্ন বর্বরোচিত হামলার বিষয়ে অবগত হয়েছেন। দেশে ফিরে প্রেসক্লাব পরিদর্শনের পরই বাড়ি ফিরবেন বলে সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন। আমরা আশা করি তিনি তার প্রজ্ঞার আলোকে সাংবাদিকদের আগামী দিনগুলো নিরাপদ করার মতোই পদক্ষেপ নেবেন।

চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি মাহতাব উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক প্রতিনিধিসভায় বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক শাহার আলী, আমাদের সংবাদ সম্পাদক রুহুল আমিন রতন, আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি হামিদুল ইসলাম আজম, প্রেসক্লাব আলমডাঙ্গার সভাপতি শাহ আলম মন্টু, মেহেরপুর গাংনী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রেজা আহমেদ, সরোজগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিটের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, জীবননগর প্রেসক্লাব প্রতিনিধি কামাল সিদ্দিক, দামুড়হুদা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নূর নবী, দর্শনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল হক পিপুল প্রমুখ।

চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সহসভাপতি জেড আলমের উপস্থাপিত প্রতিনিধিসভার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সহসাধারণ সম্পাদক রফিক রহমানসহ কার্যকরী কমিটির সকল সদস্য। এদিকে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিট আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় সমিতি কার্যালয়ে প্রতিবাদসভার আয়োজন করেছে। সভায় সকলকে উপস্থিত হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন সমিতির সভাপতি অ্যাড. এসএম শরিফুজ্জামান হাসু ও সাধারণ সম্পাদক শাহার আলী।

Leave a comment