বিস্কুট বাদ : দুপুরে রান্না খাবার পাবে শিশু শিক্ষার্থীরা

 

স্টাফ রিপোর্টার: প্রতিবেশী দেশ ভারতের মতোই সকল সরকারি প্রাথিম বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল তথা দুপুরে রান্না করা খাবার পরিবেশনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। দেশের ৬৩ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত এক কোটি ৯০ লাখ শিশুকে স্কুল চলাকালে দুপুরের টিফিন হিসেবে বিস্কুটের বদলে রান্না করা খাবার দেয়ার নেয়া হচ্ছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে ন্যাশনাল স্কুল ফিডিং পলিসি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এর ভিত্তিতে একটি আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। স্কুলের শিশুদের মধ্যে খাবার বিতরণে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে চালু করা কৌশলগুলো সামনে রেখেই সরকার এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা ভাবছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে, সব প্রাথমিক শিক্ষার্থীকে দুপুরে রান্না করা খাবার দেয়া হলে দেশে নানামুখী উন্নয়ন সম্ভব হবে। শিশুর মেধা বিকাশ ও স্বাস্থ্য রক্ষা, শিক্ষা ও কৃষিতে উন্নয়ন হবে। এর ফল হিসেবে জাতিকে মেধাবী প্রজন্ম উপহার দেয়া যাবে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, খাবার তৈরি, অবকাঠামো, জনবল ছাড়াই এক কোটি ৯০ লাখ শিশুকে দুপুরে রান্না করা খাবার খাওয়াতে বছরে খরচ হবে নয় হাজার কোটি টাকা। কোন কোন খাত থেকে এই অর্থের সংস্থান করা যায় তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সূত্র মতে, এই অর্থ সংগ্রহে মোবাইল ফোন সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান ও  সিগারেট কোম্পানিগুলোর সহযোগিতা নেয়া হবে। মোবাইল কল ও সিগারেট প্রতি সারচার্জ আরোপ করা হবে।

মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, স্কুলে রান্না করা খাবার দেয়ার জন্য বড় ধরনের অবকাঠামো তৈরি করা হবে। প্রয়োজন হবে বিপুল সংখ্যক জনবলের। আইন ছাড়া এসব কাজ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। এ কারণেই আইন তৈরি করা হচ্ছে। বিশাল এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় সরকারকে কাজে লাগানোর প্রস্তাব দেয়া হবে। এর বাইরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রান্না করা খাবারের জন্য প্রচুর পরিমাণে কৃষি উপকরণ-সবজি প্রয়োজন হবে। যা স্থানীয় জনগণ আবাদ করবে। ফলে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে স্থানীয় কৃষি ব্যবস্থায়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান ড. ইমতিয়াজ মাহমুদ বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত প্রতিদিন ১৭ কোটি শিশুকে স্কুলে রান্না করা খাবার দেয়। তারাও মোবাইলকল ও সিগারেটের ওপর সারচার্জ আরোপ করে এ ব্যয়ের বড় একটি অংশ সংগ্রহ করে।

ব্রাজিলের স্কুল ফিডিঙের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এই কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষির নানামুখি উন্নয়ন হয়েছে। স্কুলে রান্নার প্রয়োজনীয় সবজিসহ কৃষি উপকরণ সরবরাহের জন্য এলাকাগুলোতে গড়ে উঠেছে একাধিক খামার। এর মাধ্যমে ব্রাজিলের কৃষি ব্যবস্থা পাল্টে গেছে। এটা আমাদের দেশেও হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের গ্রামের শিশুরা এখনও অনেকে না খেয়ে স্কুলে আসে। যে কারণে তাদের শিক্ষাগ্রহণের শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা কমে যায়। তাদের লেখাপড়ায় মন বসে না, তারা পুষ্টির অভাবে ভোগে। অনেকে স্কুলেই আসতে চায় না। দুপুরে খাবার দেয়া হলে এসব সমস্যার সমাধান হবে।

দারিদ্রপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচির প্রধান বাবলু কুমার সাহার দেয়া তথ্যমতে, যেসব স্কুলে বর্তমানে ফিডিং কার্যক্রম চালু আছে সেসব স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ৫ থেকে ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, ঝরেপড়ার হার কমেছে, ভর্তি শতভাগ নিশ্চিত হয়েছে। শিশুদের মেধার বিকাশও এসব স্কুলে তুলনামূলকভাবে বেশি হয়েছে।

প্রসঙ্গত, দেশে ২০০১ সালে প্রথম স্কুলের খাবারের হিসাবে বিস্কুট দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা। পরে সরকার বিশ্ব খাদ্য সংস্থার সাথে এ কার্যক্রমে যুক্ত হয়। বর্তমানে সরকার ও বিশ্ব খাদ্য সংস্থার যৌথ অর্থায়নে এক হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৭ লাখ শিশুকে টিফিন হিসাবে বিস্কুট দেয়া হয়। এর বাইরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে আরো সাড়ে চার লাখ শিশুকে বিস্কুট দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে এক কোটি ৯০ লাখ শিশুর মধ্যে দুপুরে খাবার হিসাবে বিস্কুট পাচ্ছে ৩১ লাখ ৫০ হাজার শিশু।

এর বাইরে বরগুনা জেলার বামনা উপজেলায় গত বছরের ২ জুলাই থেকে ৪০টি স্কুলে রান্না করা খাবার দেয়া হচ্ছে।  চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে আরো ২৩ টি স্কুলে রান্না করা খাবার হিসাবে খিচুড়ি দেয়া হচ্ছে। এছাড়া জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার দুটি ইউনিয়নে সব স্কুলে পাইলট ভিত্তিতে রান্না করা খাবার দেয়া হচ্ছে। আগামী জানুয়ারি থেকে ৯৩ উপজেলার ৩৪ লাখ শিশু দুপুরে বিস্কুট পাবে। পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় সব শিশুকে এ প্রকল্পের আওতায় আনা যাচ্ছে না।

দারিদ্রপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচির প্রধান বাবলু কুমার সাহা বলেন, স্কুলে দুপুরে খাবার দেয়ার ফলে শিক্ষায় নানামুখী উন্নয়ন হচ্ছে। স্কুলে উপস্থিতির হার বাড়ছে। ঝরেপড়া অনেক কমেছে। ভর্তি হারও শতভাগ হয়েছে।

সূত্রমতে, দুপুরে খাবার নাকি উপবৃত্তি-কোনটির পক্ষে- এ রকম প্রশ্ন করে সম্প্রতি সরকার প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্যে একটি জরিপ চালিয়েছিল। দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেয়া ৯৫ ভাগ অভিভাবক তাদের সন্তানকে যেন স্কুলে দুপুরে খাবার দেয়া হয়, তার পক্ষে মত দিয়েছেন। বাকি ৫ ভাগ অভিভাবক উপবৃত্তির পক্ষে মত দিয়েছেন।