দেশে কর্মসংস্থান এবং বিদেশে পাড়ি জমানোর পথ

 

দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান থাকলে নিশ্চয় দেশের যুবসমাজ বিদেশে পাড়ি দেয়ার জন্য অতো মরিয়া হতো না। প্রতারক দালালচক্রও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে সর্বস্বান্ত করার সুযোগ পেতো না। জনসংখ্যা বিস্ফোরণের দেশে জনসংখ্যাকেই জনসম্পদে রূপান্তর করার বিকল্প নেই এ কথা যেমন সত্য, তেমনই দক্ষ জনশক্তি গড়ে তা যাথাযথভাবে কাজে লাগাতে না পারলে প্রশিক্ষণ খরচ অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। সে কারণেই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশে-বিদেশে কর্মংস্থানের ব্যবস্থা করা জরুরি। বাস্তবে তার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে বলেই যুবসমাজকে প্রতারিত হতে হচ্ছে, মানবপাচারচক্র নানাভাবে প্রাচার করছে যুব সমাজকে। যুবশক্তি পাচার হচ্ছে, পাচারের শিকার অসংখ্য যুবক শুধু নির্মম নির্যাতনের মধ্যেই পড়ছে না, অনেকেরই প্রাণ বিপন্ন হচ্ছে। সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় এ বিষয়টি ফলাও করে তুলে ধরা হলেও প্রতিকার মিলছে না।

 

যেহেতু দেশে কর্মসংস্থানের ভয়াবহ সংকট, সেহেতু কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে পাড়ি দেয়ার পথ খুঁজছে বেকার যুবসমাজ। বিদেশের মাটিতে শ্রম বিক্রি করে অর্জিত অর্থ দেশেই পাঠায়। দেশের অর্থনীতি প্রবাসীদের প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রায় চাঙ্গা রয়েছে। সে কারণে বিদেশে শ্রম বিক্রি করতে আগ্রহীদের প্রবাসে পাড়ি জমানোর পথ মসৃণ করা প্রয়োজন। এ দায়িত্ব অবশ্যই সরকারের। বিশ্বের কোন দেশে শ্রমের উপযুক্ত মূল্য মিলবে, কোথায় কোন কাজে কী ধরনের দক্ষ লোকবলের প্রয়োজন তা খুঁজে বের করে দেশের জনশক্তিকে কাজে লাগাতে পাররে দেশের চিত্রটাই যে পাল্টে যাবে তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। বোধকরি চরম এ বাস্তবতা উপলব্ধি করেই সরকার জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জনশক্তি ব্যুরোর কার্যক্রম চালু করেছে। জেলায় জেলায় পাসপোর্ট প্রণয়নের কার্যালয় করারও কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। এরপরও কেনো যুবসমাজ প্রতারিত হচ্ছে? প্রতারিত হওয়ার আড়ালে শুধু অসচেতনতা? নাকি দায়িত্বশীল কর্তাদের কর্তব্য অবহেলাও দায়ী? যে হারে প্রতারিত হচ্ছে, যে হারে পাচারের শিকার হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে তা অবলোকনে দায়িত্বশীল কর্তারা নিশ্চয় দায়িত্ব অবহেলার দায় এড়াতে পারেন না। তাছাড়া পদ্ধতিগত ত্রু টিও যে বিদ্যমান সেটাও অস্বীকার করা যায় না।

 

সারাদেশে প্রতারক আদমব্যাপারী ছড়িয়ে পড়েছে। সঙ্ঘবদ্ধ মানবপাচারচক্রের অপতৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নারী ও শিশু পাচারকারীদের অপতৎপরতার খবর পত্রস্থ হয়ে এলেও এখন পুরুষ পাচারের খবর পাওয়া যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশেই মানবপাচারচক্রের সদস্যরা ছড়িয়ে পড়েছে। এরা মোটা অঙ্কের বেতনে ভালো চাকরির প্রলোভনে ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাশাপাশি নির্জন জঙ্গলে পাচার করছে। অবৈধভাবে নৌপথে পাচারের কারণে পথিমধ্যেই অনেকের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের খাড়াগোদার এক যুবককে পাচারকারীরা সাগরে ফেলে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগে মামলাও হয়েছে। আর কতোজন পাচারকারীদের কবলে পড়ে নির্মম নির্যাতন নিপিড়নের শিকার তার ইয়ত্তা নেই। ফলে বিদেশে শ্রম বিক্রি করে ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর স্বপ্নে বিভোর হওয়ার আগে দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি প্রয়োজন যাচাইবাছাই।