স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গতকাল নীলফামারীতে এক বিশাল জনসভায় আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমরা সময়মতো আন্দোলনের ডাক দেব। সেই আন্দোলনে এ সরকারকে বিদায় করেই আমরা ঘরে ফিরবো। জয় আমাদের হবেই। অনেক মার খেয়েছি। এবার রক্ত দেয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত। আন্দোলনের দিনক্ষণ উল্লেখ না করে তিনি বলেন, কবে আন্দোলন শুরু করব তা আমি এখন বলবো না, সময়মতো জানাবো। আগে মানুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত্ করে নিই। তারপর সবাই মিলে আন্দোলনের ডাক দেব। গতকাল নীলফামারী শহরের বড় মাঠে ২০ দলীয় জোট আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। সমাবেশকে ঘিরে পুরো শহরে ছিল উত্সবের আমেজ। রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁওসহ সন্নিহিত জেলাগুলো থেকে বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন বাহনে করে মানুষ জনসভাস্থলে আসে।
খালেদা জিয়া বলেন, পৃথিবীর কোন দেশ এ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। সরকার দ্বারে-দ্বারে ঘুরে স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করছে। তারা ভাবছে বিদেশিদের সাথে ছবি তুললেই স্বীকৃতি আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু তাদের সঙ্গে ছবি উঠালেই স্বীকৃতি হয় না। ছবি উঠিয়েই মনে করবেন না যে, স্বীকৃতি পেয়ে গেলেন। দেশে গণতন্ত্র না থাকলে বিদেশিরা কোনদিন স্বীকৃতি দেবে না। বিদেশিরা দেখেছে, এ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, তাই তারা স্বীকৃতি দিচ্ছে না।
৩০ অক্টোবর নাটোরে সমাবেশ আছে। আগে জনগণের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত্ করে নিই। তারপর আন্দোলনের ডাক দেব। আসুন, আজকে সকলে ঐক্যবদ্ধ হই। যারা দেশের পক্ষে থেকে, মানুষের পক্ষে থেকে আন্দোলন করে তারা পরাজিত হতে পারে না। জয় আমাদের হবেই। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা নাকি অনেক ভাল কাজ করেছেন। তাহলে ভোটে আসেন। ভোটে প্রমাণ হয়ে যাক। জনগণ আপনাদের ভোট দিলে আপনারাই ক্ষমতায় যাবেন। আমাদের কিছুই বলার থাকবে না।
খালেদা জিয়া নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে বলেন, যে নির্বাচন কমিশন আছে তারা অথর্ব। এ অথর্ব নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তাই এ কমিশনকে বাতিল করে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, যারা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেন-সেই ডিসি, এসপি, ওসি নিরপেক্ষ না হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। খালেদা জিয়া তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের কি ভোট দিতে ইচ্ছে করে না? কিন্তু এ অবৈধ সরকার তোমাদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। অধিকার কেড়ে নিলে আন্দোলন করতে হয়। তাই কঠোর আন্দোলন করতে হবে। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করতে হবে। তাহলেই সর্বস্তরের মানুষ ভোট দিতে পারবে।
খালেদা জিয়া বলেন, এ অঞ্চল কৃষিপ্রধান। আপনাদের মনে নেই, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ওয়াদা করেছিলো ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে? কিন্তু দেয়নি। কৃষকদের বলেছিল বিনামূল্যে সার দেবে? দেয়নি। এরা মিথ্যাবাদী। বরং আমাদের সময় থেকে এখন সারের মূল্য তিনগুণ বাড়িয়েছে। কৃষকদের উত্পাদন খরচ উত্পাদিত পণ্য বিক্রি করে পায় না। সরকারও কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে উত্পাদিত ফসল কিনে না। কিন্তু ক্রয়ক্ষমতা আজ জনগণের নাগালের বাইরে চলে গেছে। এ সরকার ব্যস্ত লুটপাট এবং কমিশন নিয়ে। কোথায় টাকা পাওয়া যাবে, তাই নিয়ে তারা ব্যস্ত। জনগণের দিকে নজর দেয়ার সময় পাচ্ছে না।
খালেদা জিয়া বলেন, এ সরকার নতুন নতুন আইন করছে। সম্প্রচার আইন করছে, অভিশংসন আইন করছে। বিরোধী দলের মুখ বন্ধ করতে সম্প্রচার নীতিমালা করা হয়েছে। এরই মধ্যে অনেককে নিষিদ্ধ করেছে, তাদের টকশোতে নেয়া যাবে না। এর আগেও তারা একদলীয় শাসন কায়েম করেছিল। চারটি বাদে সবগুলো কাগজ বন্ধ করে দিয়েছিল। এবারও করছে। তাই এদের উপর ভরসা করা যায় না। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, এগুলো বাদ দেন।
র্যাব গঠনের প্রেক্ষাপট এবং তাদের বর্তমান অবস্থান প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, র্যাব গঠন কেন করতে হয়েছিল? ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছিল। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বন্ধ করতে আমাদের র্যাব গঠন করতে হয়েছিল। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য, মানুষ খুন-গুম করার জন্য র্যাব গঠন করা হয়নি। কিন্তু এখন তাদের সে কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছে। কিন্তু এ সরকার দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করছে। এ সরকার জানে কেবল কথায় কথায় মামলা দায়ের করতে।
খালেদা জিয়া বলেন, দেশে এখন বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে না। দেশে যারা বিনিয়োগ করছে তারাও বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ সরকার গ্যাস, পানি, বিদ্যুত্ দিতে পারে না। সরকারি দলের নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজিতে বিনিয়োগকারীরা অতিষ্ঠ। দেশে বিনিয়োগ না থাকায় উন্নয়ন থমকে গেছে। দেশে বেকারত্ব বাড়ছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী খেয়ে দেয়ে বেশ মোটা তাজা হয়েছিলেন। পরে দুদক তার বিরুদ্ধে তদন্ত করেছিল। কিন্তু দুদক তাকে দায়মুক্তির সার্টিফিকেট দিয়েছে। এখন মন্ত্রীরা বিয়ে করতেও শুরু করেছেন। তিনি বলেন, সরকারের দুর্নীতিবাজদের তদন্তের নামে দুদক বলছে, তাদের কোন দুর্নীতি পাওয়া যায় না।
নীলফামারী জেলা বিএনপির আহবায়ক এ্যাডভোকেট আনিছুল আরেফিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এসময় আরও বক্তব্য রাখেন এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মজিবর রহমান, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, খেলাফত মজলিশের আমীর মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের আমীর মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, সমাবেশের সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহীম, ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি, খন্দকার গোলাম মরতুজা, ডা. খন্দকার জিয়াউল ইসলাম জিয়া, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সামসুজ্জামান জামান, বিলকিস ইসলাম, আলমগীর সরকার, আমজাদ হোসের সরকার, সৈয়দ আলী, মনছুরুল ইসলাম দানু, মীর সেলিম ফারুক, মোস্তফা হক প্রধান বাচ্চু, ফাহমিদ ফয়সাল কমেট চৌধুরী, জহুরুল আলম, মোরশেদ আজম, রংপুর মহানগর সেক্রেটারি সামসুজ্জামান সামুসহ ২০ দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। বেগম খালেদা জিয়া জনসভা শেষে রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।