বাহারি প্যাকেটের ভুট্টাবীজে হাট বাজার সয়লাব

শাহনেওয়াজ খান সুমন: মাস ঘুরে আবার বছর এসেছে। এসেছে আশ্বিন-কার্তিক মাস। এখন ভুট্টা লাগানোর মরসুম। আর এ সময়কে পুঁজি করেই ঝোঁপ বুঝে কোপ দিচ্ছেন বীজ ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন কোম্পনির বাহারি রঙের প্যাকেটে ভুট্টাবীজ সয়লাব হয়ে গেছে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহের বাজার। কোম্পানি প্রতিনিধিরা কৃষকদের ভুট্টাচাষের প্রশিক্ষণের নামে তাদের নিজ নিজ ভুট্টা বীজের গুণাগুণ নিয়েই আলোচনা করছেন। কৃষক প্রশিক্ষণে এক প্রকার নিজের ঢোল নিজেই পেটানোর মতো অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। আর দোকানে চাষিরা বীজ কিনতে গেলেই নানা কোম্পানি প্রতিনিধির চটকদারির কথায় কৃষক কোন ভুট্টাবীজ কিনবেন তা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

ভুট্টাচাষিরা জানান, কর্তৃপক্ষের সঠিক বীজ মনিটরিঙের অভাবে বাজারে বিভিন্ন অলি-গলিতে বীজের দোকান গড়ে উঠেছে। আর এ সকল দোকানিদের নিকট থেকে বীজ কিনে প্রতি মরসুমেই কৃষকরা প্রতারিত হচ্ছেন। কৃষিবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ঝিনাইদহে ১৫ হাজার ৮শ ৯ হেক্টর জমিতে চাষিরা ভুট্টাচাষ করে। তবে এ বছর ভুট্টাচাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আরো বেশি জমিতে চাষ হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। আর চাষের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি বিভিন্ন নামে বীজভাণ্ডার খুলে বসেছেন। অনেক ব্যবসায়ী তারা বাজার থেকে নিম্নমানের ভুট্টাবীজ কিনে বাহারি মোড়কে নিজ নামে প্যাকেট করছেন। আর কোম্পানি প্রতিনিধিনিধি নিয়োগ দিয়ে বীজের গুণাগুণ প্রকাশ করে বেড়াচ্ছেন। এ বীজ থেকে চারা গজাচ্ছে না। আবার চারা গজালেও পূর্ণ বয়সের আগেই ফুল আসছে। ফলে কৃষকরা ভালো ফলন পাচ্ছে না।

সরেজমিনে ভুট্টাবীজ ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভুট্টা বীজ বিক্রির জন্য আটো, মুনসেনটা, পেট্রোকেম, ইয়ন, ব্র্যাকসহ নানা কোম্পানি ভুট্টাবীজ ব্যবসা করছেন। তবে সিনজেনটা কোম্পানি তাদের ব্যবসায়ীদের শর্ত দিয়েছেন, শুধুমাত্র তাদের ভুট্টাবীজই বিক্রি করতে হবে। এ জন্য তাদের মাঠ কর্মীও নিয়োগ দেয়া আছে। কর্মীরা বিভিন্ন গ্রাম, পাড়া মহল্লায় ভুট্টাচাষিদের প্রশিক্ষণের নামে নিজ নিজ বীজের এবং পণ্যের গুণাগুণ বলছেন। এ যেন নিজের ঢোল নিজে পিটিয়ে বেড়ানোর মতোই অবস্থা। তবে সিনজেনটা কোম্পানির শর্ত অন্য কোনো কোম্পানির বীজ বিক্রি করা যাবে না। তবে অন্য বীজ বিক্রি কররে যে লাভ হবে তা তারা পুষিয়ে দেবেন। কিন্তু এ শর্ত দোকানিরা মানছেন না। তারা দোকানে নিজেদের কন্ট্রাক্ট কোম্পানির ভুট্টাবীজ দোকানের সামনে সাজিয়ে রাখছেন। আর আড়ালে বিক্রি করছেন অন্য কোম্পানির বীজ। এ যেন অনেকটা লুকোচুরি খেলা।

এ বিষয়ে সদর উপজেলার হাজিডাঙ্গা গ্রামের ভুট্টাচাষি শহিদুল ইসলাম, আব্দুর রহিম অভিযোগ করে জানান, যে কাজটি ইউনিয়নে নিয়োজিত কৃষি কর্মকর্তাদের করা কথা, সেই কাজটি করে বেড়াচ্ছেন কোম্পানি মাঠকর্মীরা। তারা যেহেতু কোম্পানির কাজ করছে, বেতন নিচ্ছেন। বাধ্য হয়েই তারা তো নিজ নিজ কোম্পানির বীজের গুণাগুণ বলবেই। আর কৃষকরা তাদের কথা মতো বীজ কিনে অনেক সময়ই প্রতারিত হচ্ছেন। যদি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের ভূট্টা লাগানো সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতেন, তাহলে কৃষকরা চাষ সম্পর্কে জানতে পারতো এবং প্রশিক্ষণে লাভবান হতো।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ কৃষিবিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস জানান, এখন ভুট্টা লাগানো মরসুম। আমরা কৃষকদের নিয়ে বর্তমান মরসুম সম্পর্কে উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তাছাড়া মাঠপর্যায়ে আমাদের যারা কাজ করছেন, তারা কৃষকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। কীভাবে ভুট্টাচাষ করবেন এ বিষয়ে তারা তাদের পাশে থেকে শেখাচ্ছেন।