পিস্তলটি সন্ত্রাসীর কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন এসআই

স্টাফ রিপোর্টার: সিএনজিচালক শাহ আলমের দু পায়ে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানার এসআই আনোয়ার হোসেনকে দু দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এসআই আনোয়ার হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগটি খতিয়ে দেখতে পুলিশের দু সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটিও কাজ শুরু করেছে। তদন্ত কমিটি ঘটনার দিন সিএনজি চালকের কাছ থেকে উদ্ধার দেখানো অবৈধ পিস্তলের উৎসের সন্ধান করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এসআই আনোয়ার হোসেনকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হলে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মারুফ হোসেন দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

অবৈধ পিস্তলটির উৎসের সন্ধানে: গত ১৯ অক্টোবর রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানাধীন তালতলায় সাজানো বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় সিএনজিচালক শাহ আলম আহত হন। পরে ঘটনাস্থল থেকে একটি অবৈধ পিস্তল ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার দেখায় এসআই আনোয়ার। বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাটি সাজানো এবং পরকীয়ার জের ধরে শাহ আলমকে গুলি করা হয়েছে এ ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর এখন প্রশ্ন উঠেছে, উদ্ধার করা পিস্তল ও গুলি এসআই আনোয়ার পেলেন কোথায়? এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার ওয়াহিদ আলম বলেন, অস্ত্রটির উত্স সম্পর্কে জানা যায়নি। বিস্তারিত তদন্তে এটি জানা যাবে। তবে শেরেবাংলানগর থানার একটি সূত্র জানায়, শেরেবাংলানগর থানার আগে মোহাম্মদপুর থানায় দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন এসআই আনোয়ার। স্থানীয় অস্ত্রধারী অনেক সন্ত্রাসীদের সাথে তার পরিচয় ও যোগাযোগ রয়েছে। তাদের কারো কাছ থেকে পিস্তল ও গুলি সংগ্রহ করা হয়ে থাকতে পারে।

পা কাটতে হবে না শাহ আলমের: ঘটনার দিন শাহ আলমের দু পায়ে শর্টগান দিয়ে গুলি করা হয়। এ কারণে তার পায়ের মাংসপেশী ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। তবে হাড়ে কোনো ফ্র্যাকচার হয়নি। ক্ষতস্থান ভরাট হতে অনেক সময় লাগবে। শাহ আলমকে তত্ত্বাবধানকারী পঙ্গু হাসপাতালের চিকিত্সক গোলাম ফারুক জানিয়েছেন, আপাতত পা কেটে ফেলতে হবে না। তবে তার সেরে উঠতে অনেক সময় লাগবে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানসিক সক্ষমতা পরীক্ষা করা প্রয়োজন: গতকাল পঙ্গু হাসপাতালে চিকিত্সাধীন দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ শাহ আলমকে দেখতে গিয়ে জাতীয় মানবধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, যারা অস্ত্র বহন করেন – তারা দায়িত্ব পালনে মানসিকভাবে সক্ষম ও প্রস্তুত কিনা তা পরীক্ষা করা দরকার। এ সময় শাহ আলম জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া ও গুলি করার ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন।

ড. মিজান বলেন, দেশের সাধারণ নাগরিকদের সাথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এরকম নির্মম আচরণ করতে পারে না। এজন্য প্রতি সপ্তাহে না হলেও মাসে অন্তত একবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যে সব সদস্য অস্ত্র বহন করেন, তাদের মানসিক সক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। কারণ তাদের মানসিক চাপের কারণে যদি এমনটা ঘটে তাহলে তা দুঃখজনক। তিনি বলেন, বছর দুয়েক আগে লিমনের সঙ্গে অনুরূপ একটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলাম। এক পর্যায়ে রাষ্ট্র বাধ্য হয়েছে, তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে নিতে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শকের প্রতি এই অন্যায় আচরণের বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখানে কোনো ধরনের ছলচাতুরি, কোনো ধরনের মিথ্যা বা বানোয়াট খেলা কমিশন সহ্য করবে না।