ডাক্তার না হয়েও সব রোগের চিকিৎসায় দিচ্ছেন ইনজেকশন

চুয়াডাঙ্গার হাতিকাটা মোড়ে আজিজ মেডিকেল হলে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসার মহোৎসব

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার হাতিকাটা মোড়ের আজিজ মেডিকেল হল এখন মহাচিকিৎসা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখানে এমন কোনো চিকিৎসা নেই যে আজিজ করে থাকেন না। এখানে দরিদ্র রোগীরা বিভিন্নভাবে প্রতারিত হচ্ছেন। আজিজ কোনো চিকিৎসক না হয়েও অবাধে খেয়াল-খুশি মতো চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। ফলে অনেকেই ভুল চিকিৎসার কারণে জটিল-কঠিন সমস্যায় ভুগছেন।

অভিযোগকারীরা জানান, চুয়াডাঙ্গার আলুকদিয়া ইউনিয়নের হাতিকাটা মোড়ে আজিজ মেডিকেল হলের মালিক নিজেকে ডা. পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছেন। বাতব্যথা, মাজার ব্যথা, হাঁটুর ব্যথা, জয়েন্টের ব্যথা, বার্ধক্যজনিত ব্যথাসহ সকল প্রকার রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তার কাছে গেলেই তিনি বাড়তি বিল করার মানসে রোগীর শরীরে ইনজেকশন পুশ করে থাকেন। তার প্যাডে লেখা আছে এলএমএফপি (কুষ্টিয়া) জিপি। চুয়াডাঙ্গার একজন বিশিষ্ট চিকিৎসকের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এটা কোনো ডিগ্রি নয়। এটা প্যাডে লিখে তিনি নামে ডা. মো. আজিজুর রহমান ব্যবহার করতে পারেন না। আজিজুর রহমান প্রায় সব রোগীর শরীরেই মোনাশক নামের একটি ইনজেকশন পুশ করে থাকেন। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার ওই বিশিষ্ট চিকিৎসক বলেন, এ ধরনের ইনজেকশন না জেনেশুনে রোগীকে দিলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাছাড়া রোগীর কিডনি নষ্ট, লিভার বা ফুঁসফুঁসে সমস্যা হতে পারে। কেউ কেউ অভিযোগ করে জানান, ১৫ টাকা মূল্যের ব্যথানাশক ইনজেকশন এক সাথে ৪-৫টি করে রোগীর শরীরে দিয়ে ৭-৮শ টাকা করে হাতিয়ে নেন আজিজুর রহমান।

অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে বিবরণে সরেজমিনে হাতিকাটা মোড়ে আজিজ মেডিকেল হলে গিয়ে দেখা যায়; ৫০ থেকে ৬০ বছরের নারী ও পুরুষ মিলে ১৫-২০ জন রোগী ব্যথাজনিত সমস্যা নিয়ে কথিত ডা. আজিজুর রহমানের শরণাপন্ন হয়েছে। রোগীর মুখ থেকে রোগের বর্ণনা শুনে এক সাথে ৪-৫টি ব্যথানাশক ইনজেকশন শরীরে পুশ করছেন এবং প্রতিটি রোগীকে একই কায়দায় চিকিৎসা দিচ্ছেন। চিকিৎসা নিতে আসা নতিপোতা ইউনিয়নের পোতারপাড়া গ্রামের চান্দালীর স্ত্রী বলেন, এ ডাক্তারের কাছে যে দিনই আসি ৪-৫টি করে ইনজেকশন দেন। ইনজেকশন দেয়ার পর এক সপ্তা কোনোরকম ভালো থাকি। তারপর আবার ব্যথা বাড়লে আসি। আবার ইনজেকশন দেন। প্রতিদিন ৬-৭শ টাকা করে বিল নেন ডাক্তার। এখন আমার আর এ ইনজেকশনে কাজ হচ্ছে না। তাই ইনজেকশন পরিবর্তন করে অন্য ইনজেকশন দিলো। দেয়ার পর থেকেই বমি হচ্ছে। কলাবাড়ি রামনগর গ্রামের মৃত আবুল ফজলের স্ত্রী রওশনারা বেগম, ঝোড়াঘাটার বকুল হোসেনের স্ত্রী ছাবিনা, আলুকদিয়ার ফজলুর স্ত্রীসহ কয়রাডাঙ্গা, হাজরাহাটি, দলিয়ারপুর গ্রামের কয়েকজন সাংবাদিকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, হাতিকাটা মোড়ের আজিজুল ডাক্তারের ভুল চিকিৎসা ও ব্যথানাশক ইনজেকশন দেয়ার ফলে আমাদের কারো কিডনি নষ্ট, লিভার বা ফুঁসফুঁসে ক্যান্সার দেখা দিয়েছে আর যার ফলে মাত্রারিক্ত শরীরে পানি জমে শরীর ফুলে যাচ্ছে। রামনগর গ্রামের রওশনারার ছেলে মান্নান বলেন- মা বাড়ির কাউকে না জানিয়ে কিছুলোকের পরামর্শে হাতিকাটার ওই ডাক্তারের কাছে যেতো। দীর্ঘ ছয় মাস চিকিৎসা নেয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে মায়ের শরীরে অতিরিক্ত পানি জমে যায়। এ কারণে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আজিজুল হকের কাছে নিয়ে যাই।

এদিকে এলাকাবাসী জানায়, আজিজুর রহমান পল্লি চিকিৎসক হলেও তিনি ডাক্তার পরিচয় দিয়ে রোগীদের সাথে প্রতারণা করছেন। তার কাছে বয়স্ক রোগীরাই বেশি ব্যথাজনিত সমস্য নিয়ে আসেন। গড়ে প্রতিদিন ১১০-১২০ জন রোগী এখানে আসেন চিকিৎসা নিতে। এ বিষয়ে ডাক্তার আজিজুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি কোনো ডাক্তার নই। ওষুধ বেচার জন্য এলএমএফপি কোর্স করেছি। রোগ ভালো হয় বলেই আমার কাছে রোগীরা আসেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মহল নামধারী ডাক্তার আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।