বাংলাদেশের শিক্ষার বর্তমান হালচাল শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা
স্টাফ রিপোর্টার: দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় যে অরাজকতা চলছে, তা দেশের সামগ্রিক অরাজকতারই বহিঃপ্রকাশ। হাজার হাজার জিপিএ-৫ দিয়ে হাজার হাজার মাকাল ফল তৈরি করা হচ্ছে। বোর্ডভিত্তিক পরীক্ষার পরিবর্তে বিদ্যালয়ভিত্তিক পরীক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক গোলটেবিল আলোচনায় এ মতামত দেন বক্তারা। জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশের শিক্ষার বর্তমান হালচাল শীর্ষক এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাবেক বিচারপতি ও শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আলোচনায় অংশ নেন।
আলোচনায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক উপাচার্য আবদুল মতিন পাটওয়ারী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনুকরণে বর্তমান গ্রেডিং পদ্ধতি করা হয়েছে। কিন্তু গ্রেডিঙের নম্বর বিভাজনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুকরণ করা হয়নি। এ বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখা দরকার। একই সাথে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানান তিনি। সাবেক বিচারপতি কাজী এবাদুল হক বলেন, বর্তমানে দেশে শিক্ষাব্যবস্থায় যে অরাজকতা চলছে, তা দেশের সামগ্রিক অরাজকতার বহির্প্রকাশ। শিক্ষক যদি নিবেদিতপ্রাণ না হন, তবে এসব চলতেই থাকবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুল বলেন, এ সরকারের আমলে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দেয়াসহ ভালো কিছু কাজ হয়েছে। কিন্তু হাজার হাজার জিপিএ-৫ দিয়ে হাজার হাজার মাকাল ফল তৈরি করা হচ্ছে।
গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মুহম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল বাস্তবসম্মত না কৃত্রিম- তা নিয়ে সমাজে প্রশ্ন আছে। এ সন্দেহ দূর করা উচিত। আলোচনায় অংশ নেয়া আরও কয়েকজন আলোচক বোর্ডের পরীক্ষার পরিবর্তে বিদ্যালয়ভিত্তিক পরীক্ষা চালু করার পরামর্শ দেন। বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, শিক্ষাসচিব হিসেবে নন, ব্যক্তিগতভাবে তিনিও মনে করেন ওই পরীক্ষাগুলো বিদ্যালয়ভিত্তিক হওয়া উচিত। পরীক্ষায় যদি পুলিশ লাগে, তাহলে বুঝতে হবে কিছু সমস্যা আছে।
গোলটেবিল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান। সঞ্চালনা করেন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। লিখিত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজনের প্রধান সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। অপরদিকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, আমরা বিশ্বমানের শিক্ষা চাই। শিক্ষার মান আগে ছিলোই না, এখন মানসম্পন্ন শিক্ষা হচ্ছে। তাই মান নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। শিক্ষার এ মানকে আরও উন্নত করে বিশ্বমানের করে তুলতে চাই। গতকাল মঙ্গলবার বেলা দুটোর দিকে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের ছাত্রাবাস উদ্বোধন করে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অনেকে মনে করছেন আমাদের ছেলেমেয়েরা ভালো করছে না। আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি, আমাদের ছেলেমেয়েরা আগের চেয়ে অনেক গুণ বেশি এগিয়েছে। শিক্ষকেরাও এগিয়েছেন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা পাঁচ বছরের তুলনায় এখন দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হয়েছে। শিক্ষায় আজকের যা মান, অতীতে তা ছিলো না।
আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে যা-ই বলুক, আমরা যে শিক্ষা দিচ্ছি, সেটা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক উন্নত। বিশ্বমানে পৌঁছাতে হলে আধুনিক ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। সব কলেজে ডিজিটাল শ্রেণিকক্ষ চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশে এখন ২০ হাজার ৫০০ ডিজিটাল ক্লাসরুম রয়েছে। আরও সাড়ে তিন হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ক্লাস রুম করা হবে।