নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীদের অভিনন্দন

নোবেল প্রাইজ বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত। ২০১৪ সালে নোবেল বিজয়ীদের নাম ইতোমধ্যে ঘোষিত হয়েছে। এবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার এসেছে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এশিয়ায়। পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই নারীশিক্ষা আন্দোলনে এবং ভারতের কৈলাস সত্যার্থী শিশুশ্রম বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় যৌথভাবে তাদের এ সম্মান প্রদান করা হয়েছে। শুক্রবার নরওয়ের রাজধানী অসলোতে নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের পুরস্কার প্রাপ্তির কথা জানিয়েছেন। সবচেয়ে কম বয়সে শান্তি পুরস্কার পেলেন ১৭ বছর বয়সী মালালা। তিনি তালেবান হামলায় বেঁচে যাওয়ার পর নারী শিক্ষা উন্নয়ন ও শিশুদের অধিকার আদায়ে কাজ করছেন। আর ৬০ বছর বয়সী কৈলাশ গত দু দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতে শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছেন, গড়ে তুলেছেন বচপন বাঁচাও আন্দোলন। গুরুত্বপূর্ণ এ সম্মান অর্জন করায় মালালা ও কৈলাসসহ অন্যান্য নোবেল বিজয়ীদের আমরা অভিনন্দন জানাই।

 

মালালার আগে আরো দুজন পাকিস্তানি নাগরিক নোবেল পেয়েছেন। সেই হিসেবে পাকিস্তানের তৃতীয় নোবেল বিজয়ী তিনি। অন্যদিকে নারী হিসেবে নোবেল বিজয়ের সারিতে মালালার অবস্থান ৪৭তম। জঙ্গিবাদের কারণে পাকিস্তানের নারী শিক্ষা যখন প্রায় সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত, মালালা তখনই নারী শিক্ষার পক্ষে সোচ্চার হয়েছেন। যার জন্য তিনি উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলার শিকার হন। তার মাথায় গুলি করে হত্যার চেষ্টা চালায় তালেবান জঙ্গিরা। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াতে হয় তাকে। এ ঘটনায় তিনি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের নজরে আসেন। ওই ঘটনা তাকে বিশ্বময় পরিচিত করে তোলে। তার আরোগ্য কামনায় বিশ্বের বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সব ধর্মের উপাসনালয়ে প্রার্থনা হয়েছে। সুস্থ হয়ে ওঠার পর তিনি নারীশিক্ষা নিয়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনে এ বিষয়ে বক্তব্যও রেখেছেন তিনি। ২০১৩ সালে মার্কিন সাময়িকী টাইম মালালাকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি বলে বর্ণনা করে। নোবেল প্রাপ্তির আগে ২০১৩ সালে মালালা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার পুরস্কার পান। গত বছর নোবেল তালিকায় তার মনোনয়নও হয়েছিলো।

 

শান্তিতে আরেক নোবেল বিজয়ী ভারতের শিশু অধিকার কর্মী কৈলাশ সত্যার্থী পেশায় ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘ তিন দশক ধরে শিশু অধিকার রক্ষায় বাচপান বাঁচাও আন্দোলন (শৈশব রক্ষা) করে চলেছেন। ভারতে শিশুশ্রম বন্ধ ও পাচার প্রতিরোধে তার সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সংগঠনের মাধ্যমে ৮০ হাজার শিশু শ্রমিককে পুনর্বাসিত করেছেন তিনি। কৈলাসের আগে আরো ৭ জন ভারতীয় এ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। নোবেল কমিটির মূল্যায়নে শিশুশিক্ষা ও শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এ দু মানবাধিকার কর্মীর উদ্যোগের প্রশংসা করা হয়েছে।

 

তথ্য মতে, সম্মানজনক নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য রেকর্ডসংখ্যক নাম উঠে আসে এবার। তালিকায় শীর্ষে ছিলেন মালালা ইউসুফজাই আর অন্যান্যদের পেছনে রেখে এগিয়ে এসেছেন কৈলাস। স্বীকার করতে হবে, ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ ও উগ্র জঙ্গি সংগঠন তালেবানদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মালালা যে শিক্ষার বীজ বুনেছেন তা বিশ্বে এক অনন্য দৃষ্টান্ত বৈ নয়। অন্যদিকে কৈলাস শিশুশ্রম ও শিশুপাচার রোধে যে ভূমিকা রেখেছেন তাও গুরুত্বপূর্ণ একটি সামাজিক কাজ। এ ধরনের কর্মকাণ্ড মানবিক দায়বদ্ধতারও একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যে বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে তারা যাদের নিয়ে কাজ করেছেন সেই সব শিশু ও তরুণরা নিজেদের উন্নয়নে লড়াই করার মনোবল অর্জন করেছেন। এটি শান্তির পক্ষে একটি সামাজিক পরিবর্তনও বটে। নোবেল সম্মান প্রাপ্তি তাদের জন্য তাই যথার্থ।

 

নাম ঘোষণার পর মালালাকে নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-বিতর্ক হয়েছে, আবার কৈলাসের নাম কেউ শোনেনি এমনও মন্তব্য উঠে এসেছে। কিন্তু যোগ্যরাই যে সম্মানিত হয়েছেন- এ বিষয়ে কোনো বিতর্ক কাম্য হতে পারে না। তথ্য মতে, বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর মোট জনশক্তির ৬০ শতাংশের বয়স ২৫ বছরের কম। বিশ্বের শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের স্বার্থেই এ জনগোষ্ঠীকে সম্মান দেখানো দরকার। মালালা এবং কৈলাস যে অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতা উজিয়ে এবং উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে তা কি প্রশংসনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ নয়? গুরুত্বপূর্ণ বলেই যথাযথ স্বীকৃতি তারা পেয়েছেন। তাদের এ অর্জন এশিয়ার বিভিন্ন দরিদ্র দেশের শিক্ষা বিস্তার ও শ্রম অধিকার রক্ষায় কর্মরতদের আরো উৎসাহ জোগাবে- এ প্রত্যাশা আমাদের।

Leave a comment