মৌন মিছিল নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় অবস্থান ধর্মঘট : নিরাপত্তা চেয়ে সাংবাদিকদের গণজিডি
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত সাংবাদিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। নিরাপত্তা চেয়ে তারা গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় গণহারে ৪৯ জন সাংবাদিক একযোগে সাধারণ ডায়েরি করেছেন। একই সাথে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদসহ প্রকৃত হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে সদর থানা প্রাঙ্গণে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন সাংবাদিকবৃন্দ। গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ গ্রেফতার করেছে মোট ৪ জনকে। গতকাল সকালেই এদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিজ্ঞ আদালত জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে হামলার প্রতিবাদে গতকালও বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদসভার আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠক থেকে প্রেসক্লাব সভাপতি আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে সকল সাংবাদিককে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। অপরদিকে গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগ। পৃথক বিবৃতিতে দিয়েছেন বিএডিসির শ্রমিক মোমিন ইসলাম।
গতপরশু বেলা ১টা ২০ মিনিটের দিকে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় একদল দুর্বৃত্ত। হামলা চালিয়ে ৪ জন সাংবাদিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। খুনের অপচেষ্টা চলায়। চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে। গ্লাস ভেঙে তছনছ করার পাশাপাশি সাংবাদিক ও সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের ৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে হামলাকারীরা। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়। রাতের মধ্যে প্রকৃত হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ১০টা থেকে সাংবাদিকরা প্রেসক্লাবে সমবেত হন। বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্লেকার্ড নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত মানববন্ধনও করা হয়। ১১টার দিকে মৌন মিছিল সহকারে সাংবাদিকরা চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় উপস্থিত হয়ে সশরীরে গণজিডি করেন। মৌন মিছিলে সাংবাদিকেরা বিভিন্ন স্লোগান লেখা মানবপোস্টার মেলে ধরেন। মানবপোস্টারে স্লোগান ছিলো, আসামিদের গ্রেফতার করো, না হলে আমাদের ধরে রাখো, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত কেন? ইত্যাদি। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি মাহতাব উদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক সরদার আল আমিনসহ ৪৯ জন সাংবাদিক নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি করে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাব সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ প্রবীণ সাংবাদিকেরা। প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচি চলার একপর্যায়ে দুপুর ১টায় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান মুন্সী মামলার অগ্রগতির বর্ণনা দিয়ে ৪ জনকে গ্রেফতারের তথ্য জানিয়ে বলেন, হামলাকারীদের ছবি দেখে শনাক্ত করে তাদের গ্রেফতারের সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আরো কিছু সময় পেলে আমরা অবশিষ্ট হামলাকারীদের ধরে আইনে সোপর্দ করতে সক্ষম হবো।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার এ প্রতিশ্রুতির ওপর আস্থা রেখে সন্ধ্যায় নতুন কর্মসূচি গ্রহণের লক্ষ্যে সাংবাদিকরা প্রেসক্লাবে বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠক চলাকালে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতির চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি জিল্লুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তবারক হোসেন সশরীরে উপস্থিত হয়ে প্রেসক্লাবে নগ্ন বর্বরোচিত হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। প্রেসক্লাব হামলার প্রতিবাদে গৃহীত কর্মসূচির সাথে একাত্মতাও ঘোষণা করেন চেয়ারম্যান নেতৃবৃন্দ। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, যুগ্ম আহ্বায়ক মুজিবুল হক মালিক মজুসহ অনেকেই প্রেসক্লাবে হামলার দৃশ্য দেখতে হাজির হন। এ সময় বিএনপি নেতৃবৃন্দ প্রেসক্লাবে হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, পুলিশ ক্ষমতাসীন দলের তাবেদার না হলে শহরে প্রকাশ্যে অস্ত্রধারীদের মিছিল হয় কীভাবে? পুলিশ সক্রিয় হলে ওরা জেলা শহরে ভীতিকর মিছিল করে প্রেসক্লাবে নগ্ন বর্বরোচিত হামলা চালাতে পারতো না। আমরা হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে প্রেসক্লাবের সকল কর্মসূচির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছি। প্রেসক্লাবে হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক আনোয়রুল ইসলাম বাবু। তিনি বলেছেন, যে শহরের প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়, সেই শহরের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। পুলিশ প্রশাসন হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।
