জাতীয় অধ্যাপক সালাহউদ্দিন আর নেই

 

স্টাফ রিপোর্টার: একুশে পদক ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারপ্রাপ্ত জাতীয় অধ্যাপক সালাহউদ্দীন আহমদ আর নেই (ইন্নালিল্লাহে…রাজেউন)। গতকাল রোববার ভোর ছয়টার দিকে বনানীর নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন এ ইতিহাসবিদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯৩ বছর। তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। এ ইতিহাসবিদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ। প্রধানমন্ত্রী তার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে মরহুমের বনানীর বাসভবনে মরদেহ দেখতে যান। এ সময় তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।

গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এ সময় তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। আগামী বুধবার বাদ আছর গুলশান আযাদ মসজিদে মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন মরহুম সালাহ উদ্দীনের চাচাতো ভাই আবদুল মতিন। এর আগে বাদ আছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তার নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ.আ.ম.স আরেফিন সিদ্দিক, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. শামছুজ্জামান খান প্রমুখ। গতকাল রোববার দুপুর পৌনে তিনটার দিকে সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সালাহ উদ্দীন আহমদের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়। এরপর একে একে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগসহ সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মেজর জেনারেল জয়নাল আবেদিন ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাজেদা চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, এসএম কামাল হোসেন, দীপু মনি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়াও সম্মিলিত সাংষ্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে নাসির উদ্দিন ইউছুফ বাচ্চু শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অধ্যাপক সালাহউদ্দীন আহমদ ১৯২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ড. সালাহ উদ্দীন আহমেদ ঢাকার জগন্নাথ কলেজে ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। এখানে কর্মরত অবস্থায় সালাহ উদ্দীন আহমদসহ অন্য শিক্ষকরা ছাত্রদের ভাষা আন্দোলনে উত্সাহিত করতেন। ১৯৫৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হওয়ার পর সেখানে তিনি ইতিহাস বিভাগে যোগ দেন। পরে পর্যায়ক্রমে তিনি ওই বিভাগের রিডার ও প্রফেসর পদে উন্নীত হন। ১৯৭৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করে বর্ণাঢ্য অধ্যাপনা জীবন শেষে ১৯৮৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো কয়েক বছর সংখ্যা অতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে- সোশাল আইডিয়াস অ্যান্ড সোশাল চেঞ্জ ইন বেঙ্গল: ১৮১৮-১৮৩৫, বেঙ্গলি ন্যাশনালিজম অ্যান্ড দ্য এমারজেন্স অব বাংলাদেশ: অ্যান ইনট্রোডাকটরি আউটলাইন, হিস্ট্রি অ্যান্ড হেরিটেজ: রিফ্লেকশনস অন সোসাইটি পলিটিক্স অ্যান্ড কালচার অব সাউথ এশিয়া প্রভৃতি। ২০১১ সালে জাতীয় অধ্যাপক হন সালাহ উদ্দীন আহমদ।

অধ্যাপক সালাহউদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ.আ.ম.স আরেফিন সিদ্দিক গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ শোক প্রকাশ করেছে।