বিশেষ সম্পর্কের আবেগ এবং শিক্ষকতা পেশা

 

ও আর এমন কী? সহকর্মীদের মধ্যে একটু আধটু তো হতেই পারে। হ্যাঁ পারে, যখন সহকর্মীদ্বয় পতিতা এবং তাদের নির্দিষ্ট স্থানে তখন তাদের দেহভঙ্গি যেমনই হোক আপত্তিকর বলা হাস্যকর। আর সহকর্মীদের মধ্যে দুজন যখন দু লিঙ্গের এবং তারা যখন নিদিষ্ট পোশাকধারী- তখন? উর্দী পরে প্রকাশ্যে ওভাবে চুম্বন…সমাজ সমর্থন করেনি বলেই সে দেশের পুলিশবাহিনীর দু সদস্যকে চাকরিচ্যুত হতে হয়েছে। এই তো ক’দিন আগেই দৈনিক মাথাভাঙ্গাসহ দেশ-বিদেশের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এদের চাকরি হারানোর খবর। এরই মাঝে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার টেকপাড়া পাঁচলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু লিঙ্গের দুজন সহকারী শিক্ষকের চুম্বন এলাকার সচেতন অভিভাবকদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, বিদ্যালয়েই যারা বিশেষ সম্পর্কের আবেগ আটকাতে পারেননি তাদের শিক্ষকতার মতো পেশা কি মানায়?

 

শিক্ষকেরা কেন দেশের জন্য একটি বিনিয়োগ? ‘আজকের শিশু প্রাপ্ত বয়সে কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে তা যেহেতু কারও পক্ষে আগাম বলে দেয়া সম্ভব নয়, সেহেতু বর্তমান এবং ভবিষ্যত শিক্ষকদের এমন জ্ঞান এবং দক্ষতা প্রয়োজন, যা তাঁদের ভবিষ্যতের প্রতিটি ছেলেমেয়ের শিক্ষার বহুমুখী চাহিদা মেটানোর যোগ্য করে তুলবে।’ এ যুক্তি দেখিয়ে যদি কেউ বলেন- যুগ যা হয়েছে, তাতে শিশু শিক্ষার্থীদের আগাম শিক্ষা দিতেই হয়তো বিদ্যালয়ের সিঁড়িতে চুম্বন! না, এটা মেনে নেয়া যায় না। অবশ্য চুম্বনের বিষয়টি যেহেতু অভিযোগ পর্যায়েও গড়ায়নি, শিশু শিক্ষার্থী দেখে তা প্রকাশ করে দেয়। এ নিয়ে সচেতন অভিভাবকমহল উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তাদের যুক্তি, শিক্ষক শুধু বিদ্যালয়েই নন, তিনি সমাজেরও আদর্শ। শিক্ষকরাই যদি আপত্তিকর আচরণ করেন তা হলে শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে তার প্রভাব কমবেশি পড়তে বাধ্য। সে কারণেই অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। পক্ষান্তরে ঘটনাকে চক্রান্ত বা ষড়যন্ত্রমূলক বলে যে মন্তব্য করা হয়েছে, তাও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ, সমাজ যে হীনচক্রান্ত মুক্ত তা হলফ করে বলা যাবে না। সুন্দর সমাজ গঠন এখনও স্বপ্নের জালেই বন্দি।

 

অবশ্যই দু একজন শিক্ষককে নিয়ে সকল শিক্ষককে যেমন বিচার করা যায় না, তেমনই দু একজনের কারণে জাতির ভবিষ্যত মুখ থুবড়ে পড়ুক তাও কামনা করা যায় না। শিক্ষক-শিক্ষিকার আচরণে একজন শিক্ষার্থীরও মানসপটে যদি কুপ্রভাব পড়ে তাও খাটো করে দেখা উচিত হবে না। গোপন বিষয়কে গোপন করে সমাধান হয় না। যেকোনো সমস্যার সমাধানের জন্য সবসময়ই সমস্যার মূল অনুসন্ধান তথা প্রকৃত সত্য উদঘাটনে সংশ্লিষ্ট কর্তাদের আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। রাজনৈতিক প্রভাব বা আর্থিক সুবিধায় প্রভাবিত হয়ে নানা অজুহাতে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করা মানে সমাজের গভীরে ব্যাধি ছড়িয়ে দেয়া। কেননা, অপরাধী পার পেলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা ছড়ায়। আবার অপরাধী না হয়েও কেউ অপবাদে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সমাজের নিয়ম-শৃঙ্খলা আস্থাহীনতার মধ্যে পড়ে। আমরা যেহেতু বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে, সেহেতু কোনো ঘটনাকেই খাটো করে না দেখে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক উপযুক্ত পদক্ষেপ প্রত্যাশী।