মাজেদুল হক মানিক: কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মেহেরপুর জেলার চামড়া ব্যবসায়ীরা। চামড়া ব্যবসার সাথে জড়িত নন এমন কিছু ব্যক্তি চড়া দামে চামড়া কিনেছেন। ফলে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের কাছে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ চামড়া পৌছায়নি। বাড়তি দাম দিয়ে যা কিনেছেন তাও আবার বিক্রি হচ্ছে না। এতে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা।
মেহেরপুর জেলা ও গাংনী উপজেলা শহরের চামড়া ব্যবসায়ীরা কয়েক যুগ ধরে ব্যবসা করছেন। এর বাইরে অন্য কোথাও তেমন কোনো ব্যবসায়ী নেই। প্রতি বছর জেলায় যতো পশু কোরবানি হয় তার প্রায় শতভাগ চামড়া ওই দু শহরের ব্যবসায়ীরা কিনে থাকেন। জেলায় প্রতি বছর ২০-২৫ হাজার কোরবানির পশুর চামড়া কেনা-বেচা হয়। কিন্তু এবার তার অর্ধেক চামড়া কিনতে পেরেছেন ব্যবসায়ীরা।
গাংনী বাজারের চামড়া ব্যবসায়ী সামসুজ্জোহা জানান, সরকারের বেধে দেয়া মূলে চামড়া কেনা সম্ভব হয়নি। কারণ হিসেবে তিনি বললেন, সরকারি দরে কেনাবেচা হলে ছাগলের চামড়া ১২০-১৫০ টাকা এবং গরু-মোষের চামড়া ১৫০০-২০০০ টাকা হতো। কিন্তু অব্যবসায়ীরা ছাগলের চামড়া ৫শ টাকা এবং গরু-মোষের চামড়া কিনেছেন ৩০০০-৩৫০০ টাকা পর্যন্ত। এ কারণে চামড়া ব্যবসায়ীরা কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ চামড়া কিনতে পারেননি।
মেহেরপুর জেলার তিনটি উপজেলাতেই রয়েছে ভারতীয় সীমান্ত। বিশাল সীমান্ত এলাকার পার্শ্ববর্তী কোনো গ্রামের চামড়া শহরের চামড়ার দোকানে বিক্রি হয়নি বলে জানান চামড়া ব্যবসায়ীরা। চড়া দাম পেয়ে তারা পাচারকারীদের কাছে চামড়া বিক্রি করেছেন।
চামড়া ব্যবসায়ী তুহিন আহম্মেদ জানান, সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোতে একেকটি ছাগলের চামড়া ভারতীয় ৫শ রুপিতে কিনেছে অসাধু মরসুসি চামড়া ক্রেতারা। সীমান্তের কাঁটাতারের ওপর দিয়ে তারা বিপুল পরিমাণ চামড়া ভারতে পাচার করছে। এতে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা চামড়া খুঁজে পাননি। তাই বাড়তি দাম দিয়ে চামড়া কিনতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
গাংনীর আরেক চামড়া ব্যবসায়ী হাফিজুল ইসলাম জানান, চোরাকারবারীদের দেয়া বেশি দামের কারণে তারা চড়া মূল্যে চামড়া কিনতে বাধ্য হয়েছেন। কুষ্টিয়া ও পাবনার মহাজনদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে চামড়া বিক্রি করলেও এবার তারা সাড়া দিচ্ছেন না। মোকামে চামড়া কিনতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন মহাজনরা। তাই বেশি সময় ধরে চামড়া সংরক্ষণ করতে গিয়ে লবণ ও শ্রমিক খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে মুনাফা তো দূরে থাক কেনা মূল্যে উঠবে কি-না তা নিয়ে ব্যবসায়ীরা চরম শঙ্কিত।
চামড়া ব্যবসায়ীদের দাবি অব্যবসায়ী যারা চামড়া কিনেছে তারা চামড়া কোথায় বিক্রি করেছেন? এতো দাম দিয়ে কেনই বা তারা চামড়া কিনলেন। এসব বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই পাচারের বিষয়টি বেরিয়ে আসবে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া না হলে দেশের চামড়া শিল্পের মারাত্মক ক্ষতি হবে।
চামড়া পাচারের বিষয়টি মানতে নারাজ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিজিবি কাথুলি কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার রফিকুল ইসলাম জানান, শতভাগ সত্যি একটি চামড়াও পাচার হয়নি। ঈদের দিন সকাল থেকে সীমান্তে বিজিবির কঠোর নজরদারি রয়েছে। এছাড়াও পাচার ঠেকাতে সীমান্তে বিএসএফ’র প্রতিনিধিদের সাথে নিয়মিত কথাবার্তা চলছে।