উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এলেও আসেন না বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী

গাংনী হাসপাতালের কর্মচারী অনেকেই জানে না অফিস শুরুর সময়

 

মাজেদুল হক মানিক: বারোটায় অফিস আসি, দুটোয় টিফিন, তিনটায় যদি মেলে সিগনাল গ্রিন…… প্রখ্যাত গায়ক নচিকেতার এ সঙ্গীতের যথার্থ প্রমাণ মিলেছে মেহেরপুর গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তথা গাংনী স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে। বিশেষ করে গতকাল বৃহস্পতিবার এ গান যেন সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রাণে দোলা দেয়। তারা অন্য দিনের মতো এদিনে যেমন দেরিতে অফিসে আসেন তেমনি আগেই চলে যান অফিস ছেড়ে। তবে বড় কর্তা অর্থাৎ উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. মনিরুল হক সকাল সাড়ে সাতটার দিকে অফিসে পৌঁছুলেও বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও চিকিৎসকরা আসেন অফিস শুরুর এক থেকে দু ঘণ্টা দেরিতে। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য হাসপাতাল বিভিন্ন অফিস ঘুরে পাওয়া গেছে ভিন্ন ভিন্ন চিত্র।

গাংনী স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের সরকারি অফিস সময় সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মা ও শিশু স্বাস্থ্য ইউনিটের (এমসিএইচ) আয়া সালেহা বেগম জানেন না তার অফিস কয়টায়। তিনি এসেছেন সকাল ৮.৩০ মিনিটে। প্রধান সহকারী মাহাবুব ওরফে মহব্বত, মেডিকেল অফিসার ডা. ইসমত জেরিন, অফিস সহকারী নাজনীন আক্তার, জাফর ও মনিরুল এসেছেন সকাল সাড়ে ৮টায়। ডা. নিলুফা ও এমটি ল্যাব মাহবুব সকাল পৌনে ৯টায়, পিয়ন তাজমহল, আয়া সাবিনা এসেছেন ৯টায়। ফার্মাসিস্ট মহিদুল ও জুনিয়ার ম্যাকানিক্স সরওয়ার এসেছেন সাড়ে ৯টায়। মহিদুল তার পুত্রের অসুস্থতার জন্য দেরিতে এসেছেন বলে জানান। সেনিটারি ইন্সপেক্টর মশিউর এসেছেন সাড়ে ৯টায়। স্যাকমো কামরুন্নাহারও এমসিএইচ ইউনিটের এফডাব্লিউভি গেনিয়ারা অফিসে আসেন ১০টায়।

গেনিয়ারা জানান, তারা বাড়ি দূরে। নসিমনে আসতে গিয়ে দেরি হয়। এটি কি অন্যায় কিংবা অনৈতিক কি-না প্রশ্ন করলে তিনি ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেন। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ গেনিয়ারাসহ এমসিএইচ ইউনিট খোলা হয় সকাল দশটার পরে। কিন্তু সকাল আটটা থেকেই গর্ভবতী মা ও শিশুরা চিকিৎসা নিতে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করলেও টনক নড়েনি জেলা কিংবা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের। অভিযোগ রয়েছে, ওই বিভাগের উদাসীনতায় ও অসাধু কিছু কর্মকর্তাকে খুশি করে দিনের পর দিন কর্মচারীরা এভাবেই অফিস ফাঁকি দিচ্ছেন।

এমসিএইচ ইউনিটে চিকিৎসা নিতে আসা মটমুড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের স্ত্রী রুমিয়া খাতুন (ডিএইচএফ রেজিঃ নং ১৫১৯) বলেন, তিনি গতকাল সকাল ৮টা ২০ মিনিটে এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। দশটার দিকে গেনিয়ারা এলে তার চিকিৎসা শুরু হয়। তবে নির্ধারিত সময় অফিস ফাঁকি দিলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে আশার বাণী শোনালেন ওই ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার (মা ও শিশু) রফিকুল ইসলাম।

এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গিয়ে দেখা গেছে আরো ভয়াবহ চিত্র। ডিসপেন্সারি বিভাগের সবাই চলে গেছেন। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ছাড়া কোনো চিকিৎসককে পাওয়া যায়নি। প্যাথোলজি বিভাগের কর্মচারী অফিস ছুটি করেছেন দুপুর একটার আগেই। প্রধান সহকারী মাহাবুব ওরফে মহব্বত সকাল সাড়ে ১০টার পর পরই কাউকে না জানিয়ে চলে গেছেন।

গাংনী স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের ঘুরে জানা যায়, ফার্সাসিস্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থাৎ ফার্মাসিস্ট ও টিকেটম্যান সকাল দশটার দিকে এসে তাদের কক্ষ খুলে বসেন। বারোটার আগেই ওষুধ কাউন্টার বন্ধ করে বাড়িতে চলে যান। সকাল ও দুপুরের দিকে অনেক অসহায় রোগী সেবা নিতে এসে খালি হাতে ফিরে যান।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা মনিরুল হক জানান, এর আগে আরো ভয়াবহ অবস্থা ছিলো। তিনি সম্প্রতি যোগদানের পর কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সঠিক সময়ে অফিস করতে বললে অনেক কর্মচারী তাকে বদলির হুমকি দেন বলে জানান তিনি। এর আগে হাজিরা খাতায় কয়েকজনের বিলম্ব লেখায় হাজিরা খাতা গায়েব হয়ে যায়। পরে অবশ্য নতুন কেনা হয়েছে। তবে শনিবার থেকে অফিসের কারো বিলম্ব হলে বেতন কর্তন এমনি কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হবে বলে জানান তিনি।

মেহেরপুর সিভিল সার্জন ইসমাইল ফারুক জানান, বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের। তিনি পত্র মারফত জানালে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এরপরেও তিনি বিষয়টি নজরদারি করে পরবর্তীতে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।

Leave a comment