হামলার পর পরই চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পৌর মেয়র, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে ভাঙচুরের ক্ষতবিক্ষত দৃশ্য দেখেন। হামলায় আহত সাংবাদিকদের নিকট থেকে রোমহর্ষক বর্ণনা শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন। গতপরশু মধ্যরাত পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয় জিনতলা মল্লিকপাড়ার রাব্বি ও আজমকে। পরে গ্রেফতার করা হয় তপন ও সেতুকে। তপন চুয়াডাঙ্গা মালোপাড়ার বুড়ো মিয়ার ছেলে। তাকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। সকালে থানা চত্বর থেকে গ্রেফতার করা হয় চুয়াডাঙ্গা জিনতলা মল্লিকপাড়ার আব্দুল মান্নান মনার ছেলে সেতুকে। গ্রেফতারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিজ্ঞ আদালত তাদেরকে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।
এদিকে গতকাল পত্রিকায় প্রকাশিত ‘যুবলীগের একাংশের সশস্ত্র মিছিলে তটস্ত শহর’ সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে জেলা যুবলীগ। চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আরেফিন আলম রঞ্জু ও যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান কবীর স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জেলা যুবলীগের মধ্যে কোনো একাংশ বা গ্রুপিং নেই। খবরটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিএডিসি লেবারদের বিরোধে যুবলীগের পাল্টাপাল্টি অবস্থান খবরটি বিএডিসির লেবার সংক্রান্ত। যার সাথে চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কোনো সদস্যও জড়িত নয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগের কমিটির সকল সদস্য সকল সময়ই ঐক্যবদ্ধ।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা বিএডিসির শ্রমিক মোমিন ইসলাম পৃথক এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমি শ্রমিক নেতা। গত ২১ অক্টোবর পত্রিকায় বিএডিসি খামারের হালপাতি চুরি করে সরানোর সময় প্রতিরোধ মারপিট শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেছেন, আমি সততার সাথে আমার দায়িত্ব পালন করে আসছি। যার জন্য যুবলীগের একাংশের টেন্ডারসহ অন্যান অসৎ কাজ ও প্রভাব বিস্তার করতে পারছে না ফলে রাগে ক্ষোভে তারা আমার প্রাণহানির হুমকিসহ মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে। এরপরও আমি অনড় থাকলে তারা প্রেসক্লাবসহ শহরে নানা স্থানে অস্ত্রসহ তাণ্ডব চালাতে থাকে। তাদের ন্যাক্কারজনক ঘটনা সকলে দেখেছে। প্রতিবাদবিবৃতিতে তিনি আরো বলেছেন, চুরির অভিযোগ সঠিক নয়। বিএডিসি কর্মকর্তারা বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছেন। চুরি হয়নি।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিকদের ওপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা, ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। একই সাথে প্রশাসনের প্রতি বর্বরোচিত ওই ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি হামিদুল ইসলাম আজম, সম্পাদক আনোয়ার রশীদ, সাংবাদিক রহমান মুকুল, প্রশান্ত অধিকারী, কেএ মান্নান, শরিফুল ইসলাম রোকন, অনিক সাইফুল, নাজমুল হোসেন, মুর্শিদ কলিন, জাহাঙ্গীর হোসেন, হেলাল মাহমুদ, মাহফুজ আহমেদ, রকি, আতিকুর রহমান, জাকির হোসেন, সাইফুল ইসলাম, আব্দুল কুদ্দুস, মানোয়ার হোসেন, ডাক্তার আতিক, তৌহিদ, শিবলী প্রমুখ।
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে একদল সন্ত্রাসী কর্তৃক নগ্ন ও বর্বরোচিত হামলায় ৪ সাংবাদিক আহত ও প্রেসক্লাবের আসবাবপত্র ভাঙচুর করার প্রতিবাদে আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আলমডাঙ্গা চারতলা মোড়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদসভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহ আলম মন্টুর সভাপতিত্বে ও সহসভাপতি অধ্যক্ষ জামসিদুল হক মুনির উপস্থাপনায় প্রতিবাদসভায় বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবের সহসভাপতি আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যপক শেখ শফিউজ্জামান, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, মৌলভী আবুল কাশেম, সাংগঠনিক সম্পাদক ইউনুছ আলী মণ্ডল, অর্থসম্পাদক মামুন কাইরুল, সাহিত্য সম্পাদক জামিরুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক রুনু খন্দকার, সাংবাদিক মহাসিন আলী হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, সৈয়দ সাজেদুল হক মনি, বিএম নাহিদ, মানোয়ার হোসেন ও জ্যোতি উজ্জামান রহিম খান।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, সশস্ত্র মিছিল থেকে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ভাঙচুর ও সংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় জীবননগর প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে জীবননগর বাসস্ট্যান্ড চত্বরে এ প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। হামলার ঘটনায় দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- প্রেসক্লাব সভাপতি আনোয়ারুল কবির, সহসাধারণ সম্পাদক জিএ জাহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক কামাল সিদ্দিকী বাবু, এমআর বাবু, সামসুল আলম, নারায়ণ ভৌমিক, সালাউদ্দীন কাজল, আবজালুর রহমান ধীরু, কাজী সামসুর রহমান চঞ্চল, রায়হানউদ্দীন, এসএম আবুল কালাম আজাদ, মামুন-উর-রহমান, শেখ শহিদ, আবু সায়েম, আশাবুর রহমান, সাব্বির আহমেদ, আরফান কবির, মারুফ মালেক প্রমুখ।