দেশে ওষুধ বিক্রির নামে অনাচার চললেও দেখার কেউ নেই। কর্মকর্তারা ফার্মেসি খোলার অনুমতি দিয়ে আয়েশে যখন অফিস করেন, তখন বিক্রেতারাই ডাক্তার সেজে বসেন। এ দৃশ্য শুধু চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহের নয়, সারা দেশের।
স্পর্শকাতর, ঝুঁকিপূর্ণ নানা ওষুধ তারা বিনা ব্যবস্থাপত্রে তুলে দেন গণমানুষের হাতে। অনেক ওষুধেরই যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে, সে বিষয়েও অনেক ওষুধ বিক্রেতার জ্ঞান নেই। নিম্নমানের, এমনকি ভেজাল ওষুধ গচিয়ে দিতেও তাদের বাধে না। ফলে রোগমুক্তির বদলে অনেক ক্ষেত্রেই জটিলতা বাড়ছে।
ভেজাল ওষুধে, অপচিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা তো ঘটেছে বহুবার। বছরের পর বছর ধরে এমন নৈরাজ্য চলছে, গণমাধ্যমে খবর আসছে, কর্তৃপক্ষের সমালোচনা হচ্ছে- এটুকুই। সংকটের সমাধান মেলে না, দায়ী ব্যক্তিদেরও তোলা হয় না কাঠগড়ায়। নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে না ওঠার সুযোগে ফার্মেসিভিত্তিক ভয়ঙ্কর ডাক্তারির প্রবণতা বন্ধ হওয়া দূরের কথা, সবাই যেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। গতকালই একটি সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, ৮৭ শতাংশ ওষুধ বিনা ব্যবস্থাপত্রে বিক্রি হচ্ছে এবং ৬৪ শতাংশ বিক্রেতা উপসর্গ শুনে নিজেরাই ‘ডাক্তারি’ করছেন। এ প্রসঙ্গে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক বলেছেন, বাধ্যবাধকতায় কঠোরতা এনে নতুন করে ওষুধ আইন তৈরির কাজ চলছে। জাতীয় ওষুধনীতি, নতুন ওষুধ আইন- এমন অনেক কিছুরই আশ্বাস আমরা নিয়মিত পাই। আশ্বাস আর আলোর মুখ দেখে না এবং এ ক্ষেত্রেও ওষুধ প্রস্তুতকারী মহল থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট অনেকের কালো হাতের প্রভাবের কথা শোনা যায়। স্বাস্থ্যখাতে বিশৃঙ্খলার ফলে গণমানুষের ভোগান্তি, নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়া, অকালমৃত্যু- এ বিষয়গুলো কি আমাদের নীতি নির্ধারকদের আদৌ ভাবায়? ভাববেনই বা কেন! মন্ত্রী-এমপি, রাজনীতিবিদ ও বিত্তবানদের চিকিৎসাসেবা থাকে আকাশপথে ঘণ্টা কয়েকের দূরত্বে। টিকেট কেটে বিমানে চড়তে পারলেই হলো। তাদের চিকিৎসার তথ্য যখন জাতীয় খবর হয়, তখন ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ আর হাতুড়ে ডাক্তারির শিকার হয়ে সাধারণ মানুষ সবার অগোচরে মারা যায়।
দেশে অনুমতিপ্রাপ্ত ফার্মেসির তুলনায় বেশ কয়েক গুণ বেশি ওষুধ বিক্রির প্রতিষ্ঠান থাকলেও সেগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চলে না। নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি ও বাজারজাতকারীরাও শাস্তি পায় না। এই যদি কোনো দেশের বাস্তব চিত্র হয়, সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? স্বাস্থ্যখাতের অবকাঠামোগুলো কার্যকর করতে হব। নিশ্চিত করতে হবে সবার জন্য নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা; কারণ এটা মানুষের মৌলিক অধিকার। শাস্তির আওতায় আনতে হবে জনস্বাস্থ্যবিরোধী মহলগুলোকেও। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিরও উদ্যোগ জরুরি।