ইবি উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করলেন শিক্ষকরা

 

ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকারকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করেছেন শিক্ষকরা। দাবি মেনে নেয়া হবে এমন আশ্বাস পেয়ে প্রায় দু ঘণ্টা পর শিক্ষকরা কার্যালয় ত্যাগ করেন। অবিলম্বে শিক্ষকদের দাবি না মেনে নিলে পরবর্তীতে আন্দোলনে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছেন তারা। গতকাল শনিবার দুপুরে উপাচার্যের কার্যালয়ে গিয়ে উপাচার্যের সাথে দেখা করে শিক্ষকরা এ কথা জানান।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার সকাল ১১টার দিকে শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে সমিতির নেতাকর্মীদের বৈঠক করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও শাপলা ফোরাম। ওইখানে দেড়ঘণ্টা বৈঠক শেষে ক্যাম্পাসে শোডাউন দেন শতাধিক শিক্ষক। বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল আহসান চৌধুরী ও সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারীর নেতৃত্বে শোডাউন শেষে শিক্ষকরা প্রশাসন ভবনে কার্যালয়ে গিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকারের সাথে দেখা করেন। উপাচার্যের কার্যালয়সূত্রে জানা যায়, এ সময় শিক্ষকরা উপাচার্যের কাছে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত ১৪ হাজার মাদরাসায় শিক্ষক নিয়োগ ও তদন্তের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক প্রতিনিধি বাছাইয়ে নিরপেক্ষতা এবং মাদরাসার অধিভুক্তি ও নবায়নের ক্ষেত্রে অধিকতর সচ্ছতা বজায় রাখা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদরাসা শাখায় বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপাচার্যকে বলা হয়।

জানা গেছে, দাবিগুলো নিয়ে উপাচার্যের সাথে শিক্ষকদের দীর্ঘ আলোচনা হয়। দাবিগুলো মেনে নেয়ার আশ্বাস না দেয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা উপাচার্যকে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ সময় উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান উপাচার্যের কার্যালয়ের উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৪ হাজার ফাজিল ও কামিল মাদরাসা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব মাদরাসায় শিক্ষক নিয়োগ ও তদন্তের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিভাগের কিছু নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে পাঠানো হয় আর অন্য শিক্ষকদের উপেক্ষা করা হয়। এসব মাদরাসার অধিভুক্তি ও নবায়নের ক্ষেত্রে সব নিয়ম মানা হয় না। এছাড়া আর্থিক লেনদেন ছাড়া মাদরাসা সংক্রান্ত কোনো নথিপত্রের কাজ যথাসময়ে হয় না। বিষয়টি শিক্ষক নেতারা উপাচার্যকে দফায় দফায় অবহিত করলেও এ অবস্থার কোনো পরিবতর্ন হয়নি বলে শিক্ষকদের অভিযোগ। উপাচার্যের সাথে আলোচনার সময় বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রুহুল কেএম সালেহ, শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরফিন, প্রক্টর অধ্যাক ড. ত.ম লোকমান হাকিম, ছাত্র উপদেষ্টা ও শাপলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। প্রায় দু ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর বেলা পৌনে তিনটার দিকে শিক্ষকরা সেখান থেকে চলে এলে উপাচার্য কার্যালয় ত্যাগ করেন।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মাদরাসা সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ বিশেষ করে মাদরাসায় শিক্ষক নিয়োগ ও তদন্ত, অধিভুক্তি ও নবায়নের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক প্রতিনিধি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যেন স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয় সেজন্য উপাচার্য মহোদয়কে আমরা বলেছি। বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে দেখা হবে তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।

জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন, শিক্ষকরা কতকগুলো ন্যায্য ও যৌক্তিক বিষয় আমার কাছে উত্থাপন করেছেন। বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে বলে আমি তাদেরকে জানিয়েছে। তবে তিনি অবরুদ্ধ হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।