ধার-দেনায় জর্জরিত ব্যবসায়ীদের রাতের ঘুম হারাম

দামুড়হুদায় লাটকে লাট চামড়া অবিক্রিত : মোটা অঙ্কের লোকসানের আশঙ্কা

 

বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদায় গুদামজাত করা লাটকে লাট চামড়া অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে। বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ওই সমস্ত চামড়া ক্রয় করে এখনও পর্যন্ত তা বিক্রি করতে না পেরে মোট অঙ্কের লোকসানের আশঙ্কায় রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীদের। লোকসান কমাতে কোরবানি ঈদে কেনা ওই সমস্ত গরু-মোষের চামড়া লবন দিয়ে গোডাউনজাত করে রেখেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। চামড়ার আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য পূর্বের ন্যায় থাকলেও বাংলাদেশের ট্যানারি মালিক ও মহাজনরা সিন্ডিকেট করে এ অবস্থার সৃষ্টি করেছেন বলে স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীদের অভিমত। মোটা অঙ্কের লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা চলতি কোরবানি মরসুমে গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৯০ থেকে ১০০ টাকা দরে এবং ছাগলের চামড়া ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে ক্রয় করেছেন। অন্যান্য বছরে চামড়া কেনার এক সপ্তার মধ্যে সমস্ত চামড়া বিক্রি হয়ে গেলেও এ বছর ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও বিক্রি করতে পারেনি একটি চামড়াও।

দামুড়হুদা উপজেলা সদরের দাসপাড়ার স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ী কার্ত্তিক দাস জানান, আমি এ বছর প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার চামড়া কিনেছি। এলাকার মরসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিছু চামড়া বাকিতে নেয়া হয়েছে। কিন্তু বিক্রি নেই। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বহির্বিশ্বে চামড়ার বাজার আগের মতো থাকলেও ঢাকার বাজার খুবই কম। তাই লবন দিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে।

দাসপাড়ার অপর চামড়া ব্যবসায়ী বিমল দাস জানান, আমি এ বছর প্রায় ৫ লাখ টাকার চামড়া কিনেছি। আমি নাটোরে ব্যবসা করি। এনজিও প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চামড়া কেনা হয়েছে। এছাড়া এলাকার বিভিন্ন মাদরাসা, এতিমখানা থেকেও বাকিতে নেয়া হয়েছে বেশ কিছু চামড়া। কিন্তু বিক্রি নেই। মহাজনরাতো আসছেই না বরং তাদের ফোন করলে তারা ফোনও ধরছে না। ফলে একদিকে যেমন চামড়া বেঁচতেও পারছি না অন্যদিকে পরিশোধও করতে পারছি না পাওনাদারদের বকেয়া টাকা। পাওনাদাররা বারবার তাগাদা দিচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে শেষমেষ ভিটে জমি বিক্রি করে ধার দেনা মেটানো ছাড়া উপায় থাকবে না। ঢাকা ও চিটাগাঙের টেনারি মালিকরা চামড়ার দাম কমানোর জন্য সিন্ডিকেট করেছে। ফলে চামড়া নিতে যাচ্ছে না। তিনি আরো জানান, ব্যবসায়ী জীবনে এ রকম দুরাবস্তা আর কখনও হয়নি।

স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ী দামুড়হুদার তোফাজ্জেল হোসেন জানান, আমার ঘরে ৩৫-৪০ জন ব্যাপারী আছে। তারা যে দামে চামড়া কিনেছে তার চেয়ে একটু বেশি দাম দিয়েই কিনে রাখা হয়েছে। এ বছর প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার চামড়া কেনা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সরকার চলতি মরসুমে গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৬০-৬৫ এবং ছাগল ৩০-৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও আমাদের গরুর চামড়া কিনতে হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা এবং ছাগলের চামড়া কিনতে হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা দরে। ঢাকার অধিকাংশ মহাজনরা এখনও পর্যন্ত চামড়া কেনার ব্যাপারে যোগাযোগ করেনি। দু-একজন মহাজনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা যে দাম বলছে তাতে মোট অঙ্কের লোকসান হবে। ফলে সমস্ত চামড়াই লবন দিয়ে গোডাউনজাত করে রেখে দেয়া হয়েছে। চামড়ার আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য পূর্বের ন্যায় থাকলেও বাংলাদেশের ট্যানারি মালিক ও মহাজনরা সিন্ডিকেট করে এ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। আমরা সরকারের দিকে চেয়ে আছি। স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ী দামুড়হুদার ঠাণ্ড, গোবিন্দহুদার সুনিল, কাঁঠালতলার দিলিপ, দর্শনার শ্যামল, মেহেরপুর তারানগরের আজিজ, মহেশপুরের ঘুঘরী পান্তাপাড়ার ইকারদ্দিন অভিন্ন সূরে জানালেন, তাদের উৎকণ্ঠার কথা। প্রায় দু কোটি টাকার চামড়া ধার দেনা করে কেনা হয়েছে। যদি দু-এক মাসের মধ্যে বিক্রি না হয় তাহলে সমস্ত চামড়াই নষ্ট হয়ে যাবে। ভিটেমাটি বিক্রি করেও ধারদেনা শোধ হবে না বলেও জানান তারা।